মৌলভীবাজার পৌরশহরের যানজট আর বাড়তি ভাড়ায় নাকাল মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ৪:৪৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০২৩

মৌলভীবাজার পৌরশহরের যানজট আর বাড়তি ভাড়ায় নাকাল মৌলভীবাজার

মনজু বিজয় চৌধুরী॥ মৌলভীবাজার পৌরশহরের চৌমোহনা থেকে কুসুমবাগের সিএনজি অটো-রিকশার ভাড়া ৫ টাকা। নিয়ম ৩ জন যাত্রী বহনের, তাই ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু যাত্রী ৫ জন বহন করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও দ্বিগুণ ভাড়া দিতে নারাজ এক যাত্রী। অপরদিকে জনপ্রতি ১০ টাকা আদায় করতে বেপরোয়া চালক। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে চলছে তুমুল বাকবিতন্ডা। এতে যোগ দেন অন্য চালক। নাজেহাল হওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে ১০ টাকা দিয়ে পার পান ঐ যাত্রী। রোববার (১৬ জুলাই) বিকেলে সেন্ট্রালরোডের এ ঘটনাটি ঘটে। এমন দৃশ্য শুধু একদিনের নয়, প্রতিদিনের।

মৌলভীবাজার শহরের পৌরসভা কর্তৃক সিএনজি অটো-রিকশার ভাড়ার তালিকা টাঙানো থাকার পরও সেন্ট্রালরোডে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ যাত্রীদের।

অতিরিক্তি ভাড়া আদায়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে শহরের পশ্চিম প্রান্তের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ যাত্রীরা।

শহরের একাধিক ব্যবসায়ী, আইনজীবি ও সুশীল সমাজের নাগরিকরা বলেন, প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন সিএনজি চালকের সঙ্গে বাগবিতন্ডা জড়াচ্ছেন যাত্রীরা। সকাল বিকাল চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন মোড়ে অপরিকল্পিতভাবে সিএনজি স্ট্যান্ড করায় শহরে তীব্র যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে উপর যত্রতত্র পার্কিং, অবৈধ যানবাহনের ছড়াছড়ি, সড়কের পাশে বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমলে পার্কিং ব্যবস্থা না রাখাই যানজটের অন্যতম কারণ। মাত্র ৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ২০-৩০ মিনিট।

শহরের একটি স্থানে যানজট হলে ছড়িয়ে পড়ে শহরে জুড়ে। এতে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হলেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। দিনের পর দিন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যানজটে এমন দুর্ভোগ চলে আসলেও তা নিরসনে প্রশাসনের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলে জানান সচেতন নাগরিকরা।

জানা গেছে, শহরের যানজট নিরসন ও নির্ধারিত ভাড়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য চলতি বছরের শুরুতেই মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সহ চার সদস্যের কমিটি একাধিক প্রস্তাব প্রদান করে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এবং তা গৃহীত হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, একধিক প্রস্তাবে ছিল, শহরে বিআরটিএ কর্তৃক প্রদত্ত প্লেট নম্বরের টমটম গাড়ীগুলোর মধ্যে জোড়া সংখ্যাধারী সবুজ ও বিজোড় সংখ্যাধারী কমলা রঙে রূপান্তর করে জোড়-বিজোড় দিন ভিত্তিক চলবে। বিআরটিএ নম্বরের প্লেট ছাড়া কোনো টমটম চলাচল করবে না। শহরের রিজার্ভ সিএনজি অটো-রিকশা যাত্রী নিয়ে প্রবেশ করে যাত্রী নামিয়ে শহর ত্যাগ করবে। রিজার্ভ ব্যতীত ভাড়ায় শহরের কোনো রোডে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না। শহরের সেন্ট্রালরোডে শুধু লাল রঙের টমটম ও রিকশা চলবে। চৌমোহনা থেকে কুসুমবাগ পর্যন্ত ভাড়া ৫ টাকা হবে।

জানা গেছে, এসব প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গত ৮ জানুয়ারি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় অনুমোদন করা হলেও প্রায় ৬ অতিবাহিত হলেও তা বাস্তবায়নে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই জেলা প্রশাসনে।

সিএনজি অটো-রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক নেতা বলেন, সিএনজি অটোরিকশা চালকদের এসব অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা বিরক্ত এবং লজ্জিত। অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কিছু চালক তা মানছে না। ফলে বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়।

জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী আসম সালেহ সুহেল বলেন, কোন অদৃশ্য শক্তির চাপে জেলা আইনশৃঙ্খলার অনুমোদিত প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করে জনগনের ভোগান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। যার কারণে জনগন সিএনজি চালকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এবিষয়ে রহস্যজনক কারণে প্রশাসন উদাসীন।

পৌরমেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, পৌর এলাকায় যানজট ও ভাড়া নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে জেলা আইনশৃঙ্খলা সভা ও বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় যে সকল সকল সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলেই জনগনের ভোগান্তি নিরসন হবে।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। আইনশৃঙ্খলা সভায় আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। সেক্ষেত্রে যানজট ও ভাড়া বিষয়ে যারা সম্পৃক্ত, বিশেষ করে পৌরমেয়র ও জনপ্রতিনিধি তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এছাড়াও সিএনজি মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে কথা হয়েছে। গত আইনশৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সভাপতি করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি বিষয়টি নিরসনে কাজ করছে এবং কিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

0Shares