প্রকাশিত: ১০:৩৫ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট চা বাগানে গত দুই বছর ধরে জ্ঞানের আলো বিতরণ করে চলেছে ‘আলোর দিশারী পাঠাগার’। চা বাগানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষে ২০২১ সালের ১১ জুন যাত্রা শুরু হয় এ পাঠাগারের। ঐতিহ্যবাহি শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুদর্শন শীল এবং টিআইবি শ্রীমঙ্গল এর তৎকালীন এরিয়া কো-অর্ডিনেটর ও উন্নয়নকর্মী পারভেজ কৈরী এর নিরলস প্রচেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এবং কালিঘাট চা বাগানের সামাজিক সংগঠন ‘আলোর দিশারী’ এর সার্বিক সহযোগিতায় ‘আলোর দিশারী’ নামে এ পাঠাগারটির উদ্বোধন করা হয়।
যাত্রা শুরুলগ্নে ৫০ টি বই দিয়ে পাঠাগারটির শুরু হলেও বর্তমানে পাঠাগারটিতে সাড়ে চারশতাধিক বই রয়েছে। পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সংগঠন ও বইপ্রেমী মানুষজন সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন। বিভিন্ন সময় পাঠাগার পরিদর্শনে এসেছেন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরসহযোগিতায় আজ পাঠাগারটি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বই এর পাশাপাশি পাঠাগারে এখন যুক্ত হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিক। সাথে আরো যুক্ত হয়েছে একটি কম্পিউটার। হাটি হাটি পা পা করে আজ পাঠাগারের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে পাঠাগারের অন্যতম পৃষ্টপোষক এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরী বলেন, এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠার কারণেসমাজের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা এখন নিয়মিত বই পড়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার সুযোগও পাচ্ছেন এই পাঠাগারে। বর্তমানে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী মাববেতর জীবন অতিবাহিত করছেন। সাধারণ শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার সুফল এখনো এই চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আসে নাই। চা বাগানের শিক্ষার্থীরা এখনো চাকুরির পরীক্ষাগুলোতে বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে ভালো করতে না পারার কারনে তারা সরকারি চাকুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গাইডলাইন এর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিভাবে ভর্তি হতে হয় বা প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয়, ভতি পরীক্ষায় পড়ার জন্য বই এর অভাব এর কারনে চা বাগানের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ছে। এর মূল কারণ হলো যথেষ্ঠ প্রস্তুতি এবং বই পড়ার মতো চা বাগানে অনুকুল পরিবেশের অভাব।স্কুল কলেজের সিলেবাস ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোর জন্য বই কিনে লেখা পড়া করার মতো যতেষ্ঠ টাকা পয়সা তাদের নেই। এর জন্য প্রতিটি চা বাগানে দরকার একটি করে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সাহিত্য চর্চা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য চা শ্রমিক সন্তানরা নিজেদের গড়ে তুলতে পারবেন। অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভরতা চা বাগানের শিক্ষার্থীদের আচরণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বের করতে পারে একমাত্র পাঠাগার । মূলত এই উদ্দেশ্য নিয়েই পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো ২০২১ সালে।দুই বছরে পাঠাগারটির বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অর্জনও রয়েছে। আলোর দিশারী পাঠাগারে বই পড়ার সহযোগিতায় কালিঘাট চা বাগানের ছাত্র রিপন তাঁতী ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করেন এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন। আলোর দিশারী পাঠাগারে বই পড়ার সহযোগিতায় কালিঘাট চা বাগানে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় দুই জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়েছেন। আলোর দিশারী পাঠাগারে বই পড়ার সহযোগিতায় কালিঘাট চা বাগানের দুইজন শিক্ষার্থী অজয় তাঁতী এবং অসীম তাঁতী পাঠাগারে পড়াশোনা করে সিলেট ইনস্টিটিউটি অব হেলথ টেকনোলজিতে পড়াশোন করছেন।আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ১. চা বাগানের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা। ২. চা বাগানের গরীব ছাত্র ছাত্রীদের পাঠ্য বই এর অভাব পূরণ করা। ৩. চা বাগানের চাকুরী প্রত্যাশী ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুুতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। ৪. পরিশীলিত জীবন গঠনের লক্ষ্যে সমৃদ্ধশালী পাঠাগার স্থাপন ও জনগণের পাঠসেবা প্রদান। ৫. চা বাগানের মানুষের জন্য বই পড়ার মাধ্যমে সুস্থ্য অবসর বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা। ৬. বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে তরুণ সমাজকে মাদক ও বদঅভ্যাস ত্যাগে সহায়তা করা। ৭. পাঠ্য বই পড়ার পাশাপাশি চা বাগানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, বিজ্ঞান চিন্তা এবং প্রযুক্তিগত চিন্তার বিকাশ ঘটানো। ৮. চা বাগানের নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়া আন্দোলন বেগবান করা।তিনি বলেন, কোন প্রচেষ্টায় ক্ষুদ্র নয়। আমরা স্বপ্ন দেখি শ্রীমঙ্গলের কালিঘাটের মতো প্রতিটি চা বাগানেই একটি করে পাঠাগার হবে।এর জন্য দরকার শুধুমাত্র সমাজের সুধীজনদের একটু সহযোগিতা। পাঠাগারটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যারা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। পাঠাগারটিতে এখন শ্রীমঙ্গল শহর থেকেও শিক্ষার্থীরা পড়তে যাই। আলোর দিশারী পাঠাগারটি সত্যিই আজ আলো ছড়াচ্ছে। আজ প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শুভকামনা থাকলো পাঠাগারটির সকল পাঠকদের প্রতি। একই সাথে শুভকামনা থাকলো আলোর দিশারী সামাজিক সংগঠনের অন্যতম কর্নধার পরিতোষ ও মনোজসহ সকল সদস্যদের প্রতি। সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী চা শ্রমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানো এ পাঠাগারের সার্বিক উন্নয়নে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech