এক পাশে ভারত সীমান্ত অন্য পাশে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১:০০ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২৩

এক পাশে ভারত সীমান্ত অন্য পাশে বাংলাদেশ

মনজু বিজয় চৌধুরী॥  শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গা ঘেঁষে ৭নং রাজঘাট ইউনিয়নে টিলাটির অবস্থান। সমতল থেকে প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতার এ টিলার চূড়া থেকে সীমান্তের ওপারে ভারতের বাড়িঘর দেখা যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে সীমান্তের কাটাতারের পাশের হলুদাভ বৈদ্যুতিক বাতিগুলো ডিমলাইটের আলোর মতো আলোকিত করে হাজং টিলার পাদদেশ পর্যন্ত। সন্ধ্যায় পুরো চা বাগান অন্ধকারে নিমজ্জিত হলেও হাজং টিলার চূড়া মনে হবে দিবালোকের মতো পরিস্কার। হাজং টিলার চূড়া থেকে সকালের সূর্যোদয় এবং বিকেলের সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। এ টিলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন প্রতিনিয়তই। তিন পাশে ভারত সীমান্ত এক পাশে বাংলাদেশ। তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ এক পাহাড়ি টিলা। টিলাটি এতো উঁচু যে এ টিলার নিচে খাবার খেয়ে পায়ে হেটে অনেকটা খাড়া টিলার চূড়ায় হেটে ওঠার পর পেটের ভাত যেন হজম হয়ে যায়। তাই স্থানীয়রা এটিকে ‘হজম টিলা’ নামে নামকরণ করেছেন। বলছিলাম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভারতীয় সীমান্তের নিকটবর্তী বিদ্যাবিল চা বাগানের ‘হাজং টিলা’র কথা। প্রকৃত অর্থে অপরূপ সৌন্দর্যময় টিলাটির নাম ‘হাজং টিলা’ হলেও স্থানীয় চা শ্রমিকদের কাছে এটির পরিচিতি ‘হজম টিলা’ নামে।
স্থানীয়রা জানান, ওই টিলার একপাশে নৃ-জাতিগোষ্ঠী হাজং-দের বসবাস। এক সময় এ টিলার চূড়ায়ও কিছু হাজং পরিবারের আবাস ছিল। এ কারনে টিলাটির নাম হাজং টিলা। টিলাটির পাদদেশে তিনপাশে সবুজাভ চা বাগান আর একপাশে গভীর অরণ্য। চা বাগানের মেঠোপথ পার হলেই ভারতের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া। সীমান্তের ওপারেও কিছু অংশে গভীর অরণ্য বাকিটা গ্রাম। বিদ্যাবিল চা বাগানের সর্পিল আকাবাকা সড়ক পেরিয়ে টিলাটির চূড়ায় উঠলে দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে তাকালে ভারতের গ্রামগুলোর বাড়িঘর এবং উত্তর দিকে তাকালে শ্রীমঙ্গল শহরের একাংশও দেখা যায়। হাজং টিলার চূড়ায় ওঠা অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রায় আড়াই কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা ঘুরে নুরি পাথরের পথ মাড়িয়ে ওঠতে হয় টিলাটির চূড়ায়।
হাজং টিলার সৌন্দর্য দিনের মধ্যে কয়েক দফা বদলায়। সকালের সূর্যোদয়ের সময় যে সৌন্দর্য বিকেলের সূর্যাস্তের সময় সে সৌন্দর্য বদলে আরেক রূপ নেয়। সন্ধ্যায় ও রাতে এর সৌন্দর্য যে মাদকতাময়। ভারতের কাটাতারের বেড়ার পাশের হলুদাভ বৈদ্যুতিক বাতি এলাকার পরিবেশকে করে মোহনীয়। এক কথায় একটি টিলায় একাধিক পরিবেশ প্রাপ্তি তনোমনে দোলা দেয়।
সমতল থেকে পায়ে হেটে এটির চূড়া পর্যন্ত ওঠতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা আর মোটরবাইকে ওঠতে সময় লাগে ১৫ মিনিটের মতো। তবে কষ্ট করে ওঠতে পারলে ভালোলাগার আবেশে তনোমন জুড়িয়ে যায়। এক নিমেষে দুর হয়ে যায় সকল কষ্ট। টিলার চূড়ায় ওঠে মনে হবে আকাশ ও মাটি এসে যেন দাঁড়িয়েছে এক কাতারে।
কীভাবে যাবেন : সুউচ্চ হাজং টিলায় যেতে হলে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ট্রেন, বাস, প্রাইভেট যানবাহনযোগে আসতে হবে প্রকৃতির রানী ও পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল শহরের রেল স্টেশনের দক্ষিণপাশের কালিঘাট রোড নামক স্থান থেকে মোটরসাইকেল বা জিপগাড়িতে করে ফিনলে চা কোম্পানির ফুলছড়া, কালিঘাট, বালিশিরা, ফুসকুড়ি, ডিনস্টন, রাজঘাট, বর্মাছড়া, উদনাছড়া চা বাগান পেরিয়ে পৌছতে হবে বিদ্যাবিল চা বাগানে। বাগানের ফ্যাক্টরির সামনে গেলেই দেখা পাওয়া যাবে শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে উচু হাজং টিলাটির। এছাড়া ডিনস্টন চা বাগান থেকে সোজা হরিণছড়া ও পুটিয়াছড়া চা বাগান পেরিয়ে নিরালা খাসিয়া পান পুঞ্জির পাশের রাস্তা দিয়েও যাওয়া যায় হাজং টিলায়। শহর থেকে যে পথেই যান না কেন দুরত্ব প্রায় সমান। শহরের কালিঘাট সড়ক থেকে জিপ গাড়িতে গেলে ভাড়া নেবে দেড় হাজার টাকার মতো।

মৌবাইল নম্বর -০১৭৩১৭২০৮৯৬
তারিখ- ১৪ জুন ২০২৩ইং

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ