বিশ্বকাপ ফুটবলে বিশ্বের অগণিত মানুষের চোখের মণি – ম্যারাডোনা

প্রকাশিত: ১২:০৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২০

বিশ্বকাপ ফুটবলে বিশ্বের অগণিত মানুষের চোখের মণি – ম্যারাডোনা

ডায়ালসিলেট ডেস্কঃঃ ফুটবলার হিসেবে তিনি অতুলনীয়। আর্জেন্টাইন এই মহাতারকাকে বলা হয় ফুটবল ঈশ্বর। অনেকে ডাকেন গোল্ডেন বয়ও। তবে বুটজোড়া তুলে রাখার পরও নিয়মিতই হয়েছেন খবরের শিরোনাম। ভালো-মন্দের মিশেল তো তাতে ছিলই। নিজের অন্ধকার জীবন নিয়ে কথা বলতে কখনোই লজ্জা পেতেন না ম্যারাডোনা। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে ফিফা সভাপতি, কাউকে নিয়ে কটুক্তি করতেও দু’বার ভাবতেন না দিয়েগো।

বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশেও তিনি ছিলেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়। বলা যায়, তার কারণেই বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশের ভক্তদের হৃদয়ে আর্জেন্টিনা এক অটুট আসন পেয়েছে। সেই কারণেই বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই বাংলাদেশের শহরে, বন্দরে, গ্রামে, গঞ্জে সর্বত্র ছেয়ে যায় আর্জেন্টিনার পতাকায়। সেই সব ভক্তের মনে আজ ক্ষরণ হচ্ছে। অনেকে ঘরের কোণে বসে, অনেকে নির্জনে, অনেকে মাঠের কোণায় কার্জের ভিড়ে অঝোরে কাঁদছেন। ম্যারাডোনা নেই, এই বেদনা তাদের কাছে স্বজন হারানোর চেয়েও বেশি কিছু। ম্যারাডোনা শুধু তাদের কাছে ফুটবলার নন, তিনি ফুটবলের রাজপুত্তুর।

 

তাকে নিয়ে যতই বিতর্ক থাক না কেন, তিনি অনন্য এক উচ্চতায় আসন পেয়েছেন এসব ভক্তের কাছে। বাংলাদেশে যেমন তিনি জনপ্রিয়, লাতিন আমেরিকার বামদের কাছেও তাই। কিউবা বিপ্লবের প্রয়াত কিংবদন্তি ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে তিনি ‘দ্বিতীয় পিতা’ হিসেবে মানতেন। ম্যারাডোনার পায়ে ছিল ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মুখের ট্যাট্টু আঁকা। একবার এই ক্যাস্ত্রো তাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন রাজনীতিতে আসার। কিন্তু যার রক্তে লেখা ফুটবল, হিমোগ্লোবিনে মিশে আছে ফুটবল তিনি কি করে রাজনীতিতে যাবেন ফুটবল ছেড়ে! তিনি পারেন নি। তাই ফুটবলের তকমা গায়ে মেখে বুধবার ৬০ বছর বয়সে চিরবিদায় নিয়েছেন ম্যারাডোনা। রাজনীতি না করলে কি হয়েছে। লাতিন আমেরিকার বাম নেতাদের সঙ্গে ছিল তার সখ্য। যেমন ছিল ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে সম্পর্ক, তেমন ছিল ভেনিজুয়েলার হুগো শাভেজ, বলিভিয়ার ইভো মোরালেসের সঙ্গে। ২০১৭ সালে এক সাপ্তাহিক টেলিভিশনকে শ্যাভেজ সম্পর্কে ম্যারাডোনা বলেছেন, ফিদেল (ক্যাস্ত্রো) আমার জন্য যেমন সব কিছু করেছেন, তেমনি আমার জন্য সর্বোত্তম করেছেন শ্যাভেজ। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে যা আসে তার সবটাই আমি ঘৃণা করি। আমার সর্বশক্তি দিয়ে এসব ঘৃণা করি।

রাজধানী বুয়েন্স আয়ারসের বাইরে এক নোংরা শহরে এক কারখানা শ্রমিকের ছেলে ম্যারাডোনা। কে জানতো তিনি সারাবিশ্বের মানুষের হৃদয় জয় করবেন। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনা দলের ফুটবল জয়ের নায়ক হয়ে সারা বিশ্বকে যেন জয় করেছেন। যদিও এতে গোল করা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবু তার খেলোয়ার হিসেবে যে নৈপুন্য, দক্ষতা, পুরো মাঠে একাই প্রতিপক্ষের ১১ খেলোয়ারকে বোকা বানিয়ে গোল দেয়া- এসব যেন অবিশ্বাস্য বিষয়। আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেয়ার পরের বছর ১৯৮৭ সালে তিনি প্রথম সাক্ষাত করেন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে। সময়টা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের চার বছর পরের কথা। ওই সাক্ষাতেই এই দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। বিপ্লবী নেতার সঙ্গে তার সম্পর্ক এতটাই গাঢ় হয় যে, ম্যারাডোনা পরের চার বছর কাটিয়ে দেন হাভানায়। কিন্তু তাকে আর্জেন্টাইন টিভি প্রযোজক আলফ্রেডো টেডেসছি বলেছেন, এটা ছিল এক অসম্ভব সম্পর্কের সূচনা। ক্যাস্ত্রো ছিলেন তার আদর্শ। ব্যাপারটা যেন তিনি তার (ক্যাস্ত্রো) প্রেমে পড়ে গেছেন। এরপর এলো শাভেজ, মোরালেস ও অন্যদের বেলা।

0Shares