প্রকাশিত: ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৩
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: নিজের তৈরি বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দশকের শাসনামলে এমন বিদ্রোহের মুখোমুখি হননি সময়ের সবচেয়ে প্রতাপশালী রুশ নেতা। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনা গ্রুপ ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিনের ৩৬ ঘণ্টার এই বিদ্রোহ জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেছে।
প্রিগোশিন শনিবার দাবি করেছিলেন, রোস্তভ সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তাঁর বাহিনী। এরপর মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল ভাড়াটে সেনারা। পরে মধ্যরাতে তার টেলিগ্রাম চ্যানেলের বার্তা থেকে জানা গেল, রক্তপাত এড়াতে বিদ্রোহের অবসান হয়েছে।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে দাঁড়ায় ওয়াগনার। সেই সঙ্গে ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন বেলারুশে চলে যাবেন বলেও জানান।
প্রিগোশিন দাবি করেছিলেন, এটি অভ্যুত্থান নয়, বরং ‘স্বাধীনতা ও বিচারের জন্য মিছিল’ ছিল। তবে এতে মস্কো সন্তুষ্ট হয়নি। রাশিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রিগোশিনের প্রচেষ্টাকে ‘অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন।
দুই যুগের শাসনে সবচেয়ে বড় আঘাত : ২৩ বছর হলো ক্ষমতায় পুতিন। এই ২৩ বছরে এমন অবস্থার তৈরি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্রোহ বেড়ে ওঠার আগেই ঝরে গেলেও এর পরিণতি কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেছেন, ‘ওয়াগনারের বিশ্বাসঘাতকতা দেশ ও জনগণের পিঠে ছুরিকাঘাত।’ ওয়াগনার সেনাদের উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এক রুশ নাগরিককে ‘কৌশলে অপরাধমূলক দুঃসাহসিক’ কাজের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে।
পুতিন বলেন, ‘যারা রাশিয়াকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে। তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। রাজধানী মস্কো এবং অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলে এখন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে। আমরা আমাদের উভয় জনগণকে রক্ষা করব।’
রাশিয়ার এমন অবস্থায় ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট তাঁর ভাষণে বলেছেন, পুতিন ‘খুব ভীত’। তিনি সম্ভবত কোথাও লুকিয়ে আছেন, নিজেকে দেখাচ্ছেন না।
কেন ওয়াগনারের বিদ্রোহ : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ওয়াগনার মুখ্য ভূমিকা রেখে আসছে। তারা অসংখ্য ইউক্রেনীয় অঞ্চল দখলে রুশ বাহিনীকে সহায়তা করেছে। তবে সংগঠনটির মালিক প্রিগোজিনের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ রয়েছে। তিনি বেশ কয়েকবার রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্জেই শোইগু এবং সেনাবাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জেরাসিমভের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। তিনি বারবার এই দুজনকে অযোগ্য এবং ইউক্রেনে যুদ্ধরত ওয়াগনার ইউনিটকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার অভিযোগ করেছেন।
গত ৫ মে প্রিগোজিন গোলাবারুদ সংকটে ইউক্রেনের বাখমুত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের হুমকি দেয় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে। হুমকি দিয়ে এক ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি নিহত ওয়াগনার সৈন্যদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে অস্ত্র ও বারুদের সরবরাহ চাইছেন।
গত শুক্রবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে একটি ওয়াগনার ক্যাম্পে হামলা করে তাদের অনেক লোককে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন প্রিগোশিন। তিনি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁর বাহিনী রাস্তা অবরোধ এবং বিমানসহ যেকোনো প্রতিরোধকে ধ্বংস করবে। এরপর ওয়াগনার সেনারা রোস্তভ-অন-দনের সেনা হেডকোয়ার্টার দখল করে নেয় এবং কিছু সেনা মস্কোর দিকে অগ্রসর হয়। তবে বেলারুশের মধ্যস্থতায় চুক্তির মাধ্যমে বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে।
কী হচ্ছে এখন : ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যাচ্ছেন। প্রিগোশিন বলেন, বেলারুশ সরকারের মধ্যস্থতায় আপাত চুক্তির পর মস্কোর দিকে পদযাত্রা থেকে তাঁর বাহিনীকে বিরত রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, পদক্ষেপটি একটি অনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে হয়েছে এবং রক্তপাত এড়ানোর উদ্দেশ্যে ছিল।
ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ওয়াগনার বস প্রতিবেশী বেলারুশের জন্য রাশিয়া ছেড়ে যেতে সম্মত হয়েছেন। তবে তাঁর বর্তমান অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।
ওয়াগনার শহর ছাড়ার পর আজ রোববার ভোর থেকে রাস্তার বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাসের খবরে বলা হয়েছে, ওয়াগনার বাহিনী দক্ষিণের শহর রোস্তভ-অন-দন ছেড়ে চলে যাওয়ায় বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে যখন ওয়াগনার সেনারা রোস্তভ থেকে উত্তরে মস্কোর দিকে যাচ্ছিল, তখন রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ তাদের পদযাত্রা থামানোর জন্য রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তাস বলছে, রোস্তভ, লিপেটস্ক এবং বিদ্রোহের সময় বন্ধ করে দেওয়া সব রাস্তার বিধিনিষেধ এখন আর নেই।
প্রিগোশিনের ভবিষ্যৎ : ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে এবং ওয়াগনারের যোদ্ধারা বিদ্রোহের জন্য কোনো আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হবে না। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ভাড়াটে দলটির প্রধানের জন্য বিপদ শেষ হয়নি।
মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর মাইক লিয়ন্স (অব.) বলেছেন, ‘ওয়াগনার একটি স্বাধীন ফাইটিং কোম্পানি। তাদের ভালো সুবিধা দেওয়া হতো, আলাদা পোশাক ছিল তাদের। আমি মনে করি না যে তারা খুব সহজে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হবে। সেখান থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। তাই আমি মনে করি একটি সমস্যা হতে চলেছে।’
মাইক লিয়ন্স বলেন, ‘হয়তো কেউ কেউ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কেউ কেউ আবার সমস্যা করার চেষ্টা করবে, ইউক্রেনকে তারা তথ্য সরবরাহ করবে। কারণ তারা প্রিগোশিনের প্রতি অনুগত, দেশের প্রতি নয়, মিশনের প্রতি নয়। আমার মনে হয় আমরা অনেক কিছু দেখছি। আবার এমন অনেক প্রশ্ন আছে, যার উত্তর এখনো নেই।’ এদিকে আরেক অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল পিটার জাওয়াক বলেছেন, ‘এটা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দুটি অস্তিত্বের লড়াই চলছে। ওয়াগনার বস প্রিগোশিন
বেলারুশের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার আপাতত চুক্তি করলেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর এটা মারাত্মক আঘাত।’
পিটার জাওয়াক বলেন, ‘প্রিগোশিন রাশিয়ানদের বিভক্ত করেছে। তাদের প্রকাশ্যে ঝগড়া বাধিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এটি পুতিন ও তাঁর শাসনের জন্য একটি মারাত্মক আঘাত।’
এছাড়া পিটার জাওয়াক রাশিয়ার রাস্তায় গত ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ভূত ঘটনাগুলোকে ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে স্পষ্ট হলো ইউক্রেনে আক্রমণটি ভুল ছিল।’
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech