প্রকাশিত: ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
ডায়ালসিলেট ডেস্ক::নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভোট নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। জয়ের জন্য প্রতিনিয়ত নিজেদের মতো করে কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নাকি দলীয় প্রতীক, নারী নাকি নতুন ভোটার-কারা নির্ধারণ করবেন নগরপিতা-শহরজুড়ে এখন এমন আলোচনাই সবার মধ্যে। তবে প্রায় পৌনে তিন লাখ নতুন ও নারী ভোটার জয়-পরাজয়ে মূল ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিন শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে আরও কিছু ফ্যাক্টর কাজ করবে। দলীয় প্রতীক বা নিজস্ব ভোটারদের সঙ্গে ব্যক্তি ইমেজ তো থাকবেই। এছাড়া আঞ্চলিকতা, জাতীয় পার্টি এবং ভাড়াটে ভোটারের পাশাপাশি মেয়র পদে জয়ের ক্ষেত্রে ওসমান পরিবারও ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন তারা। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর যিনি এসব ভোট কবজা করতে পারবেন, তিনিই হাসবেন বিজয়ের হাসি। আর ভোটারদের প্রত্যাশা-ভয়হীন পরিবেশে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে চান তারা। যেখানে ঘটবে তাদের মতের প্রতিফলন। সুখে-দুঃখে পাশে পাবেন নির্বাচিতদের। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে এবার ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এ সিটিতে ভোট ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। সে হিসাবে এবার নতুন ভোটার ৪২ হাজার ৪২৬, যা মোট ভোটারের প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। প্রার্থীরা বিশ্বাস করেন, নতুনদের আছে ফলাফল বদলে দেওয়ার ক্ষমতা। তাই নতুন ভোটারদের মন জয়ে দুই প্রার্থীই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। শহরের কিল্লারপুল এলাকায় বেশ কয়েকজন তরুণ আড্ডা দিচ্ছিলেন। নাসিক নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে নানা আলোচনা হয়। তাদের অনেকেই এবার নতুন ভোটার হয়েছেন। প্রথমবারের মতো ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন তারা। জানালেন নানা উচ্ছ্বাস। জীবনের প্রথম ভোট তারা একটু হিসাব করেই দেবেন। শুধু আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে চান না তারা। বদলাতে আর দিনবদলের সারথি হতেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। অপরাধ ও দূষণমুক্ত মানবিক নারায়ণগঞ্জ যিনি গড়তে পারবেন, তাকে বেছে নেওয়ার কথা জানান এ তরুণরা। সেই আড্ডায় ছিলেন দেওভোগের বাসিন্দা শিক্ষার্থী তাহমিদ তন্ময়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, তরুণ প্রজন্মের মূল চাওয়া মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত নারায়ণগঞ্জ। যানজটমুক্ত সবুজ নগর। তাছাড়া বর্তমান সমাজে কিশোর গ্যাং বলে নতুন একটা কালচার তৈরি হয়েছে। এ শহরেও রয়েছে একাধিক কিশোর গ্যাং। ওরা নানা অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়ছে। যিনি নতুন মেয়র হবেন, তাকে এসব নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে। মানবিক সমাজ গঠনে যিনি কাজ করবেন, নতুন প্রজন্ম তার দিকেই ঝুঁকবে। সবকিছু হিসাব করে যাকে যোগ্য মনে করব, তাকেই জীবনের প্রথম ভোট দিতে চাই। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে যাতে ভোট দিতে পারি, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান তিনি। নতুন ভোটারদের পাশাপাশি নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন নারী ভোটাররা। এবার মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই নারী। নারী ভোটাররা যার দিকে ঝুঁকবেন, জয়ের পাল্লা সেদিকেই ভারী হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, এবারের ভোটে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে নারী ভোটার বিশাল ফ্যাক্টর বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি এবার প্রায় অর্ধলাখ নতুন ভোটার। তারাও প্রার্থীদের হার-জিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া নাসিক নির্বাচনে বরাবরই ওসমান পরিবারের গুরুত্ব রয়েছে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। নির্বাচনে না থাকলেও ভোটের আলোচনায় ওসমান পরিবার। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের গণসংযোগে ঘুরেফিরে আলোচনায় ওসমান পরিবার। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ২ হেভিওয়েট প্রার্থী যতটা না নিজেদের নিয়ে প্রভাব ফেলতে পারছেন, তার চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলছেন শামীম ওসমানকে নিয়ে কথা বলে। বিশেষ করে নৌকার জয় অথবা পরাজয়ে শামীম ওসমানের ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা উঠেছে। এবার ভোটের মাঠে অন্যতম ফ্যাক্টর ওসমান পরিবার। তারা যেদিকে যাবে, সেই প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছেন স্থানীয়দের অনেকেই। এদিকে নানা নাটকীয়তার পর শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিলেও তাকে নিয়ে সন্দেহ দূর হচ্ছে না। আইভী নিজেও এখনো তার প্রতিশ্রুতিকে আস্থায় নিতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নানা হিসাব করে শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে থাকার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আইভীর জন্য কতটা সক্রিয় হবেন, সেই প্রশ্ন রয়েই গেছে। ওসমান পরিবার সক্রিয়ভাবে আইভীর জন্য মাঠে থাকলে নৌকার বিজয় অনেকটা সহজ হবে। কিন্তু কোনো কারণে ওসমান পরিবার তৈমুরের দিকে ঝুঁকে পড়লে আইভীকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। তাই শামীম ওসমানের ভূমিকা কী হবে, তা দেখার জন্য ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি বলেন, ওসমান পরিবার জেলার রাজনীতিতে একটা বিশাল শক্তি। তাদের অনেক অনুসারী রয়েছেন-এ কারণে তারা ভোটে ফ্যাক্টর। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে আঞ্চলিকতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নারায়ণগঞ্জে আঞ্চলিকতার হিসাবে মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুরের ভোটার বেশি। এর বাইরে জাতীয় পার্টির ভোটও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। জাতীয় পার্টি স্থানীয়ভাবে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি। নাসিকে জাতীয় পার্টির প্রায় ২০ হাজার ভোট রয়েছে। তাই মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে জাতীয় পার্টির ভোটাররাও অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারেন। নাসিক নির্বাচনে ভাসমান হকার ও বস্তিবাসীর ভোটও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কাকে ভোট দেবেন, এ নিয়ে তাদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব। চাষাঢ়া মোড়ের একাধিক হকারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, হকারদের একটা অংশের ভোট আইভীর দিকে যেতে পারে। কারণ, মেয়র থাকাকালীন তিনি হকারদের পুনর্বাসনে একটি মার্কেট করে দিয়েছেন। সেখানে অনেক হকার দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। আইভীর প্রতি এসব হকারের কিছুটা সহানুভূতি রয়েছে। তবে অল্পসংখ্যক হকারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বড় একটি অংশ দোকান বরাদ্দ পায়নি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কসহ কয়েকটি রাস্তায় হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা আইভীর প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ। তাদের ভোটের একটি অংশ তৈমুরের দিকে যেতে পারে। শহরের কয়েকটি বস্তি উচ্ছেদ করায় তারা সাবেক মেয়রের প্রতি ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল যুগান্তরকে বলেন, নাসিক নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ইমেজের পাশাপাশি দলীয় প্রতীক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ভোটার আছে যারা প্রার্থীকে অপছন্দ করলেও প্রতীককে পছন্দ করে ভোট দেবেন। তিনি বলেন, এছাড়া নতুন প্রজন্ম ও নারী ভোটাররাও ভোটে অন্যতম ফ্যাক্টর। তারা নানা হিসাব করেই ভোট দেবেন। কে জয়ী হলে তরুণ প্রজন্ম ও নারীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা তারা ভালো করেই বুঝেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমি গতানুগতিক নিয়ম থেকে বের হয়ে এসে মানুষের কল্যাণে কাজ করি। এখনকার তরুণরা অনেক স্মার্ট এবং খুবই ট্যালেন্ট, তারা কিন্তু এগুলো জানে, দেখে এবং বুঝে। বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। হকারদের জন্য আলাদা মার্কেট করে দিয়েছি। বন্দরের উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। শহরের প্রতিটি রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। নৌকা যে উন্নয়নের মার্কা, সেটা নারায়ণগঞ্জবাসী অনুভব করতে পেরেছে। তাই অতীতের মতো ১৬ জানুয়ারির ভোটেও নারায়ণগঞ্জবাসী পুনরায় আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন। তিনি বলেন, এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে মহানগরের ভোটাররা ভুল করবেন বলে আমার মনে হয় না। আবার নির্বাচিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরকে একটি আধুনিক শহরে পরিণত করতে চাই। আশা করি, ভোটাররা আমাকে সেই সুযোগ দেবেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসী পরিবর্তন চান। এবারের নির্বাচনে ভোটাররা ১৮ বছরের পুঞ্জীভূত বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। আমি আশা করি, দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ভোট হাতি মার্কায় পড়বে। বিশেষ করে এবার যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারা নতুন কিছুর প্রত্যাশায় আমাকে ভোট দেবেন। বর্তমান মেয়র শহরের একাধিক বস্তি উচ্ছেদ করে তাদের বাস্তুহারা করেছেন। তারা কঠিন জীবনযাপন করছেন। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তাদের নানা ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে যারা এখানে বসবাস করেন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি নতুন বাড়ি করতে গেলে নানাজনকে চাঁদা দিতে হয়। এসব থেকে মুক্তি পেতে সবাই হাতি মার্কায় ভোট দেবেন বলে আশা করি।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech