ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: মার্কিন বিজ্ঞানী ও ডিএনএ’র গঠন উন্মোচনকারী এবং নোবেলজয়ী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৯৭ বছর।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
তিনি বৃটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে ১৯৫৩ সালে ডিএনএ’র দ্বিুহেলিক্স গঠন আবিষ্কার করে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূচনা করেন। এই আবিষ্কার থেকেই মলিকিউলার জীববিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির পথ খুলে যায়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। জীবনের পরবর্তী সময়ে বর্ণ ও লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে তার বিতর্কিত মন্তব্য তার সুনামকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি এমন ধারণার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন যে, কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ মানুষের আইকিউ পরীক্ষার ফল জেনেটিক কারণে ভিন্ন হতে পারে।
যা বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ও তীব্রভাবে সমালোচিত হয়। ওয়াটসনের মৃত্যুর বিষয়টি বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি।
তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা ও প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৬২ সালে জেমস ওয়াটসন ফ্রান্সিস ক্রিক ও মরিস উইলকিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তারা ডিএনএ’র দ্বিুহেলিক্স গঠন উন্মোচনের জন্য এই স্বীকৃতি পান।
তাদের বিখ্যাত উক্তি বলেছেন, ‘আমরা জীবনের রহস্য আবিষ্কার করেছি।’ ডিএনএ প্রথম ১৮৬৯ সালে আবিষ্কৃত হলেও, তার সুনির্দিষ্ট গঠন জানা যায়নি দীর্ঘদিন। ১৯৪৩ সালে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, কোষের জেনেটিক উপাদান হিসেবে ডিএনএ’ই কাজ করে। কিংস কলেজের গবেষক রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের তোলা এক্সুরে ডিফ্র্যাকশন চিত্র ব্যবহার করে (যার বিষয়ে ফ্র্যাঙ্কলিন নিজে অবগত ছিলেন না) ক্রিক ও ওয়াটসন ডিএনএ’র ভৌত মডেল তৈরি করেন। মরিস উইলকিন্সও ফ্র্যাঙ্কলিনের সঙ্গে কাজ করছিলেন ডিএনএ’র গঠন নির্ধারণে।
২০১৯ সালে তিনি আবারও বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করলে ল্যাবরেটরি তার সব সম্মানসূচক পদবি- চ্যান্সেলর এমেরিটাস, অলিভার আর. গ্রেস অধ্যাপক এমেরিটাস ও সম্মানিত ট্রাস্টি- বাতিল করে।
জেমস ডিউই ওয়াটসন ১৯২৮ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মাতা ছিলেন ইংরেজ, স্কটিশ ও আইরিশ বংশোদ্ভূত। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি এক্স-রে ডিফ্র্যাকশন পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন- যার মাধ্যমে পরমাণুর অভ্যন্তরীণ গঠন বোঝা যায়। ডিএনএ নিয়ে গবেষণা করতে তিনি বৃটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরিতে যান। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ফ্রান্সিস ক্রিকের। তারা একসঙ্গে ডিএনএ’র সম্ভাব্য গঠন নিয়ে মডেল তৈরি শুরু করেন।
যা শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় আবিষ্কারে রূপ নেয়। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পর তিনি স্ত্রী এলিজাবেথকে নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হন। তাদের দুই পুত্রের একজন মানসিক রোগ স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।
১৯৬৮ সালে তিনি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির দায়িত্ব নেন এবং এটিকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। ২০১৪ সালে ওয়াটসন তার নোবেল পদকটি নিলামে বিক্রি করেন ৪.৮ মিলিয়ন ডলারে।
তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক সমাজে নিজেকে বর্জিত মনে করেই তিনি পদকটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এক রুশ ধনকুবের পদকটি কিনে পরে সেটি ওয়াটসনের কাছেই ফিরিয়ে দেয়া হয়।

