১৮ বছরেও এমন বন্যা হয়নি

প্রকাশিত: ১০:০৯ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২২

১৮ বছরেও এমন বন্যা হয়নি

১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে এমন পানি হয়েছিল। সিলেটে এবারের বন্যা পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিল সেই স্মৃতি। গত ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে। উজানে বৃষ্টি না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
এমন মন্তব্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশার। পাউবোর এই কর্মকর্তার মন্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সিলেটে এবারের বন্যার ভয়াবহতা।

থেমে থেমে পানি বেড়ে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাই এখন ভাসছে বন্যায়। জেলা প্রশাসনের হিসাবে সিলেটের ৬টি উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পানি উঠে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকায়ও।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে সিলেটেও। ফলে দ্রুত বাড়ছে নদনদীর পানি।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি অমলসীদ ও কানাইঘাট পয়েন্টে প্রায় ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট সদরে ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানির তোড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে ২০টি নদীরক্ষা বাঁধ। এ ছাড়া কুশিয়ারা, সারি ও গোয়াইন নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘পানি এত বেশি আসছে যে আমাদের বাঁধগুলো উপচে পড়ছে। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি অতিরিক্ত থাকায় আমরা সংস্কারকাজও করতে পারছি না।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

মঙ্গলবার দিনভর সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মিনিটেই বাড়ছে পানি। নগরের অন্তত ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে এসব এলাকার সড়ক। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসেও পানি উঠে গেছে।

দুপুরে নগরের তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এই সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি জমে গেছে। পানির কারণে সড়কজুড়ে ছিল দীর্ঘ যানজট। পানি ঢুকে কারও কারও গাড়িতে দেখা দিয়েছে ত্রুটি। সড়কের মাঝখানে নিজের সিএনজি অটোরিকশাটিকে ধাক্কাধাক্কি করছিলেন চালক মইনুল হক। তিনি বলেন, ‘সায়লেন্সারে পানি ঢুকে গেছে। এখন আর স্টার্ট হচ্ছে না। ধাক্কা ছাড়া উপায় নাই।’
সোবহানীঘাট এলাকার গৃহিণী আমিনা বেগম বলেন, ‘ঘরের ভেতর পানি ঢুকেছে গতকালই। তখন থেকে বিছানার ওপর আছি। এখন মনে হচ্ছে, বিছানায়ও পানি উঠে যাবে।’
এ অবস্থায় ঘরে রান্না বন্ধ, এমনকি বাথরুমও ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানান আমিনা।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকেই সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এখনও তা চলমান। বুধবার থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। আর এখন বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

0Shares