কাঠগড়ায় এমএ মান্নানসহ তিন মন্ত্রী

প্রকাশিত: ১:৫০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২২

কাঠগড়ায় এমএ মান্নানসহ তিন মন্ত্রী

জেলা পরিষদ নির্বাচন

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: তিনজন মন্ত্রীর নিষ্ক্রিয়তাই সুনামগঞ্জ, নরসিংদী ও রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের অন্যতম কারণ- এমনটাই মনে করছেন দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা। এই তিন মন্ত্রী হলেন- পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সোমবার জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার প্রাথমিক মূল্যায়নে এমন বিশ্নেষণ করা হয়েছে। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
নেতাদের প্রাথমিক মূল্যায়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোটার কেনার অশুভ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি গৃহদাহ এবং কয়েকজন স্থানীয় এমপির নেতিবাচক ভূমিকার কথাও দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে কয়েকটি জেলায় দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার কথা রয়েছে।
সুনামগঞ্জে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে দুষছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। পরিকল্পনামন্ত্রী সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি। এ আসনের জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৮০ ভোট পেয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী পেয়েছেন ১৪৪ ভোট, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ৬৪। এই জেলার অন্য ১০টি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল খুব কাছাকাছি। এই জেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাত্র ৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।
সে ক্ষেত্রে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ভোটের ব্যবধান কাছাকাছি থাকলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয় পেতেন বলে মনে করছেন নেতারা। তাঁদের দৃষ্টিতে পরিকল্পনামন্ত্রীর কার্যকর ভূমিকা থাকলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যেত।
তাছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কোনো কোনো নেতা। আজিজুস সামাদ আজাদ ডনের বাড়িও জগন্নাথপুরে। তিনি নির্বাচনে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচনে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি গত নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিলেন। এবার ইমনের বড় ভাই অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন ছিলেন দলীয় প্রার্থী। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। কিন্তু আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা তার পক্ষে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রচার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানও।
নরসিংদীতে দলীয় প্রার্থী আবদুল মতিন ভূঁইয়ার পরাজয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদকে বড় করে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচন করা হলেও গৃহদাহ কমেনি। জেলার এমপিরা বহুধা ধারায় বিভক্ত হয়ে আছেন। এরই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। ফলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মতিন ভূঁইয়া নির্বাচনে হেরে গেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছেন নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মনির হোসেন ভূঁইয়া।
শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের নির্বাচনী এলাকা নরসিংদী-৪ আসনের আওতাধীন মনোহরদী ও বেলাব উপজেলায়ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয় পাননি। এ বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ইতিবাচক হিসেবে নেওয়া হচ্ছে না। মনোহরদীতে বিদ্রোহী প্রার্থী মনির হোসেন ভূঁইয়া ১১০ ভোট পেলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল মতিন ভূঁইয়া পেয়েছেন মাত্র ৫৪ ভোট। বেলাবতে বিদ্রোহী প্রার্থী পেয়েছেন ৬৩ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৪১টি।
ঠিক একই চিত্র রংপুরে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৪ আসনের আওতাধীন কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হেরে গেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। কাউনিয়ায় দলীয় প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আহমেদ পেয়েছেন ৪৬ ভোট। বিদ্রোহী প্রার্থী দলের মহানগর শাখার উপদেষ্টা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলুর ভোটসংখ্যা ৪৮। পীরগাছায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৫০ এবং বিদ্রোহী প্রার্থী পেয়েছেন ৭০ ভোট।
-সূত্র : সমকাল

0Shares