দক্ষিণ সুরমায় ৫টি পরিবার গৃহবন্দী রাস্তায় চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি

প্রকাশিত: ১:৪৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২১

দক্ষিণ সুরমায় ৫টি পরিবার গৃহবন্দী রাস্তায় চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি

স্টাফ রিপোর্টার :: দক্ষিণ সুরমার মন্দিরখলা গ্রামে রাস্তায় চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ৫টি পরিবারকে গৃহবন্দী করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেশী গৃহবন্দী ৫ পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টার ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে বশির মিয়া তা না শুনে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখেন।

এসময়  মন্দিরখলা গ্রামের মৃত ইছাক মিয়ার ছেলে বশির মিয়া গ্রাম্য রাস্তায় বরইগাছের সাথে বাশঁ পুতে এবং গাছ ফেলে রেখে প্রতিবেশীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারা। এসময় বশির মিয়া ও তার ছেলে শামসুল ইসলাম মুক্তাও উল্টো হুমকি ধমকি দেন।

পরে বশির মিয়ার এমন আচরণে বাধ্য হয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন তার প্রতিবেশী মৃত আব্দুল মছব্বিরের ছেলে ভুক্তভোগী  মো. আব্দুল মালেক শামীম। যার জিডি (নং ১১৩০ তাং ২৮.০৭.২১ইং) করা হয়েছে।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মকন দোকান সংলগ্ন মন্দিরখলা গ্রামের আব্দুল মালেক শামীম ও বশির মিয়া একই প্রতিবেশী সেই গ্রামের একই মহল্লায় প্রায় ১৮টি পরিবারের বসবাস করে আসছেন সেখানে যুগ যুগ ধরে লোকজন সেদিক দিয়ে যাতায়াতের জন্য ১২০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৬ ফুট প্রস্থের এেই রাস্তা ব্যবহার করে আসছেন। রাস্তাটি আব্দুর রহমানের বাড়ি থেকে শুরু হয়ে এলজিইডি পাকা সড়কে গিয়ে মিলিত হয়েছে।

পরে বেশকিছুদিন ধরে বশির মিয়া প্রচার করতে শুরু করলেন, তার বাড়ির পাশবর্তী ২০০ বছরের পুরোনো ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হলে আব্দুল মালেক শামীম, জমির মিয়া ও আব্দুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা বশির মিয়াকে মাসোহারা দিতে হবে। গত ২৭ জুলাই বশির মিয়া তার বাড়ির সামনে একটি বাঁশ পুঁতে রাস্তার পাশে থাকা বরই গাছে রশি দিয়ে টেনে বাঁকা করে চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।

এতে বশির মিয়া তার প্রতিবেশী শামীম, রহমান, জমির মিয়াসহ ৫টি পরিবারের চলাচলে বিঘ্ন ঘটান । তাৎক্ষণিক ভুক্তভোগীরা বিষয়টি মন্দিরখলা পঞ্চায়েতের মুরব্বীদের জানানো হলে স্থানীয় মুরব্বীরা বশির মিয়ার বাড়িতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণ জানতে চান এবং রাস্তাটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বশির মিয়া উল্টো মুরব্বীদের হুমকি দেন।

জানা যায়, বশির মিয়ার একই গোষ্ঠির আপন চাচাতো ভাই আব্দুল মালেক শামীম। তারপরও আব্দুল মালেক শামীম সকলের মঙ্গলের জন্য একে-অন্যের সাথে ঝগড়া বিবাদ না করে সমাধানের চেষ্টা করলেও বশির মিয়া কোনভাবে মানতে রাজি হননি ।

প্রভাবশালী বশির মিয়ার এমন আচরণে নিরীহ আব্দুল মালেক শামীমসহ অন্যরা বিষয়টি দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করেন। বিষয়টি মিমাংসার জন্য থানায় বশির মিয়া ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের ডাকেন। কিন্তু সেখানেও আসেননি বশির মিয়া এবং রাস্তাটিও ছাড়বেন না বলে জানান। বাধ্য হয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণ সুরমা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুক্তভোগী মো. আব্দুল মালেক শামীম।

এসময় জিডিতে মন্দিরখলা গ্রামের বশির মিয়া ও তার ছেলে শামছুল ইসলাম মুক্তা, মৃত আনা মিয়ার ছেলে নাজমুল হক কাওসার, মৃত সার মিয়ার ছেলে ইকবাল মাহবুব তারেকসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনের নাম বিবাদি হিসেবে উল্লেখ করেন আব্দুল মালেক শামীম।

ভুক্তভোগীরা জানান, বশির মিয়ার বাধা প্রদানের কারণে এ রাস্তা দিয়ে কোনো ধরণের যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এমনকি মোটরসাইকেল বা সিএনজি চলাচলেও বাধা দেন বশির মিয়া ও তার পরিবার পরিবার। এর আগে শামীমের বাবা  অসুস্থ হলে তাকে কোলে করে মেইন রোড পর্যন্ত নিতে হয়েছে।

পরে আব্দুল মালেক শামীমের বাবা আব্দুল মছব্বির মারা যান । সে সময় বশির মিয়ার বাড়ির সামনের বরই গাছের জন্য মরদেহ নিয়ে যেতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বশির মিয়া কবরস্থানের জমি নিয়েও প্রতিবেশীদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা জানান।

এবিষয়ে বশির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডায়ালসিলেটকে জানান, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করছে শামীম । তারা যে জিডি করেছে থানায়, তাদের কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। সে আমাদের গোষ্ঠির তবে সে যদি কাগজপত্রে রাস্তার বা তার জায়গা দেখাইতে পারে তাহলে  আমি কেন আমার আব্বা কবর থেকে উঠে তাকে রাস্তা দেবে।  ঘরের মহিলারা অনেক সময় যেখানে গোসল করতে যায় সেখানে তারা সিসি ক্যামেরা বসাইয়া রাখছে।

সে এলাকার কয়েকজন লোকদের দিয়া পঞ্চায়েত বসানোর চেষ্টা করছে আমি মানি নাই যদি উপযুক্ত ও সঠিক মানুষ এসে বৈঠকে বসানোর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমি বৈঠকে উপস্থিত থাকিবো। আর এটা আমার মৌরসী জায়গা। তারা যে সকল অভিযোগ করেছে সেগুলো তারা প্রমাণ করতে পারবে না।’

এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, জিডির তদন্ত কর্মকর্তা দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। তাদেরকে সমঝোতার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার চেষ্টা চলছে।

 

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ