দিরাই প্রতিনিধি :: শিশু তুহিন হত্যায় পরিবারের ২/৩ সদস্য সম্পৃক্ত থাকতে পারে জানিয়েছে পুলিশ । সোমবার সন্ধ্যায় দিরাই থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

রোববার রাতে দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের আব্দুল বাসিতের ছেলে তুহিন মিয়াকে (৫) হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে অজ্ঞাত খুনিরা।

সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান বলেন, আমরা তুহিনের পরিবারের সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছিলাম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ২/৩ জনের সম্পৃক্ততা আমরা পেয়েছি।

প্রতিহিংসাবশত হতে পারে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হতে পারে, আবার মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে; তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, নিহতের বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন মামলার আসামি। এলাকায় তাদের একাধিক প্রতিপক্ষ রয়েছে।

তিনি বলেন, “এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, সবাইকে আটক দেখানো হচ্ছে না। পুরোপুরি জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।”

রবিবার সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে রাতের আধারে ঘর থেকে তুলে নিয়ে তুহিন নামক ৫ বছরের শিশুকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতকরা তার লাশটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে লিঙ্গ কেটে নিয়ে যায় । এছাড়া শিশুটির দুটি কান কেটে একটি রাস্তায় ফেলে গেছে।

খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সিআইড ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের পিতা আব্দুল বাছির, ও তার তিন চাচা মাওলানা আব্দুল মোছাব্বির, জমসেদ মিয়া, নাছির, জাকিরুল , চাচী খয়রুন বেগম, এবং চাচাতো বোন তানিয়াকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

নিহত তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির জানান, পনের দিন পুর্বে তার এক কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে। রোববার দিবাগত রাতে খাবার খেয়ে নিহত তুহিন ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে ঘরের সামনের কক্ষে ও নবজাতককে নিয়ে মা পেছনের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টার দিকে ঘুম ভাঙ্গলে ঘরের বাহিরে গিয়ে পশ্রাব করে এসে নিহত তুহিনের উপর কাথা দিয়ে ডেকে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন তুহিনের বাবা। রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার ভাতিজির হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলে দেখতে পান সামনের দরজা খোলা, দরজা খোলা কেন জানতে চেয়ে পাশের রোমে চাচা (নিহত তুহিনের বাবা) কে ডাকেন।

এসময় পরিবারের লোকজন উঠে দেখতে পান তুহিন ঘরে নেই। পরে বাড়ী থেকে সামান্য দূরে নতুন মসজিদের পাশে ঝুপের মধ্যে গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্তায় দেখা যায় তুহিনের লাশ। তিনি বলেন, গ্রামে একসময় দ্বন্দ্ব ছিলো, এখন কারো সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। কাউকে সন্দেহ করেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি যা দেখিনি তা কিভাবে বলবো বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সদ্য সন্তান প্রসবকরা মাকে জানানো হয়েছে ছেলের মৃত্যুর কথা, নাড়ী ছেড়াধনের এমন মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি, কোন কথা বলতে পারছেননা, বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কেজাউড়া পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তা রক্তে লাল হয়ে আছে। এর পাশেই ঝুপের মধ্যে একটি গাছে তুহিনের লাশ ঝুলে আছে। জমাটবাঁধা রক্তের স্তুপের পাশে তুহিনের একটি কাটা কান পড়ে আছে। লিঙ্গ ও একটি কান কেটে নিয়ে গেছে ঘাতকরা। তার পেটে বিদ্ধ দুটি ছুরা লাগানো রয়েছে। ছুরা দুটিতে গ্রামের সুলেমান ও সালাতুলের নাম রয়েছে, যাদের সাথে নিহত তুহিনের পরিবারের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। ধারণা করা হচ্ছে ঘাতকরা ঘুমন্ত অবস্থায় তুহিনকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে রাস্তায় জবাই করে হত্যা করে। এরপর কান ও লিঙ্গ কেটে লাশটি গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। এলাকাবাসী জানান, গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন সঙ্গে নিহত তুহিনের পরিবারের বিরোধ চলে আসছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *