সিলেটে নজরদারিতে ৮৪ ‘মাল্টি মিলিয়নার’!

প্রকাশিত: ৩:১৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০১৯

সিলেটে নজরদারিতে ৮৪ ‘মাল্টি মিলিয়নার’!

 

সোহেল আহমদ :: ক্যাসিনো কান্ডের পর দেশব্যাপী আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। ঢাকার বাইরে অভিযানের ব্যপ্তি ছড়িয়েছে নগর-শহরে। এরই ধারাবাহিকতায় যেকোনো মূহূর্তে অভিযান শুরু হতে পারে সিলেটেও! এমন ধারণা সর্ব মহলে।

এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের শীর্ষ কর্তারা মুখ না খোললেও বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। যে কারণে ক্ষমতাসীন দল ও দলের বাইরে হঠাৎ অনিয়ম করে
অনেকেই ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বৃত্তবান বনে যাওয়াতের দূশ্চন্তিা দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। যারা দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দুর্নীতি-অনিয়ম করে অর্থ উপার্জন করেছেন।তারা এখন নেতাকর্মীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন।

 

এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, উপর মহলের নির্দেশে অবৈধ টাকার মালিক বনে যাওয়া দুর্বৃত্তদের পৃথক তালিকা করা হয়েছে। যারা অনিয়িম, দুর্ণীতি ও লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে মাল্টি মিলিয়নার হয়েছেন সে তালিকায় উঠে এসেছে মোট ৮৪ জনের নাম। যাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সারির নেতা, জনপ্রতিনিধি। এ তালিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের কয়েক জনেরও নাম যুক্ত রয়েছে এবং তারা গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতেও রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়।

 

এ অভিযান শুধু ক্যাসিনো বা ক্লাব কেন্দ্রিক জুয়ার বোর্ডে সীমাবদ্ধ থাকবে না। থাকছে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দলীয়ভাবে আ‘লীগের ভেতরে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। কারা আছেন ওই গোপন তালিকায়?

একাধিক সূত্র মতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নেতাকর্মী বাইরে সরকারী চাকুরীজীবীদের মধ্যেও আছেন কয়েকজন। যারা সিলেটে চলমান বিভিন্ন ক্লাব হাউসের প্রাণ পুরুষ এবং তাদের আধিপত্য সেসব ক্লাবে। সরকারের গোয়েন্দা তথ্যেও তাদের নাম উঠে এসেছে।

 

ক্ষমতাসীন অনেক নেতার বিরুদ্ধে প্রশাসনের মাধ্যমে দলের কাছে জমা হয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অভিযুক্তদের কেউ ক্রীড়াঙ্গণে ভর করে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। পাতি নেতা থেকে ঠিকাদারী ব্যবসার মাধ্যমে অনিয়ম করে কেউ রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি। হয়েছেন হাওররক্ষা বাধের বড়মাপের দুর্নীতি মামলার আসামি। কেউ কেউ দলের পদ-পদবী ব্যবহার করে কেবল শেল্টার দিয়েই হয়েছেন কোটিপতি। কারো কারো বিরুদ্ধে আছে বাসা-বাড়ি, জমি-জমা জবর দখলেরও অভিযোগ।

 

এ অভিযোগের মধ্যে বাদ পড়েননি অনেক জনপ্রতিনিধিদের নামও। কেবল শুধুমাত্র নগর নয়, উপজেলা পর্যায়ে পাথর রাজ্যের খাস জমিতে সম্পত্তি চষে খাওয়া নেতাদের উপর নিজেদের হক জাহির করেছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকার ভাগ। আর তৃণমূলের সেসব রথিরা ক্ষমতার দাপটে মহারথি তথা মাল্টি মিলিয়নার হয়েছেন।

 

সিলেটের তিন উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের জাফলং, কানাইঘাটের লোভাছড়ার দকাঁচা টাকার‘ ব্যবসার আধিপত্য ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের দিয়ে খুনাখুনিও করিয়েছেন সেসব নেতারা। খুনের মামলার আসামি হয়েও তারা মুক্ত বাতাসে অবমুক্ত। পেছনে মামলা ঝুললেও সেসব নেতাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জয়রত কেবল টাকা ও ক্ষমতার খেলায়।
অভিযোগ রয়েছে, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সারকারখানা নির্মাণলগ্নে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। সেখানে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ও মালামাল ব্যবহার করায় কিছুদিন পরপর সারকারখানা বন্ধ হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যেসব অনিয়ম প্রশাসনের চোখ এড়ায়নি।

 

এদিকে কোটিপতি বনে যাওয়া যেসব ঠিকাদারেরা এখন সরকারের শ্রেষ্ট আয়করদাতাও বটে! এসব অনিয়মে সাবেক সিবিএ নেতাদেরও নাম উঠে এসেছে। তাছাড়া নতুন সারখানা নির্মাণ লগ্নে পুরাতন সারকারখানার কমপক্ষে ৭ হাজার কোটি টাকার মালামাল পাঁচারের অভিযোগ রয়েছে সাবেক সিবিএ নেতাসহ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। সূত্র

 

সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে সিলেটের ভূমি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। ক্ষমতাসীন নেতাদের সঙ্গে যোগসাজসে অনেকে নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি সিলেট থেকে টার্মিনেট হওয়া এক ভূমি কর্মকর্তা মন্ত্রী-এমপিদের ৫ জনের সুপারিশে স্বপদে বহাল রয়েছেন।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, সিলেটে এখনো ক্যাসিনোর সন্ধান না মিললেও এলিট শ্রেণীর দুটি ক্লাব আছে। আছে ক্রীড়াঙ্গণ কেন্দ্রীক বেশ কয়েকটি ক্লাব। রয়েছে প্রচুর জুয়ার বোর্ড। সেসব বোর্ডে জুয়াড়িদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ যাবত র‌্যাব পুলিশের অভিযানে নগরের ৬ থানা এলাকার অন্তত; সাড়ে ৬ শতাধিক জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জানায় এসএমপি সূত্র।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ডায়ালসিলেটকে বলেন, সিলেটে ক্যাসিনো ও ক্লাব নেই। আছে কেবল জুয়ার আসর। সেসব আসর ভাঙতে অভিযান অব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি অনিয়মকারী নেতাদের প্রতিও পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরদারি রয়েছে।

তবে অবৈধভাবে কামানো কোটি কোটি টাকার মালিকরা কি পাড় পেয়ে যাবেন তা এখন সময়ের ব্যাপার।

0Shares