প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ৫, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক : আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পর্যটন, পাহাড়ি, বনাঞ্চল ও চা বাগান অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজারে প্রতিনিয়ত বৃক্ষ কাটা, গভীর বনাঞ্চলে অগ্নিসংযোগ করে রীতিমত উজার করা হচ্ছে পরিবেশ। জেলাজুড়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও বন ও পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা নিচ্ছেন না কোন জোরালো পদক্ষেপ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত মাধবকু- জলপ্রপাত, দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, বাইক্কা বিলসহ জেলাজুড়ে ৯২টি চা বাগান রয়েছে। এসব পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাজ না করা ও পর্যটকদের অসুবিধা নিয়ে ভেবে না দেখা ও বনে ধারাবাহিক আগুন লাগার ঘটনায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
সম্প্রতি জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার হামহাম জল প্রপাতের কাছাকাছি পাশের বাঁশবনে অগ্নিকান্ডে প্রায় আড়াই একর বনভূমি পুড়ে যায়। আগুনে পাশের বাঁশবাগানসহ গুল্মলতা ও উদ্ভিদগুলো একবারে পুড়ে ছাই হয়। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা বন বিটের গহীন বনে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বন কর্মকর্তারা জানান, পর্যটকদের ছুঁড়ে ফেলা জ্বলন্ত সিগারেট থেকে আগুন লাগতে পারে।
এদিকে, সম্প্রতি মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের পাতারিয়া বনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বনের প্রায় ৪০ হেক্টর এলাকার বৃক্ষরাজী ও শত শত বন্যপশু পুড়ে যায়। এই বনে লাগাতার প্রায় ৮দিন ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় দেশের পর্যটন শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ওই ঘটনায় স্থানীয়রা খোদ বন বিভাগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে তাদের দায়ী করেন।
আগুনের লেলিহান শিখায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কয়েক লাখ উদ্ভিদ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অজগর সাপ, চশমাপরা হনুমান, মায়া হরিণ, কচ্ছপ, বনরুই, সজারুসহ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রজাতির আবাসস্থল এবং বিরল কীটপতঙ্গ ও বেশ কিছু প্রজাতির বৃক্ষের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টের বড়লেখা রেঞ্জের সমনভাগ এলাকায় বনের আয়তন ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, স্থানীয় বন বিভাগ বনায়নের নামে অর্থ আত্মসাতের জন্য এই কাজ করছে। পরিবেশগতভাবে মিশ্র চিরহরিৎ সমনভাগ বনাঞ্চলের এ অংশটি ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের একটি অংশ এবং এটি ভারত-বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্তব্যাপী ছয়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যকার একটি।
এছাড়াও সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বন বিভাগের ছাত্র ডরমিটরি লেকের উত্তর–পশ্চিম ও হিড বাংলাদেশের পশ্চিমে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় বনাঞ্চলের বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। এদিকে, ২০২১ সালের এপ্রিলে লাউয়াছড়ায় পৃথক অগ্নিকান্ডে ৩ একর জায়গা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক পর্যটকেরা জানান, লাউয়াছড়া, হামহাম ও মাধবকুন্ডের পাথারিয়া বনে পৃথক আগুনের ঘটনা সাধারণ বিষয় নয়।
বাংলাদেশের এ সবুজ বনাঞ্চল ধ্বংস করে পর্যটকশুন্য করতে কেউ ঠান্ডা মাথায় কাজ করছে এবং বৃক্ষরাজি লুট করছে। তারা জানান, বনের প্রতি হেক্টরে সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকার বৃক্ষ পুড়েছে এমনটা যদি ধরা হয়, তাহলে পাথারিয়ার ৪০ হেক্টর, লাউয়াছড়ার ৩ হেক্টর ও হামহামের ৩ হেক্টরসহ মোট ৪৬ হেক্টর বনে ৯ কোটি ২০ লাখ টাকার বৃক্ষ পুড়েছে।
বাপা’র জাতীয় পরিষদ সদস্য আসম সালেহ সোহেল বলেন, বনাঞ্চলে ভরপুর মৌলভীবাজার জেলায় বৃক্ষ কর্তন, অগ্নিসংযোগসহ বন ধবংস করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা। এছাড়াও হাওর অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে ফিসারি তৈরি করা হচ্ছে। এটি প্রকৃতির জন্য বড় অভিশাপ। পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ মাঈদুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় কাটা, ইট ভাটা, পলিথিনসহ বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। গত বছর ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা করেছি।
মৌলভীবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোঃ জাহাঙ্গির আলম রোববার বিকেলে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, লাউয়াছড়ায় যখন আগুন লেগেছে তখন আমি মৌলভীবাজারে ছিলাম না। হামহাম ও পাথারিয়া ফরেষ্ট এলাকা আমাদের না। এটি সিলেট বন বিভাগের। তিনি বলেন, আমরা জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করি।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। পরিবেশ যারা নষ্ট করছে, খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া নেবো
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech