প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃঃ যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের (স্ট্রেইন) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানে নতুন প্রজাতির এই ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপের দেশ ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়ায়ও নতুন ধরনের এ ভাইরাসটির সন্ধান পাওয়া গেছে। মারাত্মক উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে গত সোমবার হঠাৎ করেই লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিরাট অংশজুড়ে লকডাউন জারি করা হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নতুন এ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার হার ৭০ শতাংশ কিংবা তার চেয়েও বেশি। নতুন এই ভাইরাসটির আতঙ্কে ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশেরও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে মাত্র একটি বিমান চলাচল করে। সেটি বন্ধ করা হবে কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। সুতরাং চলমান পদ্ধতিতে বিমান চলাচল করবে বলে জানান তিনি। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইউরোপসহ অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রতিবেশী ভারতও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ অবস্থায় আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। বিশেষজ্ঞসহ সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়েছে। সুতরাং সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দ্রুতই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। প্রায় অর্ধশত দেশের যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি : যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের পর বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশ ইতোমধ্যে সে দেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউরোপ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক, কানাডা, সৌদি আরব, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।সোমবার রাতে ফ্রান্স যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় ইংলিশ চ্যানেলের তীরবর্তী ডোভারের ফেরি ও টানেল দিয়ে পার হয়ে সব ধরনের গাড়ি ও ট্রাকের ফ্রান্সে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই প্রান্তেই অসংখ্য গাড়ি ও ট্রাক আটকা পড়েছে। এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়ের সদস্যভুক্ত দেশগুলো একটি স্বাস্থ্য প্রটোকল তৈরি করার কাজ করছে, যাতে করে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আবারও যান চলাচল শুরু হতে পারে। এ ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে শেয়ারবাজারে। ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামে পতন ঘটেছে। নতুন ধরনের ভাইরাস এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা : বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনের ভাইরাস এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি বলে দাবি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরিবিষয়ক কার্যক্রমের প্রধান মাইকেল রায়ান। সোমবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভাইরাসটি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। তবে ভাইরাসটিকে নিজের গতিপথে চলতে দেওয়া যাবে না। এ ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে বর্তমানে যেসব ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে, সেগুলো সঠিক। করোনা নিয়ন্ত্রণে যা যা করা হচ্ছে সেগুলো চালিয়ে যেতে হবে। হয়তো আরেকটু বেশি সময় ধরে করতে হবে। তবে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক করোনার নতুন ধরন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে আগে দাবি করেছিলেন। জরুরিভিত্তিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের : করোনা প্রতিরোধে সরকার গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা বলেন, যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ইউরোপের দেশগুলো সে দেশের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সৌদি আরব এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সুতরাং বাংলাদেশেরও এ বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত যত বিমান আছে, সেগুলোর বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। কারণ নতুন ধরনের এ ভাইরাস খুব প্রাণঘাতী না হলেও উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর অন্যান্য দেশ দ্রুততার সঙ্গে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করলেও বাংলাদেশ তা করেনি। এমনকি বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের সঠিক নিয়মে কোয়ারেন্টাইনও করেনি। এ কারণে কয়েক লাখ মানুষ আক্রান্ত ও হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এবার ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করা হোক। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কানেক্টিং বিমানগুলোতে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের বিষয়ে বাড়তি সতর্করা জারি করা প্রয়োজন। বিদেশ থেকে যারাই আসবেন, তাদের সঠিক নিয়মে যেন কোয়ারেন্টাইন করা হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। কারণ নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাস অত্যন্ত সংক্রমণপ্রবণ। সুতরাং সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। নতুন ধরনের ভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে : বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগেরটির তুলনায় নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। যুক্তরাজ্যে হঠাৎ করে লকডাউনের পেছনে এই ভাইরাসটির দ্রুত ছড়িয়ে পড়াই কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলে তাদের এই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছে। এবারের লকডাউন আগামী দুই মাস ধরে চলতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মূলত তিনটি কারণে এই ভাইরাসের নতুন রূপটি সবার জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন ভাইরাসটি অন্যান্য সংস্করণকে দ্রুত প্রতিস্থাপন করছে। এটিতে এমন মিউটেশন রয়েছে, যা ভাইরাসের অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ মিউটেশনের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কভিড-১৯ জেনোমিক্স ইউকে (কগ) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক নিক লোম্যান বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ধারণার তুলনায় বিস্ময়কর রকমের বেশি সংখ্যায় মিউটেশন হয়েছে। ফাইজারের টিকা নতুন ধরনের করোনা প্রতিরোধেও সক্ষম : করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা কাজ করবে বলে জানিয়েছেন বায়োএনটেকের প্রধান গবেষক ও স্বত্বাধিকারী উগুর শাহিন। যুক্তরাজ্যসহ করোনার নতুন ধরন কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ার খবরে সোমবার রাতে জার্মানি প্রেস এজেন্সির সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। ওই প্রেস এজেন্সির উদ্বৃতি দিয়ে জার্মানির ডের স্পিগেল নামে এক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, উগুর শাহিন বলেছেন, বায়োএনটেক-ফাইজারের টিকাটি যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন স্টেইনের বিরুদ্ধে কাজ করবে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। এরই মধ্যে অন্য ২০টি রূপান্তরিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই টিকার সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে টিকাটি অন্য রূপান্তরিত ভাইরাসগুলোকে প্রতিবারই নিষ্ফ্ক্রিয় করেছে। এদিকে আলোচনায় থাকা মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুটি টিকাই নতুন ধরনের এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনারভাইরাসের যেসব টিকা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো নতুন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কাজ করবে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech