আপত্তিকর অবস্থায় ধরা খেলেন ওসি প্রদীপ ও এক মহিলা ক্লোজড : ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ১০:১২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২১

আপত্তিকর অবস্থায় ধরা খেলেন ওসি প্রদীপ ও এক মহিলা ক্লোজড : ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন

 

ডায়ালসিলেট :: ছুটিতে থাকা নারী কনস্টেবলকে ডেকে এনে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ালেন সিলেটের কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাস। অন্যান্য সহকর্মীরা তাদের আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। অবশ্য পরে ছেড়েও দিয়েছেন। এ ব্যাপারে রাতেই সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) খোকন চন্দ্র দাস উর্ধ্বতনদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে ওই কোর্ট ইন্সপেক্টরকে ক্লোজড করা হয়েছে।

 

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল আদালতপাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাস। দাপুটে এক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সবার কাছে পরিচিত। তার অফিসেই কাজ করেন এক নারী কনস্টেবল। ওই নারী কনস্টেবল বর্তমানে ৬ দিনের ছুটিতে রয়েছেন। বুধবার রাত ৮টার পর ওই নারী কনস্টেবল বাইরে থেকে আদালত পাড়ায় ওসি প্রদীপের কক্ষে আসেন। এ সময় প্রদীপের অন্যান্য সহকর্মীরা নারী কনস্টেবলকে দেখেন। এক পর্যায়ে ওই নারী কনস্টেবল কক্ষে যাওয়ার পর ওসি প্রদীপ তার কক্ষের লাইট অফ করে দেন।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লাইট অফ করে দেয়ার পর তাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের কাছেও বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়। তার কক্ষে আসা ওই মহিলা কনস্টেবল ছিল অবিবাহিত। একপর্যায়ে উপস্থিত পুলিশ সদস্য ও লোকজন ওসি প্রদীপের অফিস কক্ষে গিয়ে তাদের অনৈতিক অবস্থায় ধরে ফেলে। এ সময় ওসি প্রদীপ ও মহিলাকে কিছু সময় অবরুদ্ধ করে রাখলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়।

 

উপস্থিত এক পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, রাত ৯টার দিকে কোর্ট ইন্সপেক্টরের কক্ষের দরজা খোলা এবং ভেতরে আলো নেভানো দেখে অন্য পুলিশ সদস্যরা সেই কক্ষে ঢোকেন। এ সময় আলো জ্বালালে দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। খবর পেয়ে আদালত পুলিশের দায়িত্বে থাকা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) আদালত এলাকায় যান। উর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে রাতেই একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে ওসি প্রদীপকে ক্লোজড করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। আদালত পুলিশের এসি (প্রসিকিউশন) খোকন চন্দ্র দাস গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান, ওই নারী কনস্টেবল ওসি প্রদীপের কক্ষেই কাজ করেন। তবে, বর্তমানে তিনি ৬ দিনের ছুটিতে রয়েছেন। রাতে ওই নারী কনস্টেবল ওসি প্রদীপের কক্ষে আসেন।

 

ঘটনার বিষয়টি জানার পর তিনি এ ব্যাপারে রাতেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। তিনি জানান, ছুটিতে থাকা নারী কনস্টেবল ওসি প্রদীপের কক্ষে আসার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে ওসি প্রদীপকে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়া, কেন ওই নারী কনস্টেবল ওসির কক্ষে আসবেন, তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক রয়েছে কী না- সার্বিক বিষয়ে পুলিশির তদন্ত চলছে।

 

সিলেট মেট্রোপলিশ পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) এবিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের ডায়ালসিলেটকে জানান , এ বিষয়ে  ওসি প্রদীপ ও ওই মহিলা কনস্টেবলকে ক্লোজড করা হয়েছে এবং মহিলা কনস্টেবল তার ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।  উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ), অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর প্রশাসন), ও সহকারী পুলিশ কমিশনার সিলেট কোতোয়ালী থানা। তাদের আগামী ১০দিনের মধ্যে সার্বিক বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে ওসি প্রদীপ ও মহিলা কনস্টেবল দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে নিয়ে সিলেটের আদালত পাড়ায় অভিযোগের শেষ নেই। সে দাপট দেখিয়ে চলতো। তার কর্মকাণ্ডের কারণে আদালতে বিচার প্রার্থীরা অনেক সময় হয়রানির শিকার হতেন। এ নিয়ে আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানালে তাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা হয়। এছাড়া, সহকর্মী পুলিশ সদস্য ও নারী কনস্টেবলের অনেকে তার আচরণে অতিষ্ঠ ছিলেন। ওসি প্রদীপের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুষ্টু  তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন তারা।

 

ডায়ালসিলেট এম/

 

0Shares