বাহাসের পর ঐক্যের সুর ২ কেন্দ্রীয় নেতার

প্রকাশিত: ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১

বাহাসের পর ঐক্যের সুর ২ কেন্দ্রীয় নেতার

ডায়ালসিলেট ডেস্ক::আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তীব্র বাহাসের পর অবশেষে দুই কেন্দ্রীয় নেতার মুখে শোনা যাচ্ছে ঐক্যের সুর। দীর্ঘদিন ধরে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারীরা মাদারীপুরে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে।

দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে এক টেবিলে বসতে যাচ্ছেন। শিগগিরই ওই জেলার সব কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে ঢাকায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

শাজাহান খান নিজেই এই বৈঠকের উদ্যোগ নেবেন। অন্যদিকে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন বাহাউদ্দিন নাছিম।

জানতে চাইলে শাজাহান খান শুক্রবার বিকালে বলেন, কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নেত্রী (শেখ হাসিনা) সবাইকে নিয়ে কাজ করতে বলেছেন আমাকে। সবাইকে ডেকে কথা বলতে বলেছেন। আমি বলেছি-আপনি যখন নির্দেশ দিয়েছেন ইনশাআল্লাহ আমি সেটা করব।

তিনি আরও বলেন, আমি বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষ করে এলাকায় (মাদারীপুর) এসেছি। ঢাকায় ফিরে আমি সবাইকে ডেকে নিয়ে বসব। সেখানে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করব। আমার প্রত্যাশা-আমরা যারা আছি, সবাই একমত হয়ে মাদারীপুরে দলকে গুছিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারব। কারণ আমাদের দল একটাই। আমাদের আদর্শ ও দর্শনও একটাই-বঙ্গবন্ধু। আমাদের নেত্রী একজন-শেখ হাসিনা। কাজেই এখানে বিভক্তির কোনো সুযোগ নেই।

অপরদিকে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  বলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্তই শিরোধার্য। তার সিদ্ধান্তের বাইরে কখনো যাইনি। যাওয়ার অবকাশও নেই।

তিনি আরও বলেন, সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার ব্যাপারে আমি সব সময়ই আন্তরিক। তবে আমার সব সময়ের চাওয়া-দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হোক, তাদের স্মরণ করা হোক। কেউ মারা গেলে তাকে প্রাপ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো হোক। যে সারাজীবন দলের জন্য রাজনীতি করে গেছেন, তাকে এবং তার পরিবারকে এটা দিতেই হবে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতাকর্মীরা এটাই চায়। তারা তো অর্থ-প্রতিপত্তি চায় না।

করোনার কারণে প্রায় এক বছর পর বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, মাদারীপুরে অনেকজন কেন্দ্রীয় নেতার জেলা। এখানেই কোন্দল বেশি।

এদিকে ওই সভাতেই দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মধ্যে তীব্র বাহাস হয়। সভায় মাদারীপুর জেলা প্রসঙ্গে আলোচনায় বাহাসে জড়ান জেলার আরেক নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে মিলেমিশে সাংগঠনিক কাজ করার নির্দেশ দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলে দুই নেতার কথায়। জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সবাই আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে রয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক জাসদ বা জাসদ আওয়ামী লীগপন্থি নেতারা রয়েছেন শাজাহান খানের সঙ্গে।

এলাকায় গেলে বাহাউদ্দিন নাছিম পুরান বাজারের নেতা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসেন। সেখানে দলের সব সহযোগী সংগঠনেরও অফিস। অন্যদিকে শাজাহান খান তার নিজের বাড়ির সামনে নিজের পরিবহণের একটি অফিসে বসেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো কর্মসূচিতেও শাজাহান খানকে দেখা যায় না।

শাজাহান খান, বাহাউদ্দিন নাছিম ও ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এই জেলার আরও চারজন নেতা রয়েছে।

শাজাহান খান ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন। এরপর তিনি নিজেই জেলার সব কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন করে কথা বলবেন। তাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করে বৈঠকের তারিখ চূড়ান্ত করবেন।

এদিকে শাজাহান খান ডাকলে সভায় যাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওই জেলার এক কেন্দ্রীয় নেতা  বলেন, আমাদের নেত্রী তাকে আগে আওয়ামী লীগ হতে বলেছেন। আমাদেরও চাওয়া-তিনি আওয়ামী লীগার হবেন। আমাদের ডাকার আগে তাকে আওয়ামী লীগার হতে হবে। এরপর আমাদের ডাকলে আমরা অবশ্যই যাব। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।

বাহাসের পর মাদারীপুরে আ.লীগের দুই নেতা :  আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বাহাসের পর আওয়ামী লীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা মাদারীপুরে এসেছেন। শাজাহান খান এমপি বৃহস্পতিবার এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম শুক্রবার মাদারীপুরে আসেন। সেখানে দুই নেতা আলাদা আলাদা কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে দুই নেতার কেউই মাদারীপুরের রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

শাজাহান খান বিকাল চারটায় মাদারীপুর জেলার সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন নিয়ে অনুষ্ঠিত গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি মাদারীপুর আচমত আলী খান স্টেডিয়ামে মাদারীপুর জেলা ফুটবল লীগের ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথি হিসাবে পুরস্কার বিতরণ করেন। উভয় অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম তার ছোট ভাই জালালউদ্দিন ইয়ামিনের উদ্যোগে তার নিজস্ব জমিতে তৈরি মাদরাসা ও এতিমখানা মাঠে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিতব্য মসজিদের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজাদ মুন্সী, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দেসহ জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares