কুলাউড়ার রায় গ্রামের রায় বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধ্যালগ্নে পালিত হয়ে আসছে কীর্তন

প্রকাশিত: ১:৩৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৩

কুলাউড়ার রায় গ্রামের রায় বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধ্যালগ্নে পালিত হয়ে আসছে কীর্তন
ডায়াল সিলেট ডেস্ক : হিন্দু দেবদেবীর মহিমা প্রচারমূলক গান হলো কীর্তন। যার অর্থ ধারণা বা গল্পের বর্ণনা করা, আবৃত্তি করা। মূলতঃ কীর্তন হলো দেব-দেবীর নাম, গুণাবলী বা কীর্তিকাহিনী সম্বন্ধিত গান। প্রখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দম কীর্তন গানের প্রকৃত উৎস।
হিন্দু ধর্মালম্বিদের মাঝে কীর্তন একটি নিয়মিত ব্রত। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডস্থ রায় গ্রামের ডাক্তার পানু রায় চৌধুরীর বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধ্যালগ্নে পারিবারিক ভাবে কীর্তন করা হয়। ২০২০ সালে করোনাকালীন জনসমাগম এড়িয়ে ধর্মকর্ম পালনের জন্য এ বাড়িতে শুরু করা হয় কীর্তন। এছাড়াও প্রতি বাংলা সনের মাঘ-ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে ৫ দিন ব্যাপী কীর্তন হয় বাড়ীর পাশ্ববর্তী জমিতে। জয়চন্ডী ইউনিয়ন ব্যাপী চাঁদা তোলে বাৎসরিক কীর্তনের আয়োজন করা হয়। কমিটিতে থাকেন রায়গ্রাম, মেশংকর, গৌড়িশংকর, পুশাইনগর ও জয়চন্ডী গ্রামের হিন্দু সমাজের নানা শ্রেনীপেশার মানুষ। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বার্ষিক কীর্তন পালন হয়ে আসছে।
ডাক্তার পানু রায় চৌধুরী বাড়ির মৃদুল রায় চৌধুরী জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা আরতির পর বাড়ির মহিলারা মিলে কোরাশকন্ঠে ঠাকুরের আরাধনা, ভজনগীত ও শ্যামা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, কীর্তন বাংলা সঙ্গীতের অন্যতম আদি ধারা। সাধারণ লোকের পক্ষে অতি সহজে ঈশ্বর সাধনার একটি উপায় হিসেবে এর উদ্ভব। গানের মাধ্যমে ধর্মচর্চার এ ধারা প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু ধর্মে চলে আসছে। সে ধারাবাহিকতায় বাংলার বৈষ্ণবধর্মজাত সঙ্গীতধারার বিকশিত রূপই কীর্তন। এতে সাধারণত ঈশ্বরের গুণ ও লীলা বর্ণিত হয়।
কীর্তন দুপ্রকার নামকীর্তন বা নামসংকীর্তন এবং লীলাকীর্তন বা রসকীর্তন। হরি বা বিষ্ণুকে সম্বোধন করে “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে” এ ষোল পদবিশিষ্ট কীর্তনই নামকীর্তন। অবশ্য নামকীর্তনের এ বোল ছাড়া আরও বোল আছে। সেগুলিও নামকীর্তন হিসেবেই প্রচলিত। আর রাধাকৃষ্ণ এবং গোপী-শ্রীকৃষ্ণের কাহিনী অবলম্বনে যে পালাগান হয় তা লীলাকীর্তন। পরবর্তীকালে গৌরাঙ্গ বা শ্রীচৈতন্যের কাহিনী অবলম্বনেও লীলাকীর্তনের প্রচলন হয়। কয়েকটি প্রধান লীলাকীর্তন হলো গোষ্ঠ, মান, মাথুর, নৌকাবিলাস, নিমাই সন্ন্যাস ইত্যাদি। এগুলি পদাবলি কীর্তন নামেও পরিচিত।
ইংরেজ কর্তৃক কলকাতা শহরের পত্তনের পূর্ব পর্যন্ত কীর্তন গ্রামবাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে ছিল। অর্থনৈতিক কারণে গ্রামছাড়া মানুষ যখন কলকাতায় ভিড় জমাতে থাকে তখন তাদের সঙ্গে কীর্তন, পাঁচালি ইত্যাদি সঙ্গীতধারা কলকাতার নগরসমাজে প্রবেশ করে। ওই সময় কলকাতায় ঢপকীর্তন বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় সমগ্র বাংলাদেশেই হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে কীর্তনের শ্রোতৃজগৎ ছিল বিস্তৃত। পাকিস্তান আমলেও এদেশে গ্রামে গ্রামে কীর্তন গানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। বর্তমানে এর প্রচলন সংকীর্ণ হলেও শ্রোতা আছে। আধুনিক বাংলা গানে অনেক সময় কীর্তনের মৌলিক সুর ও ভাব সংযোজনের প্রবণতাও দেখা যায়।
0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ