গ্রিন ক্লিন ও স্মার্ট সিলেটের অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ৩:১২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২৩

গ্রিন ক্লিন ও স্মার্ট সিলেটের অঙ্গীকার

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ইশতেহার ঘোষণা

 

ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তার ২১ দফা ঘোষণা জুড়ে রয়েছে গ্রিন-ক্লিন ও স্মার্ট সিলেটের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার। শনিবার সিলেট মহানগরীর একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। এসময় দলীয় নেতাকর্মী ও সিলেটের গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

 

ইশতেহারের শুরুর দিকে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, সকল মুক্তিযোদ্ধা, ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদ ও জাতীয় চার নেতার প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

 

এরপর তিনি আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকেও সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তিনি সিলেটের প্রয়াত সকল নেতৃবৃন্দের প্রতিও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

 

আনোারুজ্জামান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরে সিলেট সিটি করপোরেশনের জন্য ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তার শুরুতেই আছে স্মার্ট নগরভবন. সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিলেট, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পিত নগরায়ন, নিরাপদ স্বাস্থ্যকর সিলেট, দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব সিলেট, নারীবান্ধব সিলেট, ব্যবসাবান্ধব সিলেট, পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা, সচল সিলেট, মানবিক উন্নয়নে সিলেট, প্রবাসীবান্ধব সিলেট, সম্প্রীতির সিলেট, পর্যটনবান্ধব সিলেট, সামাজিক অপরাধ নির্মূল, অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত সিলেট, নাগরিকবান্ধব সিলেট, তারুণ্যের সিলেট, প্রযুক্তির সিলেট, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেট মহানগরীর উন্নয়নের পাশাপাশি নগরবাসীর জীবনযাপনের মানোন্নয়নের মাধ্যমে একটি স্মার্ট ও আধুনিক মহানগরীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি ২১ জুন নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেছেন।

 

স্মার্ট নগরভবন : বর্তমান নগর ভবনের দিকে তাকালেই বুঝা যায় এর অবকাঠামোগত অবস্থা কী পরিমাণ শোচনীয়। ভবনটি অর্ধেক নির্মিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রধান ফটক বন্ধ, গাড়ির প্রবেশ এবং নির্গমন পথ অচিহ্নিত, সামনের খালি জায়গায় নির্মাণ যন্ত্রপাতি সম্বলিত গাড়ি পার্ক করে রাখা, বেইজমেন্টের র‌্যাম্পের ঢালেও গাড়ি রাখা- এই হলো অবস্থা। আর ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেতো দিশেহারা হবার অবস্থা- কোথায় কী আছে; কোন দিকে কোন দপ্তর, তার কোনো সুশৃঙ্খল বিন্যাস নেই। তথ্যকেন্দ্রও অকার্যকর। যে প্রতিষ্ঠান থেকে একটি মহানগরীর যাবতীয় নাগরিক সেবা পরিচালিত হয় সেই প্রতিষ্ঠান যদি অপর্যাপ্ত, অপূর্ণাঙ্গ ও অদক্ষ হয়, তখন জনগণকে কাক্সিক্ষত যুগোপযুগী সেবা প্রদান অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আমি প্রথমেই এই প্রতিষ্ঠানের উপরোক্ত সমস্যাগুলোসহ অন্যান্য বিরাজমান সমস্যা চিহ্নিত করে কার্যকর উদ্যোগী ভ‚মিকা গ্রহণ করবো। স্মার্ট সিলেটের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন স্মার্ট নগরভবন, অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরিপূর্ণ নাগরিক সেবা প্রদান নিশ্চিতে আমি উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

 

সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিলেট : আমরা জানি, লক্ষ্যহীন জীবন আর পরিকল্পনাহীন নগর সমার্থক। অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতি, বর্জ্য-অব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা, যানজট, অবৈধ হকার-সমস্যা, জলাধার-স্বল্পতা, নিরাপত্তাহীনতা- অর্থাৎ যাবতীয় সমস্যার মূলে রয়েছে সুষ্ঠু বাস্তববাদী ও পূর্ণাঙ্গ একটি মহাপরিকল্পনার অভাব। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমেই পরিপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিত সম্ভব। ‘নাগরিকের সুস্বাস্থ্য’ নগর ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। পরিচ্ছন্ন ও সবুজের সঙ্গে নাগরিকের স্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত। স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত সরাসরি উৎপাদন ও উন্নয়নের সম্পর্ক। তাই সবার আগে নিশ্চিত করতে চাই পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং পরিবেশবান্ধব সিলেট। পাহাড়, টিলা ও জলাশয় রক্ষাসহ অকাল বন্যা থেকে সিলেট নগরীকে রক্ষাকল্পে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে সিলেট নগরীকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগরীতে রূপান্তর করতে হবে।

 

রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সবুজ সিলেট গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করা হবে। বাড়িভিত্তিক সবুজায়নে উৎসাহিত করা হবে। নগর পরিকল্পনায় পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। নগরায়ন হবে পরিবেশবান্ধব। বায়ু ও শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া হবে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। পাশাপাশি ‘শব্দদূষণ’ বিষয়ে প্রণীত আইন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট অধিদফতর ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা।

 

উন্নয়নের নামে সিলেটের বৃক্ষ-নিধন, পাহাড় টিলাকাটা বন্ধ করা, পানির আঁধার বিনষ্ট করতে না দেয়া খুবই জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের উত্তাপ বেড়ে গেছে। গাছ কমে যাওয়ায় নগরীতে পাখিও কমে গেছে। নগরীতে পাখি না থাকায় বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড়ও বেড়েছে। একসময়ে দীঘির নগরী ছিল সিলেট। লালদীঘি, সাগরদীঘি, চারাদীঘি, লালাদীঘি, মজুমদারীদীঘি, কাজীদীঘি, তালদীঘি, রামেরদীঘি, মাছুদীঘিসহ পাড়া-মহল্লায় একাধিক দীঘি-পুকুর ছিলো। সব ভরাট হয়ে গেছে। আর যেনো কোনো দীঘি ও পুকুর ভরাট না হয় এবং সেগুলোকে দূষণ মুক্ত রাখতে উদ্যোগ নেয়া হবে। এক কথায় সিলেটের নির্মল পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

 

জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ : এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থানীয় এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সাপেক্ষে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে নিয়মিত এবং বিশেষভাবে বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হবে। শহরকে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ ও সুরমা নদী খননে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শহরের অভ্যন্তরীণ মালনিছড়া, যোগিনীছড়া, গোয়ালীছড়া, কালীবাড়িছড়া, মঙ্গলীছড়া, হলদিছড়া, ভুবিছড়া, ধোপাছড়া ও গাভীয়ার খাল নামের নয়টি ছড়া নগর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিলিত হয়েছে সুরমা নদীতে। ছড়াগুলো উদ্ধার করে নদী পর্যন্ত এর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। সিলেট শহরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি নিস্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য ফ্লাডওয়াল নির্মাণ, নতুন রেগুলেটর স্থাপন, ড্রেনেজ আউটলেট নির্মাণ করা হবে। বন্যার কারণ ও প্রতিকারের স্থায়ী উপায় নিরূপণ, নদী তীর ভাঙ্গন ও স্থায়ী প্রতিরক্ষা এবং নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনঃনির্মাণ করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা আমার লক্ষ্য। নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও দাতাদের সহায়তা নেয়া হবে। ময়লা, আবর্জনা, দুর্গন্ধ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে ময়লার ভাগাড়গুলো (ডাস্টবিন) সরিয়ে নেয়া হবে। এর পরিবর্তে এলাকাভিত্তিক ময়লা সংরক্ষণ (ডাম্প) কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্জ্য উৎপাদন কমাতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়া হবে। বর্জ্য রিসাইকেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও সারের মতো সম্পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হবে। বর্জ্য সংগ্রহ পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত থেকে আচ্ছাদিত পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়া হবে। সড়কের ধুলো-বালি ও আবর্জনা পরিষ্কার করতে যান্ত্রিক ভ্যাকুয়াম ট্রাক ক্রয় ও ব্যবহার করা হবে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিভিন্ন স্থান বা জলাশয়ে ফেলা এসব বর্জ্য পরিবেশের জন্য হুমকির পাশাপাশি কমাচ্ছে জমির উর্বরতা। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে সুরমা নদী, খাল-বিল দূষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 

দীর্ঘদিন থেকে সিলেট মহানগরীর দক্ষিণ সুরমার পারাইরচক ও লালমাটিয়া এলাকায় নগরীর আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য ডাম্পিং করা হয়। বিদেশের মতো কঠিন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও রান্না ঘরের বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করে এই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ আমার লক্ষ্য। অর্থাৎ টেকসই গৃহস্থালী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণেও আমাদের উদ্যোগী ভ‚মিকা পালন করতে হবে। লোকালয় থেকে দূরে উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য সংরক্ষণের স্থান নির্ধারণ করা হবে। ভোরের আগেই নগরীর বর্জ্য পরিস্কারের ব্যবস্থা করা। নাগরিকদের যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার অভ্যাস পরিবর্তনে উদ্যোগ নেওয়া।

 

পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার খেসারত দিচ্ছেন সিলেটবাসী। সুয়ারেজ ড্রেনের তলার নদী-অভিমুখে ঢালের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য একটি পূবর্ গবেষণামূলক সেনিটেশন সলিউশন-প্ল্যান দরকার। সত্যিকারের বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করে দক্ষ প্রকৌশলীদের মাধ্যমে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পরিকল্পিত নগরায়ন : শহরের দুটি দিক থাকে, একটি হচ্ছে ফাংশনাল বা কার্যকরী অন্যটি হচ্ছে ভিজ্যুয়াল বা বাহ্যিক রূপ। কার্যকরী ব্যবস্থার দিক থেকে শহরে জাতীয় আদর্শাবলির প্রতিফলন থাকা দরকার। বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনার মূল দৃষ্টিভঙ্গি মানবিক মূল্যবোধ হলেও, সিলেট দিনে দিনে রুঢ় ও রুক্ষ হয়ে ওঠেছে। কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয় এই শহরের স্নিগ্ধতা ও মমতা। ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই শহরের আবাসন ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান নীতি, গৃহসংস্থান নীতি, যানবাহন-যোগাযোগ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বণ্টন পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, মুষ্টিময়ের জন্য সুন্দর শহরের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের মানবিক পরিকল্পিত শহর বানানোতেই সিলেটের ভবিষ্যৎ নিহিত। এজন্য পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে সরু চৌরাস্তার মোড়ে অপ্রয়োজনীয় ও অকার্যকর স্তম্ভ, অপ্রয়োজনীয় ডিভাইডার অপসারণ করা হবে। নগরীর যানজট নিরসনকল্পে প্রয়োজন মতো রাস্তা প্রশস্ত করণ, আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা গঠন, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের জন্য জনবল বৃদ্ধি, যান চলাচলের জন্য লেন বিভাজন ও পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা। পর্যায়ক্রমে রিং রোড ও ফ্লাইওভার তৈরির মাধ্যমে যানজট নিরসনের স্থায়ী সমাধান প্রণয়ন করা।

 

জনবান্ধব কর-কাঠামো তৈরি করে এর যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে। কর ব্যবস্থাপনায় কর প্রদানকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে কর ব্যবস্থাপনাকে ব্যাপক ও জনবান্ধবকরণে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তব সম্মত নকশা অনুমোদনের মাধ্যমে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

 

নগরে সড়ক খনন ও সকল মেরামত কাজের ক্ষেত্রে সেবাদানকারী সকল সংস্থাকে খননের কাজ সমন্বিতভাবে শুষ্ক মৌসুমে শেষ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। একইভাবে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ড্রেন পরিষ্কারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির বাহন আনা হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে ড্রেন থেকে ময়লা পরিস্কার করা হয় ধীরে ধীরে তেমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ড্রেনগুলো সচল রাখতে সচেতনতা ও স্থানীয় উদ্যোগ সৃষ্টির প্রয়াস নেয়া হবে। শহরের ভেতরের ছড়াগুলোতে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হবে। ছড়াগুলোর উভয় পাড়ে হাঁটার পথ ও সুশোভিত বৃক্ষরাজির সমাহার ঘটানো হবে। নতুন বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি বৃক্ষরাজির যথাযথ পরিচর্যা, সংরক্ষণ ও বৃক্ষ বিরোধী ক্ষতিকর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে (গাছের গায়ে বিজ্ঞাপন, উন্নয়ন অজুহাতে বৃক্ষনিধন, বৃক্ষের গোড়া পাকাকরণ ইত্যাদি) প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

নগরবাসীকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। এবং বিশ্বের সব আধুনিক শহরের মতো সিলেট শহরে পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হবে।

 

একটি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে যত্রতত্র পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড লাগানোর ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিজ্ঞাপনের সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে সঠিক তদারকি নিশ্চিত করা হবে।

 

নিরাপদ স্বাস্থ্যকর সিলেট : মানুষ শহরে আসে জীবিকার আশায়, আর এসে স্থায়ীভাবে থেকে যায় উন্নত ও সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায়। উন্নত ও সুন্দর জীবনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদ স্বাস্থ্যকর নগর। আমি এই পবিত্র নগরীতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের মাধ্যমে নগর এলাকাকে চারটি জোনে বিভক্ত করে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করতে চাই। সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনাধীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে আধুনিকায়ন ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংখ্যা বৃদ্ধি করে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চাই। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে সরকারের বাস্তবায়নাধীন সকল স্বাস্থ্য সেবা যথাসময়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমি বদ্ধপরিকর।

 

মশার উৎপাত সিলেটের নাগরিকদের অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা যা বহু সংক্রামক ব্যাধিরও কারণ। তাই মশক নিধন কর্মসূচি হিসেবে শহরের ভেতরের সব ড্রেন, নালা ও মশা উৎপত্তিস্থলে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হবে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। অনেক এলাকাতেই শুকনো মৌসুমে পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকে। নগরবাসীর জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হবে।

 

হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিক স্থাপনকে নিরুৎসাহিত করে স্বাস্থ্যকর বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে উদ্যোগী ভ‚মিকা গ্রহণ করা হবে।

 

ফরমালিনমুক্ত ও নিরাপদ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বিতভাবে স্বাস্থ্যহানিকর খাবার ও ভেজালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বাজারে উৎপাদিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আরবান হেলথ কেয়ার বা নগর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্প-নিম্ন আয় ও বস্তিবাসী নাগরিকদের জন্য সুলভে চিকিৎসা দেয়া হবে। নগর স্বাস্থ্যসেবা আরও প্রসারিত করা হবে।

 

লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শত শত শিশু, ছেলে-মেয়ে, প্রবীণ, অসুস্থ ও প্রসূতি মা ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। কিন্তু সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত পাবলিক টয়লেট গড়ে ওঠেনি। নগরবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল স্থানে একাধিক এবং প্রতি ওয়ার্ডে ১টি করে হলেও আধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপন ও পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা-কর্মী নিয়োগে উদ্যোগ গ্রহণ করা।

 

নগরীর অবহেলিত উন্মুক্ত স্থানসমূহ সবুজায়নের পাশাপাশি ‘সূর্যোদয়ের পূর্বেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম’ নিশ্চিতকরণ, শীতের শুকনো দিনগুলোতে সড়কে ও সড়কের পার্শ্বস্থ বৃক্ষরাজিতে পানির মাধ্যমে ধুলা-বালি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা : সিলেট নগরী ভ‚মিকম্পের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তাই ভ‚মিকম্পে নাগরিকদের করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ। পাশাপাশি ঝুঁকিপুর্ণ ভবন চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংস্কার, অপসারণ তথা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিটি করপোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত ভবন সমূহে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ। ভ‚মিকম্প, অগ্নিকান্ড, অকাল বন্যা, ইত্যাদি দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি রোধে ব্যাপক সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। সেই সাথে জনগণকে সচেতন করা ও দুর্যোগ মোকাবেলা করণীয় বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

 

শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব সিলেট : সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কারিগরি প্রতিষ্ঠানসহ আরও কিছু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। শিক্ষার উন্নয়নে নগরীতে প্রাথমিকভাবে চারটি উন্নতমানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। মেধাবী ও অসচ্ছল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হবে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে সিটি করপোরেশন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

সরকারি ও বেসরাকরি কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক কর্মবান্ধব শিক্ষার প্রসার এবং প্রশিক্ষিতদের জন্য দেশে বিদেশে কর্মসৃজন বা উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে।

 

ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বিনোদন চর্চায় একটি নাগরিক কেন্দ্র (সিভিক সেন্টার) করা হবে। বিভিন্ন এলাকায় লাইব্রেরি, সংস্কৃতি বিকাশ ও চর্চাকেন্দ্র তৈরি করা হবে। সিলেট মহানগরীতে আধুনিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, সিলেট জাদুঘর প্রতিষ্ঠা, সিলেটে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র স্থাপন, সিলেট সিটি করপোরেশন পরিচালিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, সারদা স্মৃতি ভবন, পীর হবিবুর রহমান পাঠাগারসহ শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের উন্নয়ন ও সংস্কার সাধন। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্বলিত বিভিন্ন প্রকাশনার ব্যবস্থা করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রচারিত করা হবে।

 

নারীবান্ধব সিলেট : একটি নগরীর নারীদের নিরাপত্তার উপর নির্ভর করে সেই নগরীর আদর্শরূপ। নারীরা যাতে নির্বিঘেœ ও স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে সেই লক্ষে সিটি করপোরেশন উদ্যোগী ভ‚মিকা পালন করবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামাজিক কর্মকাÐে সম্পৃক্ত নারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে। নারীরা যাতে সিটি করপোরেশন থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা পান তার জন্য বিশেষ সেল তৈরি করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক বা একাধিক বিশেষায়িত মার্কেট নির্মাণ করা হবে। নবীন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা করার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। ট্রেড লাইসেন্স সহজতর করা। কর্মজীবী মায়েদের সুবিধার্থে আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার কাম প্রি-স্কুল নির্মাণ করা হবে।

 

ব্যবসাবান্ধব সিলেট : দেশে বিদেশে পরিচিত ‘আমরার সিলেট’কে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা। দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে নানাভাবে পিছিয়ে পড়াকে হুমকি হিসেবে না দেখে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে বাস্তবসম্মত স্থায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। সিলেটের স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে স্থানীয় শিল্প বিকশিত করার উদ্যোগ গ্রহণ। চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার প্রসারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। নগরীতে আবাসিক সমস্যা সমাধানকল্পে মানসম্মত ও সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প নির্মাণে বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্টকরণের ব্যবস্থা করা। আবাসিক ভাড়া ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা আনয়নের স্বার্থে আবাসিক ভাড়া চুক্তিপত্রের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা।

 

সিলেটে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষ্যে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা। বিসিকসহ সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে শিল্প কারখানা স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণকল্পে সিটি করপোরেশন কার্যকর ভ‚মিকা পালন করবে।

 

পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা : শহরের ভেতরে পার্ক, খেলার মাঠ ও উদ্যান প্রতিষ্ঠা করা হবে। পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলোকে ঘিরে পরিকল্পিত গাছ রোপন করা হবে। নগরীর জেল রোডে অবস্থিত পুরাতন জেলের জায়গায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ প্রতিষ্ঠা করা আমার আগ্রহ। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সরকারের মন্ত্রী মহোদয়দের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে আমি উদ্যোগী ভ‚মিকা গ্রহণ করবো। হাসান মার্কেট এলাকাকে দৃষ্টিনন্দন করে আধুনিক কমপ্লেক্স তৈরি করে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বাস্থ্যকর বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করবো। জালালাবাদ পার্ককে উন্মুক্ত করা ও নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মুক্তমঞ্চ তৈরি করে সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ প্রদান। নগরীতে নারী-শিশু-প্রবীণদের প্রাত: ও সান্ধ্যকালীন ভ্রমণের জন্য নিরাপদ উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।

 

সচল সিলেট : নাগরিক জীবনের প্রধান সংকটের নাম ‘যানজট’। শুধুমাত্র যানজটের কারণে নগরবাসীর প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সড়কে অব্যবস্থাপনা, চালকদের সচেতনতার অভাব, যত্রতত্র পার্কিং, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, ব্যক্তিগত পরিবহনের আধিক্যকে যানজটের প্রধান কারণ ধরা হয়। যদিও যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা সীমিত, এ কাজটি মূলত সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) তবু প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি উন্নত ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে সিলেটকে সচল ও গতিময় রাখা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় সিলেট নগরীর যানজট নিরসন, বহুতল পার্কিং নির্মাণ, হাসান মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আধুনিক ব্যবসাবান্ধব উদ্যোগ, নগরীর বিভিন্ন ট্রাফিক পয়েন্টকে ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা। নগর পরিবহনকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তোলা। সিলেট থেকে রেলপথে দ্রæততম সময়ে রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য ‘হাই স্পিড’ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। নদীর তীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে প্রয়োজনে যাত্রী সেবায় ‘ওয়াটার বাস’ চালু করা হবে।

 

প্রকৃত হকারদের নির্ণয় করে হকার পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে বিশেষ এলাকা সনাক্ত করে ‘হলিডে মার্কেট’ চালু করা হবে। যানজট কমাতে ফুটপাতকে পরস্পর নির্ভরশীল ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিলেট নগরীর সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে নির্মাণাধীন ভবনের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিয়মিত ভিত্তিতে করপোরেশন সড়কগুলো মনিটরিং করবে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সবসময় তদারকি করে সংস্কার করা হবে। নকশায় প্রতিবন্ধীদের চলাচল উপযোগী র‌্যাম্প না থাকলে নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয়া হবে না। সিলেটের জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলবে সিটি করপোরেশন। আমরা এমন একটি গণপরিবহন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি যার মাধ্যমে নাগরিকরা নগরীর ভেতরে দ্রæত ও সহজে চলাচল করতে পারবে। যেখানে সড়ক হবে পরিবহনের, ফুটপাত হবে নাগরিকের।

 

মানবিক উন্নয়নে সিলেট : সিলেট হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান- উপযোগী নগরী। নগর পরিকল্পনায়, প্রকল্প নির্বাচন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবেশ, পিপিপি ও মানবিকতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। সিলেটের মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মাদ্রাসা, গোরস্থান, শ্মশান, মাজারসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সাধন করা হবে। আধ্যাত্মিক নগর সিলেটের পবিত্রতা রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা হবে।

 

সিটি করপোরেশনে একটি অনুদান তহবিল প্রতিষ্ঠা করবো, যার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, এতিমখানা ও কমিউনিটির নানা উদ্যোগে অনুদান দেয়া হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তা দেবার জন্য তাদের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলার উদ্যোগ নেবে সিটি কর্পোরেশন। ব্যাপক মাত্রায় কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরির কর্মসূচি নেয়া হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য পর্যায়ক্রমে স্বল্পমূল্যের বাসস্থান নির্মাণ করা হবে।

 

নতুন বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে কবরস্থান প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা দেয়া হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী পুরোহিতদেরও বিশেষ প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।

 

বীরমুক্তিযোদ্ধার পরিবারবর্গকে সর্বক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে উন্নত জীবনযাপনের ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জাতীয় বিশেষ দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। সিলেটে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পসংস্কৃতি অঙ্গনের পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও সমাজের অবহেলিত জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সমাজের গরিব ও সাধারণ মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশবান্ধব কাঁচাবাজার সমূহের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন সাধন করা হবে। সিলেট নগরীর সকল বস্তিবাসীসহ ছিন্নমূল মানুষ, ভবঘুরে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, সরকারি-বেসরকারি চাকুরিতে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিম্ন আয়ের মানুষের বাসস্থানের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সিলেটের পুরাতন মেডিকেল কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর অত্যন্ত পশ্চাদপদ কর্মচারীদের কলোনীসহ সিলেট নগরীর বস্তিবাসীর পানির লাইন প্রদান সহজলভ্য করা হবে। গরিব ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আর্থিক পুনর্বাসন ও পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তায় পরিণত করা হবে। বৈচিত্রময় সিলেটের ঐতিহ্য লালন ও সংরক্ষণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং তাঁদের ব্যবসা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে।

 

প্রবাসীবান্ধব সিলেট : প্রবাসীরা সিলেট তথা দেশের সম্পদ। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সকল দুর্যোগ-দুর্বিপাক, সংকট ও সম্ভাবনায় প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। সিলেট নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রে রয়েছে প্রবাসীদের ব্যাপক অবদান। নগরীতে প্রবাসীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি, সম্পদ রক্ষা আমাদের দায়িত্ব। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি, প্রবাসী উদ্যোক্তা গ্রæপগুলোকে সংশ্লিষ্ট করে জনকল্যাণমূলক যৌথ প্রকল্প গ্রহণ, বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সিটি করপোরেশন উদ্যোগী ভ‚মিকা পালন করবে। প্রবাসীদের ভ‚মি ও বাসা-বাড়ি রক্ষা যেকোনো সমস্যা সমাধান তথা সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন বিশেষ সেল গঠন করবে।

 

সম্প্রীতির সিলেট : সিলেট একটি ধর্মীয় সম্প্রীতির পবিত্র ভ‚মি। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিপ্রিয় সিলেটবাসী সহাবস্থান করছে। সম্প্রীতি লালনে সিটি করপোরেশন ভ্যানগার্ডের ভ‚মিকা পালন করবে। ধর্মীয় উন্মাদনা নয়, সমতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে ধর্মীয় আচার পালনে সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ সহায়তা থাকবে। সিলেটবাসীর মর্যাদার প্রতীক হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত এই নগরীর মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় আমি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। ওলি-আউলিয়াগণের মাজার সংস্কার, সৌন্দর্য্যবর্ধন ও মাজারগুলোতে আগত দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে সিটি করপোরেশন কার্যকর ভ‚মিকা পালন করবে।

 

শ্রী চৈতন্য দেবের স্মৃতিবিজড়িত এই সিলেটে সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন মন্দিরসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণে সিটি করপোরেশন দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করবে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গির্জার সৌন্দর্যবর্ধন রক্ষণাবেক্ষণ ও অবৈধ দখলমুক্ত করে তাদের নিজস্ব সম্পত্তি নির্ধারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ের আধুনিকায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। সর্বোপরী নগরীর ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে সকল অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

পর্যটনবান্ধব সিলেট : সিলেটকে একটি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পর্যটন উপযোগী সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা। সিলেটে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ। সিলেটের প্রকৃতি ও পরিবেশ অক্ষত রেখে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নগরীতে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সিলেটের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নগরীতে একটি যাদুঘর স্থাপন ও সুরমা নদী ও নদীর তীরকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য অবসর বিনোদনের ব্যবস্থার দাবি আমাদের।

 

জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, সামাজিক বৈশিষ্ট্যের মেরুকরণ, সাইবার নির্ভরশীলতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ মনযোগ দিয়ে সিলেটকে একটি স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী এবং সে ক্ষেত্রে কীভাবে উত্তরণ সম্ভব, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকারের চেষ্টার পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত করা হবে। সেবা খাতে দক্ষতা অর্জনে তরুণদের আগ্রহী করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করা হবে। বহুপক্ষীয় যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সামগ্রিক দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন নিশ্চিত করা হবে। ভ‚কৌশলগত অবস্থান কাজে লাগিয়ে সিলেটকে একটি আন্তর্জাতিকমানের তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করা হবে।

 

সামাজিক অপরাধ নির্মূল : শহরের আনাছে-কানাছে জুয়ার আসর, ইভটিজিং, মাস্তানী, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, দখল, চাদাবাজি, মাদক, অপহরণসহ সকল সামাজিক অপরাধ নির্মূলে প্রয়োজনীয় সবধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিরাপদ ও শান্তির নগরী প্রতিষ্ঠা করতে সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

 

অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত সিলেট : জনগণের অংশগ্রহণ ও সুযোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান সত্যিকারের জনগণের হয়ে ওঠে না বলে আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। নগর ভবন জনগণের প্রতিষ্ঠান, যার দায়িত্বই হচ্ছে জনগণকে সেবা দেয়া। ফলে দক্ষ ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক সিটি করপোরেশন গড়ে তুলতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে উন্নতমানের সেবা আর সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে নিয়মিত নাগরিকদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে আমি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ড-ভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধান করা হবে। শিক্ষা, সাহিত্য, কৃষি, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা ও শিল্পবান্ধব কর্মসূচিসহ নানা সৃজনশীল কার্যক্রম বাস্তবায়ন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘নগর পদক’ চালু করা হবে। দেশে-বিদেশে সিলেটের খ্যাতিমান সফল ব্যক্তিদের ‘গুণিজন সংবর্ধনা’ নামে সম্মাননা প্রদান করা হবে।

 

নাগরিকবান্ধব সিলেট : গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ কোনোটিই সিটি করপোরেশনের সেবার আওতাধীন নয়। কিন্তু এগুলো হচ্ছে নাগরিকদের মৌলিক সেবা। আমি জানি সিলেটের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ-পানি ও গ্যাসের সংকট আছে, যা মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে। সিলেটের নাগরিকদের এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে একটি ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস মিটিগেশন সেল’ করতে চাই। কোনো এলাকা থেকে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই এই সেল দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবে। নগরীর প্রত্যেকটি এলাকায় সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

 

সিটি করপোরেশন হবে দুর্নীতিমুক্ত। দুর্নীতি বন্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে। নাগরিক সেবা, অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালু করা হবে। একটি ‘নগর তথ্য কেন্দ্র’ খোলা হবে, যেখানে নগরবাসী তার প্রতিটি সেবার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাবেন। নগর উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়নে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল বা পরামর্শক কমিটি করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে নাগরিকদের মতামত নেয়া হবে। নগরীতে সেবা প্রদানকারী অন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে দক্ষ সমন্বয় গড়ে তোলা হবে এবং ওইসব সংস্থাগুলোর সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের নিজস্ব মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

 

তারুণ্যের সিলেট : দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ তরুণ। আর সিলেটের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩২ শতাংশ নতুন ভোটার। এই তরুণদের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তারা তাদের মতো করে থাকতে চায়, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে চায়, নির্মল আড্ডার জায়গা চায়, নিজেদের কথা সবাইকে জানাতে চায়। বিশ্বকে নিজেদের মতো করে দেখতে ও দেখাতে চায়। নিজেদের তারা একটি স্মার্ট শহরের অধিবাসী হিসেবে দেখতে পছন্দ করে। আমি এই সিলেটকে তারুণ্যের সিলেট হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আউটসোর্সিং/অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে আয়ের উৎস নিশ্চিত করতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, যার মাধ্যমে আমার তরুণ বন্ধুগণ ঘরে বসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।

 

আগামী চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আর্টিফেসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। সে সময়কালে আমার সিলেটের তরুণরা যাতে বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে এ লক্ষ্যে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আমার জানামতে, রবোটিক্স এবং বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে ইতোমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্ররা ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। আমি নির্বাচিত হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করবো। এবং তাদের নিয়ে আগামীর সিলেট নির্মাণ করবো।

 

তরুণদের জন্য আধুনিক স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। সিলেটের পর্যাপ্ত ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে। নগরীতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠিত করে শিশু-কিশোর ও তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সিলেটে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আরও নতুন স্টেডিয়াম স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

 

প্রযুক্তির সিলেট : নগরীর ভেতর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বাসস্টেশন ও রেলস্টেশন বিনামূল্যে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে একটি ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হবে। নাগরিক সমস্যা জানানো, সেবা সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-সমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে। সকল সেবাসমূহকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল করা হবে এবং ই-সেবা চালু করা হবে। নগরীর মানচিত্র বা সিটি ম্যাপ করা হবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় বড় মানচিত্র টানানো হবে। সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় একটি তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

 

‘আমার সিলেট’ নামক একটি অ্যাপ নির্মাণ করা হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা যেখানে মেয়রের সাথে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য আলাদা গাইড ম্যাপ বা নেভিগেশন ম্যাপ করা হবে। নগরীর দর্শনীয় স্থান, এলাকাসমূহকে দৃষ্টিনন্দন করা হবে।

 

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ