প্রকাশিত: ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ২০, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল দেশের অন্যতম একটি চা শিল্পাঞ্চল ও পর্যটন নগরি হিসেবে দেশ-বিদেশে রয়েছে পরিচিতি। এ উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পট এবং নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত সারি সারি চা-বাগান আর চারপাশে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সজিব প্রকৃতি। যেদিকে দু`চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সুনীল আকাশ, সাজানো সবুজ চা বাগান আর সুউচ্চ সবুজ পাহাড়ি টিলায় ঘেরা চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু সৌন্দর্যের হাতছানি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোর সঙ্গে চা বাগানের ভেতরে অবস্থিত নয়নাভিরাম লেকগুলো পর্যটকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুরভুরিয়া চা বাগানে অবস্থিত নয়নাভিরাম ‘ভুরভুরিয়া লেক` এখন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
সোমবার ১৯ জুন দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভুরভুরিয়া চা বাগানের ১৮ নং সেকশনে অবস্থিত ভুরভুরিয়া লেকের চারদিকে উচুঁ, নিচু-টিলা আর সবুজে ঘেরা চারপাশে চা বাগান, এরই মাঝখানে মনোমুগ্ধকর বিশাল লেক। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে এ লেকটি দেখতে অপরূপ। উঁচু টিলার উপর থেকে লেকটি দেখতে অপূর্ব লাগে। পর্যটকরা এ লেকে আসলে দেখতে পাবেন উঁচু পাহাড়, সবুজ টিলা, চা-বাগানের আঁকাবাঁকা পথ আর লাল মাটির রাস্তা। শাপলাসহ নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ। পাখির কিচিরমিচির লেকটিকে দিয়েছে আরও অপরূপ সৌন্দর্য।
চা বাগানের বাসিন্দা সুমন হাজরা বলেন, এ লেকটি দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন আসেন। টিলার উপর থেকে এ লেকের ছবি তুলেন। শীতের সময় অনেক পাখি দেখা যায়। বাগানের ম্যানেজার সাহেবের অনুমতি নিয়ে এখানে আসতে হয়। প্রকৃতিপ্রেমী মোঃ সোলেমান পাটোয়ারী বলেন,`ভুরভুরিয়া` লোকটি দেখতে বেশ মনোরম। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকসহ প্রকৃতিপ্রেমীদের। এই লেকটিকে কেউ কেউ `চম্পা লেক` নামেও চিনেন। এখানে সময় কাটাতে খুবই ভালো লাগে। অনেক পর্যটক চা বাগানের এই লেক দেখার জন্য আসতে চান। কিন্তু চা বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার আলাদা ঝামেলায় জড়াতে চান না। তাই এখানে পর্যটকদের আনাগোনা কম।যেহেতু লেকটি চা বাগান কর্তৃপক্ষের আওতাধীন, তাই তাঁরা গৎবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে পর্যটকদের জন্য জন্য যেনো একটু ছাড় দেন। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ লেকটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লেকের দক্ষিণ-পূর্বে পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতানের সীমানা, পশ্চিমে মূল ভাড়াউড়া চা-বাগান, উত্তরে রেললাইন ও পূর্বে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভানুগাছ সড়ক ধরে কিছুদূর এগুলেই ফিনলের চা কোম্পানীর ভুরভুরিয়া চা-বাগানের প্রবেশ পথ। আবার ডলুছড়া এলাকায় (সাদ্দামের চায়ের দোকান) এর পাশ দিয়ে এ বাগানে প্রবেশ করা যায়। এখানে বাগান কর্তৃপক্ষ একটি গেইট দিয়ে রেখেছেন। অনুমতি ছাড়া এই গেইট দিয়ে কেউ প্রবেশ করা যাবে না। অথবা কলেজ রোড দিয়েও ভুরভুরিয়া চা বাগানে প্রবেশ করা যাবে। শহর থেকে মটর সাইকেল, সিএনজি, অটো রিক্সা বা যেকোনো গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে ভুরভুরিয়া চা বাগানের লেকে সরাসরি যাওয়া যাবে।
লেকে পৌছতে মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় লাগবে। ভুরভরিয়া চা বাগানের লেকটি দেখতে হলে আগে বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে সারা বছর পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও এ লেকটি এখনো পর্যটকদের কাছে অচেনা-অজানা। আর এর কারণ হচ্ছে এই লেকটি দেখতে এসে প্রবেশে পর্যটকরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এখানে প্রবেশ করা যায় না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান ও ভাড়াউড়া টি ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, ২০২১ সালে টি প্লান্টেশনের জন্য ভুরভুরিয়া চা বাগানে এই লেকটি তৈরি করা হয়েছে। মূলত চা-বাগানে সেচের জন্য তৈরি করা হয়েছে এই লেক। এই লেকের চারপাশে ১০০ হেক্টর টিলা ও সমতলে চা বাগান করা হয়েছে। সেচ কার্য ছাড়াও লেকে করা হয়েছে মৎস চাষও।
পর্যটক আসতে বাঁধার কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ (সিলেট ভ্যালি) চা সংসদের চেয়ারম্যান জি এম শিবলি বলেন, চা বাগান একটি ইন্ডাস্ট্রি। এখানে সাধারণ জনগণকে ঢুকতে দিলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। গাছের ডাল বা পাতা ছিঁড়লে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তার ওপর অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। সরকারি নীতিমালায়ই আছে, চা বাগানে অন্য কিছু করা যাবে না।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech