প্রকাশিত: ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২০
স্পোটর্স ডেস্ক:কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে আরেকটি বছর। নতুন বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। বিদায় জানানোর আগে ফুটবল ভক্তদের মনের ক্যানভাসে বেশ কিছু স্মৃতি জমা রেখে গেছে ২০১৯। ব্রাজিলের নবম কোপা আমেরিকা ট্রফি জয়, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে লিভারপুলের ষষ্ঠ সাফল্য আর ফিফা ও ব্যালন ডি অ’র বর্ষসেরার মঞ্চে লিওনেল মেসির ফেরা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আলোচনায় ছিল মেসির তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা, ১৩ বছরের মধ্যে প্রথম ডিফেন্ডার হিসেবে ভার্জিল ভ্যান ডাইকের কোনো বর্ষসেরা খেতাব জয় (উয়েফা বর্ষসেরা) আর ইতালি-নেদারল্যান্ডসের বড় মঞ্চে ফেরার গল্প। ২০১৯’র আলোচিত কিছু ঘটনা দেখে নেয়া যাক। ব্রাজিলের ‘কোপা আমেরিকা’ শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের পর এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালেও যেতে পারছিল না ব্রাজিল। ৪৬তম আসরের আয়োজন হিসেবে আক্ষেপ ঘুচানোর সুযোগ। কিন্তু একেবারে টুর্নামেন্ট শুরুর আগ মুহূর্তে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান নেইমার। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ভক্তরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান- সেরা তারকাকে ছাড়া সেলেসাওরা পারবে তো? কিন্তু নেইমারের অভাব একটুও বোধ করেনি সেলেসাওরা। ফাইনালে পেরুকে হারিয়ে ১২ বছর পর তারা পুনরুদ্ধার করে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি। কোপার নবম শিরোপা জয়ের পথে সেমিফাইনালে ব্রাজিল হারায় চিরশত্রু আর্জেন্টিনাকে। সেই ম্যাচে হেরে দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল কনফেডারেশনকে (কনমেবল) ‘দুর্নীতিগ্রস্থ’ বলেন মেসি। যে কারণে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা পান আন্তর্জাতিক ফুটবলে। লিভারপুলের বিশ্বজয় জার্মান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে ২০১৮তেই পুনর্জন্ম হয় লিভারপুলের। সেবার শুধু ট্রফিটাই জিততে পারেনি তারা। কিন্তু ২০১৯ সালটা স্বপ্নের মতোই কাটিয়েছে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। টটেনহ্যামকে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো জেতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। ২০০৫ সালে স্টিফেন জেরার্ড-জাবি আলোনসোদের হাত ধরে শেষবার ট্রফিটা জিতেছিল তারা। এবারেরটা মোহাম্মদ সালাহ-সাদিও মানেদের কল্যাণে। লিভারপুল এরপর জিতে নেয় উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। ইংল্যান্ডের প্রথম ক্লাব হিসেবে একই বছরে তিনটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ে অলরেডরা। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা ‘মেসি’ বছর জুড়ে বল পায়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন লিওনেল মেসি। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লীগে সর্বাধিক ৩৬ গোল করেন তিনি। যার সুবাদে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো জেতেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন স্যু। জিতেছেন লা লিগার পিচিচি অ্যাওয়ার্ডও। সেপ্টেম্বরে ফিফা দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ড মঞ্চও রাঙান মেসি। আর ডিসেম্বরে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি অর জিতে ওঠেন অনন্য উঁচ্চতায়। চার বছর পর ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিনের মর্যাদাপূর্ণ এই অ্যাওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করলেন মেসি। গত তিন বছরে পুরস্কারটি ভাগাভাগি করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (২০১৬, ২০১৭) ও লুকা মদরিচ (২০১৮)। উয়েফার বর্ষসেরা খেতাব জিতলে পারলে ২০১৯’র সবগুলো ব্যক্তিগত অর্জনই যেত মেসির শো-কেসে। মাঠে বেশ কিছু মাইলফলক স্পর্শ করেন মেসি। ৭০০ অফিসিয়াল গোল, লা লিগার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১৬ মৌসুম গোল করার রেকর্ড, ক্রিস্টিয়ান রোনালদোকে ছাড়িয়ে লা লিগার সর্বাধিক হ্যাটট্রিকের রেকর্ড (৩৫), ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে টানা ১৫ মৌসুম গোল, প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই আসরে ভিন্ন ৩৪ দলের বিপক্ষে গোলের অনন্য কীর্তিতে নাম তুলেন মেসি। গত দশকের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ৯ মৌসুমে ৫০’র বেশি গোল (ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে) করেছেন তিনি। যদিও বছরটা তিনি শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে শেষ করতে পারেননি। ২০১৯-এ ৫৮ ম্যাচে ৫০ গোল করে দ্বিতীয় স্থানে মেসি। ৫৮ ম্যাচে ৫৪ গোল নিয়ে শীর্ষে বায়ার্ন মিউনিখের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানদোস্কি। ভ্যান ডাইকের চমক ২০০৬-এ ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ফাবিও কানাভারো ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। এরপর গত ১৩ বছর ধরে ব্যালন ডিঅরসহ বর্ষেসেরার অন্য খেতাবগুলো ওঠেছে কেবল ফরোয়ার্ডদের হাতে। ডিফেন্ডারদের আক্ষেপটা গত বছর ঘুচান ভ্যান ডাইক। মেসি-রোনালদোর পেছনে ফেলে উয়েফা বর্ষসেরা পুরস্কার জেতেন নেদারল্যান্ডসের এই সেন্টারব্যাক। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লীগের সেরা ডিফেন্ডার ভ্যান ডাইক লিভারপুলকে ষষ্ঠবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। দশকের বাজে বছর রোনালদোর পর্তুগালের জার্সিতে জিতেছেন উয়েফা নেশন্স লীগ। ২০১৯-এ ১০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো করেছেন ১৪ গোল। এরপরও দশকের সবচেয়ে বাজে বছর কেটেছে তার। ৩৯ গোল নিয়ে বছর শেষ করেন রোনালদো। যেখানে গত বছর ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৪৯ গোল করেছিলেন তিনি। জুভেন্টাসে আসার পরই রোনালদোর গোল কমে গেছে। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে গত পাঁচ বছরে ৬৯ (২০১৩), ৬১ (২০১৪), ৫৭ (২০১৫), ৫৫ (২০১৬) এবং ৫৩ (২০১৭) গোল করেন রোনালদো। শীর্ষ পাঁচ লীগে দাপট ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদেরই ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা ধরে রাখে ম্যানচেস্টার সিটি। স্প্যানিশ লা লিগার শ্রেষ্ঠত্বেরও ঝাণ্ডাও হাত বদল হয়নি। টান দ্বিতীয়বারের মতো সেটি নিজেদের দখলে রাখে বার্সেলোনা। ইতালিয়ান সিরি ও জার্মান বুন্দেসলিগায় এক নায়কের মতো রাজত্ব করেছে জুভেন্টাস-বায়ার্ন মিউনিখ। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে ‘তুরিনের বুড়ি’ খ্যাত জুভরা টানা অষ্টমবারের মতো জেতে স্কুডেট্টো। বায়ার্ন মিউনিখ মাতে টানা সপ্তম বুন্দেসলিগা জয়ের আনন্দে। আর ফরাসি লীগ ওয়ানের টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। ৩৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ফ্ল্যামেঙ্গোর দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর কোপা লিবার্তোদোরেসে চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্ল্যামেঙ্গো। উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রিভার প্লেটকে হারায় ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি। এ টুর্নামেন্টে সর্বশেষ ১৯৮১তে শিরোপা জিতেছিল ফ্ল্যামেঙ্গো। এএফসি’র সেরা আল-হিলাল এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করে আল হিলাল। এপ্রিল টোয়েন্টিফোরকে হারিয়ে রেকর্ড তৃতীয়বারের মতো এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল সর্বশেষ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতেছিল ২০১৭তে। কী অপেক্ষা করছে নতুন বছরে? ২০২০ এ আন্তর্জাতিক ফুটবল সরগরম থাকবে। ১২ই জুন শুরু হচ্ছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। এবার ইউরোপের ভিন্ন ভিন্ন ১২টি দেশে খেলা হবে ইউরোর ম্যাচগুলো। বাছাই পর্ব উতরাতে না পারায় গত ইউরো আর বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। এবারের ইউরোর বাছাই পর্বে দাপট দেখিয়েছে ডাচটরা। একই কারণে ২০১৮ বিশ্বকাপ মিস করেছিল ইতালিও। রবার্তো মানচিনির অধীনে পুনর্জন্ম হয়েছে আজ্জুরিদের। ইউরো বাছাইয়ে সবগুলো ম্যাচেই জিতেছে তারা। ২০২০’র আসরে সবার নজরে থাকবে ইতালি-নেদারল্যান্ডস। এদিকে, ইউরো শুরুর দিনে দক্ষিণ আমেরিকায় শুরু হবে কোপা আমেরিকার ৪৭তম আসর। ২০২০ কোপার আয়োজক আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। ইউরোপের শীর্ষ ৫ লীগে নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে। লিভারপুল এখনো লীগে অপরাজিত। ১৯ ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা অলডেরদের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় দ্বিতীয় স্থানে লেস্টার সিটি। স্প্যানিশ লা লিগায় গায়ে গা লাগিয়ে এগোচ্ছে বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ। ১৮ রাউন্ড শেষে ২ পয়েন্ট এগিয়ে শীর্ষে বার্সেলোনা। একই অবস্থা ইতালিয়ান সিরি আতেও। ১৭ ম্যাচ শেষে জুভেন্টাস-ইন্টার মিলানের পয়েন্ট সমান (৪২)। জার্মান বুন্দেসলিগায় এবার একটু পিছিয়ে বায়ার্ন মিউনিখ। তৃতীয় স্থানে থেকে শীতকালীন বিরতিতে গেছে বায়ার্ন। ফরাসি লীগ ওয়ানে পিএসজি রয়েছে শীর্ষে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech