প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২৩
মনজু বিজয় চৌধুরী॥ শ্রীমঙ্গলে সুবিধা বঞ্চিত পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নামে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র নামীয় প্রকল্পের সাইন বোর্ড লাগিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, ঢাকা এর অর্থায়নে ও উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এর বাস্তবায়নে নির্মিত (৬ সেপ্টেম্বর-২০২১ইং, চা শ্রমিকদের জন্য টেকসই আবাসন নির্মাণের লক্ষ্যে নব-নির্মিত আবাসন এর শুভ উদ্বোধন করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি) ঘরের মধ্যে (সুফল ভোগী, শ্রীমঙ্গল ভুড়ভুড়িয়া, চা-বাগান, কাশিনাথ মৃধা‘র ঘরে) প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে গৃহায়ন প্রকল্প গৃহ প্রদান করেছে জানিয়ে কাশিনাথ মৃধা‘র ঘরে (গৃহ নং- ৬০৩) “পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র নামীয় প্রকল্পের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেন। সরকারী টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে গৃহায়ণ তহবিলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থায় পসবিদ উন্নয়ন সংস্থাকে অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য চিঠি প্রদান করেছেন। মুঠোফোনে সত্যতা স্বীকার করেছেন, পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র সরকারী টাকা আত্মসাৎ এর উক্ত ঘটনায় তদন্ত টিমের সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এর গৃহায়ন তহবিলের অডিট টিমের মধ্যে আকরাম হোসেন।
“গৃহায়ন তহবিল ঋণ” দেওয়ার নামে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি নিয়ে তালিকা করে, সে অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টাসহ নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ভরপুর সংস্থাটি দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ‘যখনই অডিট এর সময় আসে তখন সংস্থার লোক সাইনবোর্ড নিয়ে আসেন। ওই বাড়িতে লাগাও, এই বাড়িতে লাগাও। এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে এই ঘর আমরা (পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা) তৈরি করে দিয়েছে। তোমরা বলবে তোমাদেরকে ঋণ দেওয়া হয়েছিলো, সেই ঋণের টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। অডিট অফিসার আসেন এবং অডিট করে চলে যান।
প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ সংস্থাটি। উপজেলার ভুরভুরিয়া চা-বাগানের বাসিন্দা সদস্যদের নামের তালিকা গৃহায়ন তহবিলে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের নামে ১লক্ষ ৩০ হাজার করে ঋণ পাস হলেও তাদেরকে ২৫% সুদে ৩০ হাজার বা ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।’ ভুক্তভোগী সদস্যরা হলেন, রিপন মৃধা (গৃহ নং- ৬৪৯), কাশিনাথ মৃধা ( গৃহ নং- ৬০৩), ধনু ভর, মিঠুন হাজরা, আকাশ দোষাদ, রঞ্জিত রবি দাস, বিধান রবি দাসসহ অনেক । এখানে কাশীনাথ মৃধার ঘরটি জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, ঢাকা এর অর্থায়নে ও উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এর বাস্তবায়নে নির্মিত।
তেমনি ভাবে খাইছড়া চা-বাগানে প্রদুপ তাঁতী, নিপেন তাঁতী, দয়াল বুনার্জীসহ বিভিন্ন লোকজনদের কাছ থেকে জানা যায়, “এখানে কাউকে সংস্থা কর্তৃক ঘর করে দেওয়া হয়নি। ২০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছেন। হটাত একদিন পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র প্রধান নির্বাহী একটি সাইনবোর্ড ও একটি বই নিয়ে তার কাছে যায় এবং বলে যে, অডিট আসলে এই সাইন বোর্ডটি দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখবেন। এবং তাকে চা-পান খাওয়ার জন্য ৫০০শত টাকা প্রদান করেন। একই ভাবে ভাড়াউড়া চা-বাগানের পিনকা হাজরা, মিঠুন রিকিয়েশন, জীবন রিকিয়েশন, সবুজ দেব, রাজু মৃধা, বিঞ্চু হাজরা, ফুল ছড়া চা-বাগানের চিরজ্জীত বুনার্জী, বিজয় ভৌমিক, আকাশ গোয়ালা, সুমন বাই, রাজঘাট চা-বাগানের দুলাল বুনার্জি, আলতা কারিয়াসহ প্রায় ২৫০ জনের দুইটি তালিকা গৃহায়ন তহবিলে প্রেরণ করা হয়। দুইটি প্রকল্প হলো, সবার জন্য বাসস্থান ও মুজিব শতবর্ষ। উক্ত দুইটি প্রকল্পে সংস্থাটিকে বাংলাদেশ ব্যাংক এর গৃহায়ণ তহবিল ঋণ প্রদান করেছে প্রায় ২ কোটি ৪০ হাজার টাকা।” সূত্রে জানা গেছে, যাদের ভিটে-মাটি আছে, ঘর নেই এমন দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী পরিবারকে বসতঘর তৈরির জন্য ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহায়ন তহবিল গঠন করেন। তহবিলের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এর একটি ইউনিট ২ শতাংশ সুদে তহবিল নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার কথা। ২২০ থেকে ৩০০ বর্গ ফুটের একটি ঘর বানানোর জন্য একজন গ্রাহককে ৯ বছর মেয়াদে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়ার কথা। পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র নামীয় এনজিও সরকারী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন মানুষদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং ঋণের বিপরীতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় সংগ্রহ করে। পরে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকার প্যাকেজ থেকে ওই সংস্থা‘র হাতে গোনা কয়েক সদস্যকে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঋণের সুদের হার ১ বছরের জন্য সাড়ে ১২% এবং ২ বছরের জন্য ২৫ %করে নেওয়া হচ্ছে। যেখানে ৯ বছর মেয়াদে ৬% সুদ নেওয়ার কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুড়ভুড়িয়া চা-বাগানের কাশীনাথ মৃধা বলেন, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, ঢাকা এর অর্থায়নে ঘর সরকার তৈরি করে দিয়েছে। পসবিদ হতে আমি লোন হিসাবে ৫০ হাজার ঋণ নিয়েছি। অডিটের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাগানী মানুষ, আমার বাড়ীতে একদিন পসবিদ এর লোক এসে একটি সাইনবোর্ড রেখে যায়। এবং আমাকে বলে অডিটে লোক আসলে আমি যেন বলি আমি তাদের কাছ থেকে টাকা এনেছি। কিন্তু অডিট আসার পর তারা যে সুযোগ নিয়ে আমার ঘর পসবিদের ঘর বলে চালিয়ে দিবে এটা বুঝতে পারিনি। আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে। আমি এর বিচার দাবী করছি। কালীঘাট ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা বলেন, ওই সংস্থা মানুষকে ঋণ দেয় শুনেছি। কিন্তু কোনও সদস্যকে ঘর বানিয়ে দিয়েছে এটা শুনিনি। কাশীনাথ মৃধার ঘর সম্পূর্ণ সরকারী খরচে তৈরি করা হয়েছে। ওই ঘরের সামনে নামফলক ও রয়েছে। এই ঘর কোনও সংস্থা কিভাবে তৈরি করে দিতে পারে। কালীঘাট ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রতিনিধি শাওন পাসি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি প্রধান নির্বাহী আজাদ আলী অনেক সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এখন ঋণ দিতে তাল বাহানা করছেন। তার নিজ এলাকায় কোন ঘর নির্মাণ করে দেয়নি বলে তিনি দাবী করেন। কালীঘাট ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রতিনিধি ইদ্রিস আলী বলেন, পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা এলাকায় কিছু সদস্যদের ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করেছে। কিন্তু কোনও সদস্যকে ঘর বানিয়ে দেয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র সাবেক ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র বিভিন্ন দুর্নীতি, সদস্য হয়রানী এবং পসবিদ এর হয়রানি বিষয়ে মার্চ মাসে পৃথক দুইটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে ওই সংস্থাটির সকল দুর্নীতির তথ্য প্রমানসহ সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। অপর এক প্রশ্নে তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন যে, পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা কোনও সদস্যকে ঘর বানিয়ে দেয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র প্রধান নির্বাহী‘র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র সরকারী টাকা আত্মসাৎ এর উক্ত ঘটনায় তদন্ত টিমের সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এর গৃহায়ন তহবিলের অডিট টিমের মধ্যে আকরাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এর গৃহায়ণ তহবিলের অডিট টিম যতবারই ভিজিট করেছেন প্রত্যেকবার এমন অভিযোগ ও বাস্তব সমস্যা পেয়েছেন। গৃহায়ণ তহবিলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা হিসেবে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থাকে অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech