সিলেটে ১০ বছরপর আসছে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২১

সিলেটে ১০ বছরপর আসছে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি

সোহেল আহমদ পাপ্পু ::  দেশের জনগনের অধিকার,গণতন্ত্র রক্ষা এবং যেকোনও দুর্যোগে মানুষকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮০ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে গঠিত হয় বিএনপির আরেকটি সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল’। দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবার আদর্শ থেকে এখন অনেকটাই বিচ্যুত হয়ে আছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। ১৯৮০ সালে সাংবাদিক কাজী সিরাজকে আহ্বায়ক করে ২৩ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন গঠন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার মৃত্যুর ১৯৮৫ সালের ১৯ আগস্ট কাজী আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে ২৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

১৯৯৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির দুই দিনব্যাপী জাতীয় কাউন্সিলে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথম সংগঠটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। পরে ২০১৬ সালে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে শফিউল বারী বাবুকে এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আবদুল কাদের ভুঁইয়া (জুয়েল)। কমিটির সভাপতি শফিউল বারী বাবু সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করায় সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।

দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে সিলেট জেলা এবং ৯ বছর ধরে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটি দিয়েই চলছে নামমাত্র আহবায়ক কমিটি। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মহামারী (কোভিট-১৯) করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধ সময়কালীন সামাজিক কার্যক্রম বা কর্মসূচী তেমন দেখা যায়নি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

তবে যখনই দলের কমিটি আসার গুঞ্জন শোনা যায়। ঠিক তখনই দেখা যায় নেতাকর্মীদের মাঝে পদ-পদবী পাওয়ার তুমুল প্রতিযোগিতা। শুরু হয় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সিলেটের শীর্ষ নেতাদের তদবির। সেখানেও দেখা যায় সিলেটের শীর্ষ নেতারা তাদের চাহিদামতো প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে জমা দেন এবং তদবির করে নিজেদের অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে এবং গ্রুপকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে মরীয়ান।

বিগত প্রায় ১০ বছর আগে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সিলেট জেলা শাখায় মনোনীত সামসুজ্জামান জামান আহ্বায়ক দিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে জেলার  পক্ষ থেকে করোনাকালীন সময়ে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং কেন্দ্রীয় ঘোষিত বিভিন্ন কার্যক্রম দলীয় নেতাদের রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের উদ্যোগ গ্রহন করেন নেতৃবৃন্দরা।

অন্যদিকে, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের ক্ষেত্রে তেমন কর্মসূচী নেয়া হয়নি তবে কমিটি আসার গুঞ্জন উঠলেই বেশ কয়েকটি কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে দলটিতে পুর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সিলেটে অনেকটাই পিছনে পড়েছে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদল। বিগত কয়েক বছর ধরে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলে আহবায়ক হিসেবে একাই দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন ফরহাদ চৌধুরী শামীম। একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে বিগত কয়েক বছর ধরে মহানগরের দ্বায়িত্ব নিয়ে থাকা ফরহাদ চৌধুরী শামীম একাই চালিয়ে যান যা সিলেটে থাকা দলে অনেক ত্যাগী নেতারা এসব পদ-পদবী থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের এক নেতা ডায়ালসিলেটকে জানান,  বর্তমান সরকারের আমলে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের উপর বিভিন্ন হামলা এবং মামলাও হয়েছে। দলের জন্য আমরা মাঠে যেভাবে কাজ করছি তার সঠিক মূল্যায়ন আমরা পাচ্ছি না। বিগত ৯ বছর আগের অনেক নেতাকর্মী যারা বর্তমান সরকারের আমলে কোন আন্দোলন সংগ্রামে দেখাও মেলেনি সে সময় তাদের কোন অস্থিত্ব ছিল না তারা এখন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটিতে স্থান পেতে শীর্ষ নেতাদের সাথে লিয়াজো করে পদ-পদবী লাভের আশায় সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  এতে দলের মধ্যে থাকা ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করে শক্তিশালী সংগঠনের পরিবর্তে আরো দূর্বল সংগঠনে পরিনত করার চেষ্টা চলছে। অনেক শীর্ষ নেতারা তাদের ক্ষমতা ঠিকিয়ে রাখতে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। যা সত্যিই দলের জন্য ভবিষ্যতে হুমকি স্বরূপ হয়ে দাড়াবে।

এদিকে, সিলেটে কবে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে তার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি দ্বায়িত্বে থাকা নেতৃবৃন্দরা।

বিগত সময় সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলে আহবায়কের ম্বায়িত্বে থাকা পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন হয়নি সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল কমিটির (সিলেট বিভাগ) সহ সভাপতি ও সাংগঠনিক টীমের সদস্য ফরহাদ চৌধুরী শামীম ডায়ালসিলেটকে বলেন, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক কমিটি প্রায় ৭ বছর হবে মনে হয়। তবে আমাকে নেতৃবৃন্দরা বিগতদিনে যেভাবে কমিটির দ্বায়িত্ব দিয়েছেন সেভাবে চালিয়েছি। আমার নেতৃত্বে এখন সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যে কোন কর্মসূচী সকল নেতাদের নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি এবং করি।

এদিকে বর্তমান আহবায়ক কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ডায়ালসিলেটকে বলেন, সিলেটে আহবায়ক কমিটির অতিসত্তর চলে আসবে। যেহেতু আমি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এবং (সিলেট বিভাগ) সাংগঠনিক টীমের সদস্য হিসেবে আমিই কমিটি দেয়া ও প্রস্তাবনা করার মালিক। অতিসত্তর ত্যাগী নেতৃবৃন্দদের নিয়ে কমিটি হবে এখানে কোন স্বজনপ্রীতি হবেনা ইনশাআল্লাহ।

দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা আহবায়ক কমিটির পর আবারো সিলেটে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের নতুন আহবায়ক কমিটিতে কবে আসছে বা এতে কারা স্থান পাবে সে বিষয়ে কথা বলতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া আল মামুন ডায়ালসিলেটকে জানান, আগে কেন হয় নাই সেটা আসলে আমরা চেষ্টা করেছি আর এখন যে কমিটিটা আসছে তা যত দ্রুত কমিটি গঠন করা যায় সেই চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জ আহবায়ক কমিটি ঘোষনার পর সিলেটের কমিটি দেয়া হবে। কারণ সিলেটে যেহেত একটুু জটিলতা বেশী তারপরও আমরা চেষ্টা করছি একটা কমিটি হোক যাতে দলটি আবার নতুন করে সচল হবে। মোটামোটি আমাদের প্রক্রিয়া সব ওকে হয়ে আছে আর সিলেটের ব্যাপারে তারেক রহমানের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুযায়ী ঘোষণা করা হবে।  যেহেতু আমরা ইতোমধ্যে কমিটি করে সেন্ট্রালে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেন্ট্রালে উনার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যদি উনি সিগনাল দেয়। যেহেতু হবিগঞ্জ, ও সুনামগঞ্জের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং মৌলভীবাজারেরটাও হয়ে যাবে। আপনারা জানেন সিলেটের হবিগঞ্জে ও সুনামগঞ্জে শতস্ফূর্তভাবে সুন্দর একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এবারের কমিটিতে কেমন নেতৃত্ব আসবে এ প্রশ্নের জবাবে জাকারিয়া আল মামুন ডায়ালসিলেটকে জানান, আমরা চাই যারা ক্লীন ইমেইজের, যারা মাঠে কাজ করছে, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল এবং যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিল বা ছাত্রদলে বিভিন্ন পোষ্টে দ্বায়িত্ব পালন করেছিল তাদের সমন্বয়ে কমিটি করবো। আমরা কিন্তু কে কার লোক এইটা দেখি নাই যারা দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে ছিল, যারা ত্যাগী ছিল তাদের নিয়ে আমরা কমিটি করবো। আশা করছি আমরা এইমাসের শেষের দিকে অথবা আগামীমাসের প্রথম সপ্তাহে কমিটি পেয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর ২০২০ইং জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সভাপতি (সিলেট বিভাগ) ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও সিলেট বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাগত কিশোর দাস’র পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সিলেট বিভাগীয় টিমের দলনেতা ড. শরীফুল ইসলাম দুলু।

বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া আল মামুন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মনির, ফরহাদ উদ্দিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল সারেং। প্রতিনিধি সভায় সিলেট জেলা ও মহানগরের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রতিনিধিদের হাতে আগামীদিনে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী নেতাকর্মীদের তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহের জন্য তথ্য উপাত্ত ফরম তুলে দেওয়া হয়।

সিলেটে অনেক ত্যাগী দক্ষ শিক্ষিত নেতারা রয়েছেন যারা দলকে প্রতিষ্টিত করতে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। আর তার মধ্যদিয়ে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন আরো শক্তিশালী দল গঠনে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তবে সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটিতে কেমন নেতৃত্ব আসবে তা কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা  এবং তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেটে ত্যাগী নেতারা সঠিক মূল্যায়ন পান কি না তা দেখার বিষয়।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ