জুড়ীতে কয়েকদিন পর পর চলে টিলাকাটার মহোৎসব: টিলা কেটে মাল্টা বাগান!

প্রকাশিত: ১১:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২৩

জুড়ীতে কয়েকদিন পর পর চলে টিলাকাটার মহোৎসব: টিলা কেটে মাল্টা বাগান!

ডায়াল সিলেট ডেস্ক: সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী পাহাড় ও টিলা বেষ্টিত একটি উপজেলা। এসব টিলা ও পাহাড় গুলোর প্রতি রয়েছে ভূমি খোকোদের কু-নজর। দিন ও রাতের বেলায় প্রকাশ্যে টিলা কাটলেও সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের পর দায়সারা শাস্তির কারণে টিলা খোকোরা বেপরোয়া। দিনের পর দিন পাহাড় কেটে প্রকৃতিকে ধ্বংস করলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রয়েছেন অন্ধকারে। মাঝে মাঝে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ থাকলেও কয়েকদিন পর আবারো চলে টিলাকাটার মহোৎসব। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে পাহাড় ও টিলা। তবে এক শ্রেণির অসাধু ভূমিদস্যুরা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে পাহাড়কেটে সাবাড় করছে। কোন কিছুতেই যেন পাহাড় কাটা থামানো যাচ্ছে না। পাহাড় কাটা বন্ধ তো দূরের কথা দিন দিন পাহাড় কেটে সাবাড় করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য পড়েছে হুমকির মুখে। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে ফলের বাগান করার অজুহাতে টিলা কেটে সাবাড় করা হয়েছে। টিলা কেটে ভারসাম্য নষ্ট করার পরও এসব দেখেও না দেখার ভান করছে উপজেলা প্রশাসন। নিজস্ব ফায়দা লুটতে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি, আবাস্থল গড়ে তোলাসহ নানা স্বার্থে এসব পাহাড়গুলোকে নির্বিচারে বিলীন করে দিচ্ছে। অথচ ১৯৯৫ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের এর ৬ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।

সরেজমিন উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের ভরাডহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মৃত আব্দুল হাছিবের ছেলে জাবেদুল আলম সিপার বসতভিটার পাশের  উঁচু পাহাড়ের মাঝখানের মাটি কেটে সমতল করে সরকারি খরচে মাল্টা বাগান করেছেন। টিলা কাটার বিষয়টি যাতে লোকজনের নজরে না পড়ে সেজন্য গাছ-গাছালি দিয়ে এটাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। সে সঙ্গে টিলার চূড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করেছেন‌।

এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প  ২০২২/২০২৩ অর্থবছরের আওতায় ভরাডহর এলাকার মৃত আব্দুল হাছিবের ছেলে জাবেদুল আলম সিপারকে ৬০ টি মাল্টার চারা প্রদান করা হয়। টিলা কাটা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে কাটা টিলায় প্রকল্প দেওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

টিলা কেটে বাগান করা জাবেদুল আলম সিপার বলেন, আমাদের বাড়ীর এ অংশে ৪০/৫০ বছর যাবদ আমাদের বসবাস। তাছাড়া এখানে সরজমিনে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এসে দেখে মাটি কেটে সমান করতে বলায় আমি মাটি কেটেছি। এরপর তিনি এখানে মাল্টা বাগান দিয়েছেন। টিলা কাটা নিষেধ থাকলে তিনি মাল্টা বাগান দিতেন না।

এ ব্যাপারে সাগরনাল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন টিলা কাটা নিষিদ্ধ তা আমার জানা নাই থাকায় ওই ব্যক্তি কে মাল্টা বাগান প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান খান বলেন, যিনি বাগান করেছেন তিনি টিলা কেটেছেন, আমরা কাটি নি। এখানে আমাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। যেখানে টিলা কাটা আইন বিরোধী সেখানে সরকারি টাকায় প্রকল্প বাগান করার যুক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোন সুদোত্তর দিতে পারেননি।

আলাপকালে স্থানীয় সচেতন মহল জানান, যেভাবে প্রভাবশালীরা নির্বিচারে ও অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটছে তাতে করে তা জনজীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। পাহাড়ের তলে কিংবা পাহাড়ে যেসব বাড়িঘর রয়েছে ভারী বর্ষণে যেকোনো মুহূর্তে ধসে গিয়ে প্রাণহানি হবে এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তারা আরো বলেন, প্রশাসন টিলা কাটার বিরুদ্ধে কখনও কখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আবার থমকে যায়। প্রভাবশালীসহ অনেক জনপ্রতিনিধি দিন দিন টিলা কেটে পাহাড়ি জনপদগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মোঃ মাইদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রঞ্জন চন্দ্র দে বলেন, টিলা কাটার বিষয়টি জেনেছি। তবে আইন অনুযায়ী টিলা কাটা অবস্থায় খবর পেলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। যেহেতু বিষয়টি পরে জেনেছি তাই পরিবেশ অধিদপ্তর কে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হবে। কাটা টিলায় সরকারি প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ