ভালো নেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে খাবার পানি ও আবাসস্থল সংকটে হুমকির মুখে ৫ শতাধিক জাতের বন্যপ্রাণী

প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৩

ভালো নেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে খাবার পানি ও আবাসস্থল সংকটে হুমকির মুখে ৫ শতাধিক জাতের বন্যপ্রাণী

ডায়াল সিলেট ডেস্ক ॥ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণীর পর্যাপ্ত খাদ্য পানি ও আবাসস্থলের অভাব চরমভাবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে। বনাঞ্চলের বেড়েছে ৫শতাদিক বিভিন্ন জাতের বন্যপ্রাণীর বিচরণ। প্রতিদিনই ট্রেন লাইন ও রাস্তায় গাড়ির চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে মারা যাচ্ছে অনেক বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণি। ছুটিসহ উৎসবের দিনগুলিতে লাউয়াছড়ায় রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের সমাগমে মিশ্র চিরহরিৎ এই বনকে জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণির বিড়ম্বনার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিউজ টুয়েন্টি ফোর টেলিভিশনের ক্যামেরায় পর্যটক ও যানবাহনের হুড়োহুড়ি,শুকনো মৌসুমে প্রাকৃতিক খাবার পানি ও নিরাপদ বাসস্থান সংকটসহ সব মিলিয়ে বনের জীববৈচিত্র্যর দুর্বীসহ জীবন যাপন।
১২৫০হেক্টরের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন্ত এক সংগ্রহশালা। উদ্যানের পুরনো গাছ গুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বনের গাছ কর্তন,মাগুরছড়া গ্যাস কূপ খননসহ মাত্রারিক্ত দর্শনার্থীর বিচরণে চরম অস্থিত্ব সংকটে ৫শতাদিক বন্যপ্রাণীকুল।
১৯৯৬সালে লাউয়াছড়াকে উদ্যান ঘোষণার পর থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ফলে বন্যপ্রাণীর খাবার ও আবাসস্থল বিনষ্ট হচ্ছে। দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংমিশ্রণে উদ্যান থেকেও প্রাচীন গাছগাছালি উজাড় হওয়ায় হুমকির মুখে বন্যপ্রাণী। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে কয়েক মাস খাবারের সন্ধানে জঙ্গলের দূর্লভ প্রাণীগুলো আশপাশের জনপদে ছুটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের হাতে ধরা ও ট্রেন লাইনে/রাস্তায় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে আহত/নিহত হচ্ছে। শুধু তাই নয় মাত্রারিক্ত পর্যটকের সমাগম,মাইক,হাল্লা-চিৎকার ও যানবাহনের শব্দে বনের শান্তিপ্রিয় প্রানীগুলোর আতংক বেড়েই চলেছে।
শুকনো মৌসুমে বনের ছড়াগুলোতে পানি না থাকার কারণে বন্যপ্রাণির তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পানির অভাবও চরমভাবে দেখা দিচ্ছে। খাবার ও আবাসস্থল সংকটে ভুগছে হরিন,উল্লুক,চশমা হনুমান,ছোট লেজি ও লজ্জাবতি বানর,ত্বকক,সজারু,অজগর,কুবরাসহ ৫শতাধিক বিরল প্রজাতির প্রাণি। পানি সংকট ও পর্যটকদের অত্যাচারে উদ্যানের অতিষ্ঠ প্রাণিক‚ল রক্ষায় জররীভাবে উদ্যেগ নিতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন-উদ্যানের ভেতর দিয়ে রেল,সড়কপথ ও বৈদ্যুতিক লাইন সরানোর দাবি দীর্ঘদিনের থাকলেও আজ ও ব্যবস্থা নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার সাধারন মানুষের দাবী একটাই বন্যপ্রানীদের জীকন যাপনে সটিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার।
মনিরুজ্জামান, প্রানী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ বলেন- আমরা বনের গ্রহীন ঘুরে দেখলাম পর্যটকরা চেচামেছি, বণ্যপ্রানীকে বিরক্ত করছেন। সেটি বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে বণ্যপ্রানীর নিরাপদ আশ্রয়স্থলে ছড়াগুলো শুকনো- নেই পর্যাপ্ত পানি ব্যাবস্থা। পানির জন্য বণ্যপ্রানীগুলো বন ছেড়ে বাহিরে ছুটাছুটি করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে। সার্বিক দিক বিচেনা করে সরকারের জরুরী ভিত্তিতে এগ্রিয়ে আসা দরকার।
এব্যাপারে মো. সহিদুল ইসলাম,রেঞ্জ কর্মকর্তা, লাউয়াছড়া বন, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার বলেন- জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বনের মাঝ দিয়ে যানবাহন চলাচলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ,সংরক্ষিত বনে অধিক পরিমাণে পর্যটক বন্যপ্রাণির অবাধ চলাচল ও আবাসস্থলে বিড়ম্বনা বন্ধ এবং পর্যটকদের সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন প্রাণীর সুরক্ষা দিতে পর্যাপ্ত পানি ব্যবস্থা নেই। গত বছরে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে খাবার পানি সংকট নিরসনে ছড়া বা পুকুর খনন করা হলে রক্ষা পাবে বণ্যপ্রানীরা।
এব্যাপারে মহসিন পারভেজ, সভাপতি, পরিবেশবাদী সাংবাদিক ফোরাম, মৌলভীবাজার বলেন- করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর উদ্যান বন্ধ হওয়ায় লাউয়াছড়া বনে স্বস্বি ফিরে। উদ্যান খুলে দেয়ার পর থেকে আবারও পূর্বের মতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে প্রাণীকুল। আবাসস্থল ও খাবার সংকটের কারণে বর্তমানে রাস্তার আশেপাশে,গ্রামীন বাড়িঘরে ও ঝোপজঙ্গলে বানরসহ নানা ধরণের বন্যপ্রানীর বিচরন দেখা দিয়েছে। সরকার দ্রæত গতিতে বিষয়টি নজরে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবেন আশা রাখি।
এনিয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাড়, মৌলভীবাজার বলেন- লোকালয়ে বন্যপ্রাণী বাহিরে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,আসলে শিয়াল,বনবিড়াল এগুলো সাধারণত বাড়িঘরের আশেপাশে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। গাছগাছালি,বনজঙ্গল ও খাবারের সন্ধ্যানে বানরসহ বিভিন্ন ধরণের প্রাণী এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করে। তবে বন্যপ্রাণীর খাবার,আবাসস্থল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের চেষ্টার কোন ঘাটতি নেই।হুড়োহুড়ি ও পর্যটকের হাল্লা-চিৎকার এবং প্রাণীর অবাধ চলাচল,খাবার পানিসহ বাসস্থান সংকটের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে এগ্রিয়ে আসবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

0Shares