আজ সিসিকে ভোট যুদ্ধের শেষ পরীক্ষায় ইসি

প্রকাশিত: ২:৩২ পূর্বাহ্ণ, জুন ২১, ২০২৩

আজ সিসিকে ভোট যুদ্ধের শেষ পরীক্ষায় ইসি

ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: আজ বুধবার শেষ ধাপে সিলেটে ভোটযুদ্ধ। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে গাজীপুর, খুলনা ও বরিশালের ভোট। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হতে যাওয়া এই নির্বাচন। ইভিএম নিয়ে আপত্তি সহ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার মতে ইভিএমে ভোট ‘ওন’ দিলে ‘হন’ যায়। এছাড়া তিনি বলেছিলেন, ইভিএমে ভোট প্রদানে অভ্যস্ত নয়, আমজনতা। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে একেবারে নতুন তারা।

 

এরপরও ইভিএমে ভোট হচ্ছে, সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতির পাশাপাশি বেশ সতর্ক ইসি। গাজীপুর ও খুলনায় অনেকটা শান্তিপূর্ণ ভোট সারলেও বরিশালে ভোটের দিনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীকে রক্তাক্ত করার ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল নির্বাচন কমিশন। তাই আজকের ভোটকে কেন্দ্র করে যাতে এমন পরিস্থিতি ফের তৈরি না হয়, সেজন্য সতর্ক ইসি। যদিও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দুই সিটির ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে। অপরদিকে, সিসিকের ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন বহু প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, সেই সাথে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্যক্তি রয়েছেন এ পদে নির্বাচনে। সব মিলিয়ে স্থানীয়ভাবে এ পদে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা চরমে। সে কারণে মেয়র পদের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলতা হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

 

সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘আমাদের কাছে সব প্রার্থী ও দল সমান। ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে আমরা বদ্ধপরিকর।

 

ইসি সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে ভোটের মাঠে মেয়রের ওপর হামলা ঘটনা অনেকটা ভাবিয়ে তুলছে ইসিকে। পাশাপাশি সেখানে ভোটের পরও পরিস্থিতিতে অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। যে কারণে সিলেট-রাজশাহীতেও কোনোভাবে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটতে পারে, সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে ভোটের আগে-পরে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য মাঠে ২৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা মোট পাঁচদিন মাঠে সক্রিয় থাকবেন।

 

এদিকে, অন্য নির্বাচনের মতো এই সিটির ভোটও সরাসরি সিসি ক্যামেরায় ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছেন কমিশনার আহসান হাবিব। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন পূর্ব, ভোটের দিন ও নির্বাচনোত্তর অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুত করা তালিকা অনুযায়ী এখানকার ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ)। এরমধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৮টি কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) হিসেবে । কী

 

এদিকে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের দিনে সব জায়গায় তৈরি করা হবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়।

 

সিলেটের প্রস্তুতির বিষয়ে পুলিশ বলছে, ভোটের দিন শুধু পুলিশই থাকবে ২ হাজার ৬০০ জন। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশের সহায়তায় র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। আর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে ২ জন কর্মকর্তা ও ৪ জন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে একজন কর্মকর্তা ও ৪ জন কনস্টেবল ও সাধারণ কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে একজন কর্মকর্তা ও তিনজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন।

 

এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদীপ দাস বলেছেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করতে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ভোটের দিনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

 

প্রসঙ্গত, ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন থাকলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে সিসিকে এখন মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৬ জন।

 

 

সিসিক নির্বাচনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

 

নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার : ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন গঠিত হবার পর তিনটি নির্বাচন ব্যালটের মাধ্যমে হলেও এবারই প্রথম সবকটি ওয়ার্ডে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্য এর আগে ২০১৮ এর নির্বাচনে সিসিকের একটি ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এবারের নির্বাচন সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন। তাই কমিশনের নজর এড়িয়ে ভোটে অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভোট ১৯০টি ভোট কেন্দ্রে ১৭৪৭টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ : নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরবিচ্ছিন্ন করতে এবারের সিসিক নির্বাচনে দায়িত্ব পাালন করবেন প্রায় ২৬০০ পুলিশ সদস্য। এছাড়া মাঠে থাকবেন ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪২টি ওয়ার্ডে ৪২ জন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিটি টিমের সাথে থাকবে ১ প্লাটুন করে বিজিবি। নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১ জন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে থাকবেন ১ জন উপ পুলিশ পরিদর্শক ও ৫ জন পুলিশ সদস্য। আর কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১ জন পুলিশ পরিদর্শকের সাথে ১ জন উপ পুলিশ পরিদর্শক ও ৪ জন পুলিশ সদস্য থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ জন নারী ও ৭ জন পুরুষসহ মোট ১৪ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশের একটি করে মোট ৪২টি টহল টিম থাকবে। প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ড মিলিয়ে থাকবে একটি করে স্ট্রাইকিং টিম। এছাড়া প্রত্যেক থানায় একটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের ২২ টি ও ১০ প্লাটুন বিজিবির টহল টিম থাকবে।

নির্বাচনে লড়ছেন কারা : এবারের সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা) ও জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম দলীয় প্রতীক (গোলাপফুল) মার্কায় নির্বাচন করবেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু (ঘোড়া), মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট), মো. শাহ জাহান মিয়া (বাস গাড়ি) ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ) প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তবে এদের মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনে অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বর্জন করেছেন ইসলামী আন্দোলনের হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা)।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ