প্রবাসে দাফন হচ্ছে সিলেটিদের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ১:২৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০১৯

প্রবাসে দাফন হচ্ছে সিলেটিদের স্বপ্ন

ডায়াল সিলেট ডেস্ক:বুকপকেটে থাকে স্বপ্ন, চোখজোড়ায় আশা। সম্ভাবনার হাতছানিতে নিজভূম ছেড়ে পরভূমে পাড়ি জমায় মানুষ। কিন্তু কতোজনের স্বপ্নের বৃক্ষ ডালপালা মেলে পরিপূর্ণতা লাভ করে? অনেকের স্বপ্নই অঙ্কুরেই নিঃশেষ হয়ে যায়।

সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছেন সিলেটিরা। কেউ কেউ বৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছেন, কেউবা অবৈধ পথে পাড়ি দিচ্ছেন। স্বপ্নের নাগাল পেতে যারা অবৈধ পথে পা বাড়ান, তাদের অনেকেই সেই স্বপ্ন ছুঁতে পারার আগেই পাড়ি দিচ্ছেন পরপারে। আবার বৈধভাবে যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেও সেই পরভূমে পরিবার-পরিজনহীন নিঃসঙ্গ জীবনে ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক মাসে বিভিন্নভাবে বিশে^র বিভিন্ন দেশে মারা গেছেন সিলেটের অন্তত ৩০ জন ব্যক্তি।

চলতি বছরের ৯ মে লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলের জুয়ারা শহর থেকে অন্তত ৭৫ জন অভিবাসী নিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে সাগর পথে রওয়ানা দেয় একটি বড় নৌকা। অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৬০ জন ছিলেন বাংলাদেশি। তিউনিসিয়ার উপকূলে ওই নৌকা থেকে অভিবাসীদের ছোট একটি নৌকায় তোলার সময় সেটি ডুবে যায়। এতে নিহত হন অর্ধশতাধিক অভিবাসী। নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৭ জন; তন্মধ্যে অন্তত ২০ জন ছিলেন সিলেট অঞ্চলের।

গেল এপ্রিল মাসের ৩ তারিখ দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন সিলেটের যুবক দুলাল আহমদ। তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার টুকেরবাজারে।

একই মাসের ২৩ তারিখ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে খুন সিলেটের গোলাপগঞ্জের যুবক জয়নাল আবেদীন। ওই দিন সকালে একটি মুদির দোকান থেকে বের হওয়ামাত্র তার ওপর হামলা হয়। কুপিয়ে খুন করা হয় তাকে। জয়নাল গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের জাঙ্গালহাটা গ্রামের মৃত মতছির আলীর ছেলে।

চলতি বছরের ২৩ জুন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রাখালগঞ্জের প্রয়াত শামছুল হকের ছেলে হাফিজুর রহমান সুমন দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। দেশটির কেপটাউনের অদূরে সামার স্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটে। কয়েক দিন পরই দেশে ফেরার কথা ছিল সুমনের। তার বিয়ের জন্য দেশে কনেও দেখা হয়েছিল।

সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের পাগইল গ্রামের মখলিছুর রহমানের ছেলে শাহীন আহমদ বছর দুয়েক আগে ইরাকে গিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল ইতালি যাওয়া। ইরাক থেকে দালালের মাধ্যমে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে যান শাহীন। এরপর গত ২৩ আগস্ট ইতালির উদ্দেশ্যে একটি ভ্যানে চড়ে আরো কয়েকজনের সঙ্গে রওয়ানা দেন তিনি। কিন্তু পথিমধ্যে মেসিডোনিয়ার দেবার নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান শাহীন।

রাশিয়া বিশ্বকাপ চলাকালে ২০১৮ সালে দেশটিতে পাড়ি জমান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের ফরিদ উদ্দিন। পরে দালালের মাধ্যমে ইউক্রেনে ঢুকেন তিনি। এরপর স্লোভাকিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জঙ্গলে মারা যান ফরিদ। গত ২৮ আগস্ট ইতালির পথে দালালসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে রওয়ানা দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না দেশে থাকা পরিবার। পরে ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার জঙ্গল থেকে ফরিদের মরদেহ উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ। গত ৩ অক্টোবর তার মরদেহ দেশে আনা হয়।

গেল ১৭ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ব্রুনাইয়ে নির্মাণাধীন একটি তিন তলা ভবন থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন সিলেটের কনু মিয়া। পরদিন হাসপাতালে তিনি মারা যান। কনু মিয়া বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ইউনিয়নের দ্বীপবন্দ গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার ছেলে।

একই মাসের ২৪ তারিখ আরব আমিরাতের আজমান শহরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেটের আব্দুল জব্বার শাহান। তিনি বালাগঞ্জের দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের নশিওরপুর গ্রামের রশিদ উল্লাহর ছেলে।

0Shares