ডায়ালসিলেট ডেস্ক::বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমেছে। জুনে চীনের অর্থনীতিতে আঘাত লাগায় গতকাল তেলের দাম শতকরা ৫ ভাগ কমে যায়। ডাটা বলছে, ৬ মাসের মধ্যে এই দাম সর্বনিম্ন্ন। বিজনেস ইনসাইডার, বার্তা সংস্থা রয়টার্স সহ সংবাদ মাধ্যম এ খবর দিয়ে বলেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানিকারক দেশ হলো চীন। সেখানে তেলের চাহিদা কমে গেছে। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরামকো তেল উত্তোলন বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত। এর বাইরেও খবর আছে। তা হলো, ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। এর ফলে ইরানও তেল উত্তোলন বৃদ্ধি করে তা বিনা বাধায় বিক্রি করতে পারবে। অর্থাৎ বাজারে তেলের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার একটি ইঙ্গিত মিলছে। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার তেলের দাম কমে যায়। গতকাল ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের আন্তর্জাতিক ও যুক্তরাষ্ট্রে বেঞ্চমার্ক তেলের দাম শতকরা ৫ ভাগ কমে গেছে। ব্রেনেটর দাম পতন হয়েছে শতকরা ৪.৮৮ ভাগ। এই পতনে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্টের দাম দাঁড়িয়েছে ৯৩.৩৬ ডলার। ফেব্রুয়ারির পর এই দাম সর্বনিম্ন বলে জানানো হচ্ছে খবরে। অন্যদিকে ডব্লিউটিআই’র দরপতন হয়েছে শতকরা ৪.৭৮ ভাগ। ফলে এই তেল প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয় ৮৭.৬২ ডলার দামে। জানুয়ারি থেকে এই দাম সর্বনিম্ন। ওদিকে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সোমবার বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দরপতন হয়েছে শতকরা ১.২ ভাগ। ফলে এই তেল প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৯৭.০১ ডলারে। শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছিল ১.৫ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম ৯১.০৩ ডলার। জুনে চীনের কারখানাগুলোতে আউটপুট ছিল শতকরা ৩.৯ ভাগ। জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩.৮ ভাগ। বিশ্লেষকরা যা প্রত্যাশা করেছিলেন, এই হার তার চেয়ে অনেক কম। এ ছাড়া খুচরা বিক্রি বৃদ্ধি কমে গেছে। বেকারত্ব রেকর্ডে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় সোমবার চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুদের হার কমিয়েছে। ব্লুমবার্গের রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীনে তেলের বাহিদা জুলাইতে কমেছে শতকরা ৯.৭ ভাগ। স্যাক্সো ব্যাংকের কমোডিটিজ বিষয়ক কৌশলী ওলে হ্যানসেন বলেন, নতুন করে কোভিড বিষয়ে লকডাউন দেয়ার পর জুলাইয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ছিল দুর্বল। গত মাসে প্রতি বছরের তুলনায় সেখানে তেলের চাহিদা শতকরা প্রায় ১০ ভাগ কমে গেছে বলে ব্লুমবার্গের রিপোর্টে দেখা গেছে। সেখানে দৈনিক তেল উত্তোলন কমে গেছে এক কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল। ফলে ক্রুড তেলের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য নিম্নমুখী হয়। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রস্তাবে অগ্রগতি হয়েছে। এই চুক্তি সম্পন্ন হলে ইরান তেল বিক্রি করতে পারবে। বাজারে সরবরাহ বাড়বে। ফলে মূল্য আরও কমে যাবে। তাই ইরানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ইরান বলেছে, গত রাতের মধ্যে ইউরোপের এই প্রস্তাবে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে। উল্লেখ্য, এ বছর তেলের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্টের দাম উঠে যায় ১৪০ ডলার পর্যন্ত। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাসোলিনের দাম জুনে প্রতি গ্যালন ৫ ডলারে উঠে যায়। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুডিস অ্যানালিটিকস-এর অর্থনীতিবিদ হেরোন লিন বলেন, চীন সরকারের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, জ্বালানি তেলের দামের রেকর্ড হওয়ার কারণে চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব এবং ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে দেশটিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে। তিনি বলেন, এ বছরের বাকিটা সময় তেলের চাহিদা কম থাকবে। কোভিড বিধি-নিষেধে আগাম সতর্কতার কারণে সঞ্চয়ের সঙ্গে তেলের চাহিদাও কমেছে। পাশাপাশি তেলের উত্তোলন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরামকো। এটি সেখানকার সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর প্রধান নির্বাহী আমিন নাসের রোববার বলেছেন, সৌদি সরকার অনুরোধ করলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ উত্তোলন সক্ষমতা ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল বাড়াতে প্রস্তুত তারা। আমরা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করার সক্ষমতা রাখি। যদি সরকার বা আমাদের জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে তেলের উত্তোলন সর্বোচ্চ পর্যায়ে েনেয়ার নির্দেশনা দেয়, তাহলে আমরা দৈনিক সর্বোচ্চ পরিমাণ তেল উত্তোলনের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
ডায়ালসিলেট এম/

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *