মহিলা দল বিভক্ত গ্রুপিং কোন্দলে

প্রকাশিত: ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০

মহিলা দল বিভক্ত গ্রুপিং কোন্দলে

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলে হযবরল অবস্থা। সংগঠনটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের অনুসারীদের মধ্যে কয়েকবার মারামারিও হয়েছে।

সর্বশেষ ৮ মার্চ নয়াপল্টনে এক অনুষ্ঠানে হট্টগোলের পর চরম ক্ষুব্ধ হয় বিএনপির হাইকমান্ড। কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছে না সংগঠনটি।

এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খোঁজা হচ্ছে নতুন নেতৃত্ব। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন এসব তথ্য।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, মহিলা দলের বিষয়ে কয়েকটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এক বৈঠকে দ্বন্দ্ব নিরসন ও নতুন নেতৃত্ব খোঁজার জন্য তিন নেতাকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান যুগান্তরকে বলেন, সেভাবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। মহিলা দল তাদের জায়গাতেই আপাতত আছে। তবে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম স্থগিত আছে। অনুরূপ কথা জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সংগঠনের একাধিক কেন্দ্রীয় নেত্রী জানান, মহিলা দল মূলত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই দেখভাল করতেন। তিনি কারাগারে যাওয়ার পরই সমস্যা দেখা দেয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থাকায় ঢাকার কয়েকজন বিএনপি নেতা নিজেদের স্বার্থে মহিলা দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ জিইয়ে রাখছেন।

২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৫ মাসে তারা ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩০টির কাউন্সিল সম্পন্ন করে। যার মধ্যে ২৬টি জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর আর কাউন্সিল করতে পারেনি। ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সংগঠনটির ২৬৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার বেশিরভাগ অনুসারী স্থান পাননি। মূলত তখনই সংগঠনকে দুর্বল করার জন্য একটি গ্রুপের তৎপরতার অভিযোগ ওঠে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কিছুদিন পরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে গ্রুপিং দেখা দেয়।

গত বছর ১৬ নভেম্বর তারেক রহমানের জন্মদিন পালন উপলক্ষে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ে এক সভাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপে মারামারি হয়। সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় ওই সভা শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পর সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ উপস্থিত হয়ে মাইক ছিনিয়ে নেন। তিনি আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণও করেন।

এ সময় দুই গ্রুপের কয়েকজন আহতও হন। পরদিন আফরোজা আব্বাস আর হেলেনের পক্ষের দেড়শ’ নেতাকর্মী সুলতানার বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অনাস্থাপত্র দেন এবং তার বহিষ্কার দাবি করেন। এরপর থেকে শীর্ষ দুই নেত্রী একসঙ্গে কোনো কর্মসূচি পালন করেননি।

গেল বছরের ২০ নভেম্বর শাহজাহানপুরে ২০ জন সাবেক এমপি ও বর্তমান কমিটির শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে তারেক রহমানের জন্মদিন পালন করেন আফরোজা। আর সুলতানা আহমেদ পৃথকভাবে তার গুলশানের বাসার ছাদে মিলাদের আয়োজন করেন। সেখানে কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

সেদিন আফরোজা-সুলতানা গ্রুপিং আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর থেকে মহিলা দলের কোনো বৈঠকও হয়নি। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হস্তক্ষেপে ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে র‌্যালি করার সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। সেদিনও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে দুই গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল হয়। পরে তারেক রহমান মহিলা দলের সব কার্যক্রম স্থগিত করেন।

এর মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর মহিলা দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল। সেদিন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা ছিল আফরোজা আব্বাস তার ১০ জন অনুসারী ও সুলতানা আহমেদ ১০ জন অনুসারী নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানবেন। ভার্চুয়াল সভা করতে চাইলেও বিএনপি থেকে নিষেধ করা হয়।

সূত্র জানায়, জিয়াউর রহমানের মাজারে গেলে সেখানেও দুই নেত্রী একে অন্যের সঙ্গে কথা বলেননি। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান চন্দ্রিমা উদ্যানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সুলতানা আহমেদ তার কাছে আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন। পরে সুলতানাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন নজরুল ইসলাম খান।

সংগঠনের একাধিক কেন্দ্রীয় নেত্রী জানান, আফরোজা আব্বাস একজন ক্লিন ইমেজের। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং তিনি কর্মীবান্ধব। সভাপতি হওয়ার পর সংগঠনের কাজে বিভিন্ন জেলায় সফর করেছেন, সব খরচ নিজে বহন করেছেন। নেতাকর্মীরা বিপদে-আপদে সব সময় তাকে পাশে পেয়েছেন। এ রকম নেত্রী অতীতে মহিলা দল পায়নি। অথচ তার বিরুদ্ধে গ্রুপিং করে নোংরা রাজনীতি করছেন কেউ কেউ।

জানতে চাইলে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, মহিলা দলের কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে আমাদের কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি।

আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কোনো গ্রুপিংও নেই।

সূত্রমতে, এক মাসের মধ্যে মহিলা দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা করা হতে পারে। নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন শিরিন সুলতানা, অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন ও নিলোফার চৌধুরী মনি। আর সাধারণ সম্পাদক পদে হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আক্তার ও অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী।

সূত্র : দৈনিক যুগান্তর

0Shares