প্রকাশিত: ১২:৩১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০২০
ডায়ালসিলেট ডেস্কঃঃ সিলেট নগরের ধোপাদিঘী উদ্ধার, সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধণে ২০১৮ সালে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। আড়াই বছরেও সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ শেষ না হলেও এবার দিঘীর জায়গায় নিজেরাই বহুতল মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সিসিক। যদিও ২০১৮ সালে এই স্থানে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গেই দিঘীটির দখল হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধার করেছিলো সিসিক।
সিটি করপোরেশেন কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভিন্ন জটিলতায় কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ধোপাদিঘীর সৌন্দর্যবর্ধণের কাজ আবার শুরু হয়েছে। আগামীঅ বছর মার্চের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর দিঘীর সামনের জায়গা বেদখল হওয়া ঠেকাতে মাকেট নির্মাণ করা হচ্ছে বলে দাবি সিসিক কর্মকর্তাদের।
যদিও পরিবেশ কর্মীদের দাবি, সামনে মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে এবার সিটি করপোরেশনই দিঘী দখল করছে। বিপুল অংকের টাকা ব্যয়ে দিঘীর সৌন্দর্যবর্ধন করা হলেও সামনে মার্কেট নির্মিত হলে পুরো দিঘীটাই আড়ালে পড়ে যাবে।
প্রায় ৬ একর আয়তনের ধোপাদিঘি সিলেটের অন্যতম প্রাচীন দিঘি। এই দিঘির নামেই ওই এলাকার নামকরণ হয়েছে ধোপাদিঘির পাড়। দিঘির ৫ একর জায়গার মালিক সিলেট সিটি করপোরেশন। বাকি এক একর ধোপাদের মালিকানায়।
অনেকদিন ধরেই দখলে-দূষণে বিপন্ন ছিলো ধোপাদিঘির বেশিরভাগ অংশ। সিটি করপোরেশনই এরআগে শিশু পার্কের জন্য এই দিঘীর অনেকাংশ ইজারা প্রদান করে। দিঘী দখল করে গড়ে উঠে ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত বঙ্গবীর শিশু পার্ক। দিঘী ভরাট করে মসজিদও নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। এছাড়া এই দিঘির তীর দখল করে গড়ে উঠেছে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড, রেড ক্রিসেন্টের কার্যালয়।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ধোপাদিঘী রক্ষা ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ‘ধোপা দিঘী এরিয়া ফর ব্যটার ইনভারমেন্ট এন্ড বিউটিফিকেশন’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। ভারতীয় দূতাবাসের অর্থায়নে এই প্রকল্পের শুরুতে দখলে-দূষণে অস্থিত্ব সঙ্কটে থাকা ধোপাদিঘীর দখল হয়ে যাওয়া কিছু ভ’মি উদ্ধার করে সিসিক।
তবে ওই প্রকল্প নিয়েও দেখা দেয় বিতর্ক। সৌন্দর্য বর্ধণের নামে দিঘর মাঝখানে ভাসমান রেস্টুরেন্ট নির্মাণের উল্লেখ ছিলো প্রকল্পের মধ্যে। তখন এর বিরোধীতা করে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। দিঘীতে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
২০১৯ সালের ৪ মার্চ এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রেরণকৃত এক চিঠির জবাবে সিসিকের পক্ষ থেকে বলা হয় জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে দিঘির মধ্যখানে জাহাজ আকৃতির রেস্টুরেন্ট নির্মাণের প্রস্তাাবনাটি বাতিল করা হয়েছে।
নানা বিতর্কের পর শুরু হলেও ২০১৯ সালে এসে অর্থ ও সীমানা সংক্রান্ত জটিলাতায় আটকে যায় এই প্রকল্পের কাজ। এরমধ্যে চলতি বছর ‘সিলেট সিটি করপোরেশন বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, ধোপাদিঘীর পাড়’ নামে একটি বহুতল বিপনী বিতান নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মার্কেট নির্মাণের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে।
সিসিকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ধোপাদিঘীর আকার অনেক বড় থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে আশপাশে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট গড়ে তোলে অনেকে এই দিঘীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন। স্থাপনা ভেঙ্গে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও পুণরায় দখল ঠেকাতে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করছে সিসিক।
সিসিকে প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবরে ধোপদিঘীর পাড়ের এই মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখনো পাইরিংয়ের কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনের ২ তলা পর্যন্ত কাজ করা হবে। পরবর্তীতে এই কাজ বর্ধিত করা হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ধোপদিঘীর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ ও দিঘীর উত্তর-পূর্ব পাড়ে মার্কেট নির্মাণের কাজ একসাথেই চলছে। সৌন্দর্যবর্ধণের কাজ কিছুদিন সাময়িক বন্ধ ছিলো। কারাগারের পাশের দিঘীর সীমানা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সাথে জটিলতা ছিল। সম্প্রতি সেই জটিলতা নিরসন হয়েছে। দিঘীর সৌন্দর্যবর্ধণ করে সিলেট নগরীর জনসাধারণের বিনোদনের ব্যবস্থা ও দিঘীটি রক্ষা করা হবে। ৫০৬ মিটার পায়ে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) হবে।
ধোপদিঘীর পাড়ে নির্মিতব্য মার্কেট নিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে এই মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ধোপাদিঘীর মূল অংশ থেকে প্রায় ১৫ ফুট দূরে এই মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে। তাই এতে দিঘির কোনো ক্ষতি বা সৌন্দর্যহানী হবে না।
তিনি বলেন, দিঘী যত উন্মুক্ত রাখা যায় তত ভাল। তবে ধোপাদিঘীর এই পাশ কখনোই উন্মুক্ত ছিল না। সবসময়ই কেউ না কেউ দখল করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। যেহেতু এখানে সবসময়ই কোনো না কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল তাই বেদখল ঠেকাতে এই মার্কেট তৈরি হচ্ছে। এতে করে এই দিঘীর পাড়ে আর কোনো অবৈধ স্থাপনা হবে না এবং এই মার্কেট দ্বারা দিঘীও ক্ষতিস্থ হবে না।
দিঘীরপাড়ে মার্কেট নির্মাণ করলে পুরো দিঘীটই ঢাকা পড়ে যাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছিলো এই দিঘীটি উদ্ধার, সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। এখন তারাই দিঘীটি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে সৌন্দর্যহানি করছেন। সিটি কর্পোরেশন দিঘী সংস্কার না মার্কেট নির্মাণ করতে চায় এটাই এখন প্রশ্ন।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech