শুল্কেই আটকে আছে চাল আমদানি

প্রকাশিত: ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২১

শুল্কেই আটকে আছে চাল আমদানি

ডায়ালসিলেট ডেস্ক;;বেড়েই চলছে চালের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় রাজধানীর খুচরা বাজারে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন টাকা।

মোটা চালের অবস্থাও প্রায় একই। গত এক মাসে চালের দাম বেড়েছে আড়াই শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে মজুত বাড়াতে ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে আরও ১০ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ লক্ষ্যে আমদানি শুল্ক ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ৬ জুলাই এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

এদিকে চালের বাজার নিয়ে আজ বিকালে কৃষি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ‘বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিদেশ থেকে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করবে সরকার। বেসরকারিভাবে আমদানি করতে আমদানি শুল্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। এনবিআর সিদ্ধান্ত দিলেই আমরা প্রক্রিয়া শুরু করব। চালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আজ বিকালে তিন মন্ত্রণালয়সহ স্টেকহোল্ডারদের বৈঠক হবে।’

চলতি বছর দেশে বোরো ও আমনের বাম্পার ফলনের পরও চালের দাম বাড়তে থাকে অস্বাভাবিক হারে। দিন দিন অস্থির হচ্ছে চালের বাজার। বুধবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক পণ্যমূল্য তালিকায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯ জুলাই যে চালের দাম ছিল ৬৫ টাকা বুধবার (২৮ জুলাই) তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ টাকায়। বাস্তবে ৭২ থেকে ৭৪ টাকার কমে ভালো চিকন চালই পাওয়া যায় না।

মোটা চালের অবস্থাও প্রায় একই। সংস্থাটির মতে, এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে সরু চালের দাম বেড়েছে দুই দশমিক ৪০ শতাংশ। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই দশমিক ১১ শতাংশ।

এছাড়া টিসিবি বলছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতি কেজি মোটা চাল রাজধানীর বাজারে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মাঝারি আকারের চাল কেজিতে ৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরু চাল কেজিতে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও চাল আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে চালের বিষয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা যুক্ত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, প্রাথমিকভাবে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কে ১০ লাখ টন চাল বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারদর স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে এ পরিমাণ কমাতে-বাড়াতে পারবে।

বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মোটা চালের ব্যবহার কমে এখন চিকন চালের চাহিদা বেড়েছে। যদি বেসরকারিভাবে সিদ্ধ/আতপ, সরু চাল আমদানি করা হয়, তাহলে বাজারে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার প্রতি মণ ধানের দাম এক হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কৃষক ন্যায্যমূল্য পেয়েছে কারণ একজন কৃষকের মণপ্রতি উৎপাদন খরচ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার বেশি হয়নি। অতএব আমদানি করলে কৃষক কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

বোরো ধান কাটার পরও চালের দাম বেড়েছে, তাই আগের ধারাবাহিকতায় সরকারি আমদানির সঙ্গে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করতে হবে।

আর চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক কমিয়ে বেসরকারিভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল আমদানির পরামর্শ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি এনবিআর। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এনবিআর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সম্মতিপত্র চেয়েছে। সেটি পাওয়ার পরই এ বিষয়ে তারা মতামত জানাবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে  জানান, চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে পড়বে প্রায় ২৭ শতাংশ। এটা করা হলে আমদানির প্রতি ব্যবসায়ীরা ঝুঁকবে। বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে। চালের দাম না কমলেও তা স্থিতিশীল হবে। এ কারণেই চালের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামগুলোতে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ২২ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ১২ হাজার ৯১ টন এবং গম দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩১ টন। গত বছর এই সময় মজুত ছিল ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৩০ টন।

এর মধ্যে চাল ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪ টন এবং গম দুই লাখ ৩৯ হাজার ৪৬ টন। সরকার চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে ৬ লাখ টন ধান এবং সাড়ে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

ঘোষণা অনুযায়ী, সরকার কৃষকের কাছ থেকে কেজি প্রতি ২৭ টাকা দরে ধান কিনবে, আর কেজি প্রতি ৪০ টাকা দরে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৮ টাকা দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল কিনবে চালকল মালিকদের কাছ থেকে।

এই দাম গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি যথাক্রমে এক টাকা ও তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। ২৮ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে। চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়েছে ৭ মে থেকে। চলবে আগস্ট পর্যন্ত।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ