প্রকাশিত: ১২:০৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২০
ডায়ালসিলেট ডেস্কঃঃ বেঁচে থাকলে এ মাসে হুমায়ূন আহমেদের বয়স ৭১–এর চৌকাঠ পেরিয়ে ৭২–এ ঠেকত। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই জন্মদিনের উৎসব হতো ১৩ নভেম্বর। কিন্তু নিয়তি তাঁকে ছুঁতে দেয়নি ৭২ সংখ্যাটি; তিনি নেই। চলে গেছেন তাও আটটি বছর পেরিয়ে গেছে।
কে জানে, এই আট বছরে তাঁর নির্দেশনায় আর কতগুলো সিনেমা মুক্তি পেত, হিমু, মিছির আলি, শুভ্র, রূপা, রানু, পুষ্প, তিথিরা আর কী কী করত! আমার হুমায়ূন আহমেদের বই পড়লে চোখের সামনে যে দৃশ্যগুলো ভেসে ওঠে, মালয়ালম সিনেমা দেখলে মনে হয় যেন তা–ই। যেন পর্দায় চলছে হুমায়ূন আহমেদের বই।
হুমায়ূন আহমেদের মাথার ভেতরে জন্ম নেয় একজন হিমু। তারপর সে বইয়ের পাতায় উঠে আসে। তারপর সে ঢাকা শহরের রাস্তায় হলুদ গেঞ্জি পরে খালি পায়ে টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। কাল্পনিক এই চরিত্রের জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। বইয়ের পাতা থেকে বাস্তবে, পর্দার মোহময় এক চরিত্র সে। কাল্পনিক সেই হিমুরই আরেক রূপ খুঁজে পাওয়া যায় মালয়ালম সিনেমায়।মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে ভারতের কেরালা রাজ্যকে কেন্দ্র করে। ‘চার্লি’ নামের একটি সিনেমা মুক্তি পেল ২০১৫ সালে। এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে পর্দার ভেতর থেকে দর্শকের হৃদয়ে জাদু ছড়িয়েছেন দুলকার সালমান।
আরেকটি জনপ্রিয় মালয়ালম সিনেমা ‘কুম্বালাঙ্গি নাইটস’। এই সিনেমায় আহামরি কোনো গল্প নেই। কিন্তু এই সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য মনে হয় কোনো শিল্পীর আঁকা। যেন হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের ঝরঝরে সাদা ভাতের মতো শব্দমালার কী নিখুঁত চিত্রায়ণ। প্রাণবন্ত, সহজ-সরল উপস্থাপন। সরলরৈখিকভাবে বলে যাওয়া গল্প। অথচ মনের গভীর কোণে শিহরণ জাগায়। পুলকিত করে। হুমায়ূন আহমেদের বই পড়লে যেমন অনুভূতি হয়, এই সিনেমাও তা–ই। কী পড়লেন, কী দেখলেন, গল্প কী, সেটা ছাপিয়ে ভালো লাগার অদ্ভুত এক অনুভূতি লেপ্টে থাকে মনের কোণে।
মাসের শুরুতে আরেকটি মালয়ালম সিনেমা দেখলাম। ২০২০ সালে ৩১ আগস্ট নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। নামটা একটু খটমটে—‘মানিয়ারাইলি অশোকান’। কাহিনি কিছুই না। এক ছেলের বিয়ে হয় না। কারণ, ছেলের কুষ্ঠিতে দোষ আছে।তাই ব্রাহ্মণের পরামর্শে প্রথমে একটি কলাগাছকে বিয়ে করে। এ নিয়েই কাহিনি, অথচ চোখ সরানো যায় না। সাধারণ গল্পের অসাধারণ উপস্থাপন।
এই সিনেমার সাঁতার না–জানা কেন্দ্রীয় চরিত্র একবার পুকুরের জলে জোছনার অপরূপ শোভা দেখে পুকুরে লাফ দেয়। জোছনা নিয়ে এই পাগলামো দেখার পর কার না হুমায়ূন আহমেদের কথা মনে পড়বে!
ভারতের মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দেখিয়ে দিচ্ছে বাজেট বড় কোনো বাধা না। নিজের গল্পটা বলতে চাইলে বা নিজের কল্পনার দৃশ্য দেখাতে চাইলে কলমের মতো করেই ক্যামেরা দিয়ে সেটা লিখে ফেলা যায়। যাকে বলে ‘ক্যামেরা-পেন’। সহজ-সরল গল্পে কেবল ক্যামেরা আর অভিনয়ের মুনশিয়ানা দিয়ে জাদু আঁকা যায়। যেমনটা দেখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর লেখার কাহিনির চেয়ে লেখনশৈলী মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করে। শেষ পর্যন্ত আহামরি কিছু ঘটবে না জেনেও তাঁর বই শেষ না করে ওঠা যায় না। এসব সিনেমার ক্ষেত্রেও তা–ই।
মালয়ালম সিনেমা চোখে–মনে প্রশান্তি দেয়। এই ইন্ডাস্ট্রির কিছু সিনেমা দেখলে মনে হয় চোখের ব্যায়াম হচ্ছে। তাই এ কথা বলতেই পারি, মালয়ালম সিনেমা যেন হুমায়ূন আহমেদের লেখার ক্যামেরার চিত্রায়ণ।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech