প্রকাশিত: ৭:৫৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক: ২০০৮ সালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করে ১৫ বছর ধরে একই অফিসেই কর্মরত আছেন জাকির হোসেন। নানা অভিযোগে ২০১৪ সালে কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যত্র বদলি করে। তবে তদবির করে ৬ মাসের মাথায় আবার মৌলভীবাজারে ফিরে আসেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বাড়ির কাছে বিদ্যালয়ে পদায়ন, চাকরিরত শিক্ষকদের চাহিদাসম্পন্ন বিদ্যালয়ে বদলি (অনলাইন বদলি চালু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত), শিক্ষকদের অবসর ও মৃত্যুজনিত কাজসহ বিভিন্ন কাজে জেলায় কর্মরত শিক্ষকদের জিম্মি করে ঘুস নেন জাকির। উপজেলা অফিসগুলোতেও রয়েছে তার শক্ত সিন্ডিকেট। কিন্তু শিক্ষকরা হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। তবে শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদানের পরই আলাদিনের চেরাগের সন্ধান পান উচ্চমান সহকারী মো. জাকির হোসেন। অনিয়ম ও দুর্নীতি করে ইতোমধ্যে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মৌলভীবাজারে জায়গা কিনে বানিয়েছেন বাড়ি। কিনেছেন দামি গাড়ি। বিয়ে করেছেন দুটি। দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে মৌলভীবাজার সোনালী ব্যাংকে এবং নিজের নামে পূবালী ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদানের পরই ঘুস গ্রহণে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন জাকির। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক টাকার মালিক হয়ে যান। এরই মধ্যে ৩৫ লাখ টাকা দামের নিউ মডেলের একটি গাড়ি কিনে (ঢাকা-মেট্রো-গ ৩৪-২৮৯৪) ফেলেন। টাকার নেশার পাশাপাশি নারীর প্রতি নেশাও রয়েছে জাকিরের। কাজের মেয়ে হোসনে আরার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০১০ সালে তাকে বিয়ে করেন। এই হোসনে আরার নামে জেলার জগন্নাথপুর এলাকায় ৬ শতক জায়গা কিনে তিনতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি বানিয়েছেন।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার এক শিক্ষিকা স্বেচ্ছায় অবসরে যান। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, অনেক পরিচয় থাকার পরেও জাকির ভাইকে তিন হাজার টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। তিনি প্রতিটি কাজে শিক্ষকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করেন।
প্রতিবেদক তার বাসায় গিয়ে দেখতে পান হাতিলসহ দামি ফার্নিচারে ড্রয়িং রুম সাজানো। আরও দামি অন্যান্য আসবাবপত্র। সম্প্রতি তিনি কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে রাজকীয় কায়দায় ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করেছেন। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে অনেক সম্পদ। সেখানেই থাকেন প্রথম স্ত্রী।
২০২৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত কুলাউড়া উপজেলার একজন শিক্ষক বলেন, বাড়ির বিদ্যালয়ে পদায়ন করে দেবেন বলে জাকির ভাই আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় আমাকে ওই বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়নি।
অবসরে যাওয়া বড়লেখা উপজেলার এক শিক্ষক বলেন, জেলা অফিসে গেলে জাকির কাজ না করে আমাদের কাল অথবা কয়েক দিন পরে আসার কথা বলে বিদায় করে দেন। কয়েক দিন আসা যাওয়া করে বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দিয়ে কাজ করিয়েছি। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জাকিরের ঘুস গ্রহণের কথা স্বীকার করেন।
সদর উপজেলার এক শিক্ষিকা বলেন, আমার এক আত্মীয়কে চাহিদাসম্পন্ন বিদ্যালয়ে পদায়ন করতে না পেরে জাকির ভাই ঘুসের টাকা ফেরত দেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি জহর তরফদার বলেন, অনেক শিক্ষকের কাছ থেকে এ অভিযোগ শুনি। এটা আমাকে পীড়া দেয়। কিন্তু ভুক্তভোগীরা সরাসরি আমাদের কাছে বলেননি। যে কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। তবে অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী জাকির হোসেন বলেন, প্রতিদিন নানা কাজে শিক্ষকরা আমার কাছে আসেন। তাদের কাজ করে দিলে খুশি হয়ে কিছু টাকা দেন। কারও কাছ থেকে জোর করে কিংবা চুক্তি করে টাকা নেইনি।
ব্যাংকে থাকা টাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডাকঘরে আমার স্ত্রীর নামে একটা সঞ্চয়পত্র ছিল। এটা ভাঙিয়ে সোনালী ব্যাংকের কোর্ট শাখায় স্ত্রীর নামে পাঁচ লাখ টাকার এফডিআর করে রেখেছি। পূবালী ব্যাংক ওয়াবদা শাখায় মাসিক পাঁচ হাজার টাকার একটি ডিপিএস রয়েছে।’
মৌলভীবাজারে বাড়ি ও গাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক লোন এবং বন্ধু ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এগুলো করেছি। আমি এখন অনেক টাকা ঋণী।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমান বলেন, জাকিরের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় কোনো শিক্ষক আমার কাছে কখনো কিছু বলেননি। আপনি যেহেতু অনুসন্ধান করে পেয়েছেন, তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করব।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech