ডিজিটাল ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে সিলেট বেতার কেন্দ্রকে

প্রকাশিত: ২:২৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০২৩

ডিজিটাল ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে সিলেট বেতার কেন্দ্রকে

ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রকে আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য নতুন করে টাকা চেয়েছে বাংলাদেশ বেতার। সিলেট কেন্দ্র ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন করে এ অর্থ চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে অনেক পণ্যের মূল্য অনুমাননির্ভর উল্লেখ করে সম্মানি, মনোহারি, আপ্যায়নসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। মূল প্রকল্পের ব্যয় ৫৬ কোটি ২২ লাখ টাকা হলেও এখন নতুন করে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১০১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

 

প্রস্তাবিত নানা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনা কমিশন মতামত দিয়ে জানায়, ভ্রমণভাতা খাতে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার, ইন্স্যুরেন্স ও ব্যাংক খাতে ১৮ লাখ, কমিশন/ইন্টারেস্ট খাতে ২০ লাখ, প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে পাঁচ লাখ, আপ্যায়ন খাতে তিন লাখ ৭৫ হাজার, পরিবহন খাতে ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার খরচের বিষয়ে বিস্তারিত জানার দরকার। সম্মানি খাতে ১০ লাখ, হায়ারিং চার্জ খাতে ১৭ লাখ ২০ হাজার, অন্য মনোহারি খাতে পাঁচ লাখ, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি খাতে তিন লাখ, আসবাবপত্র খাতে ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার, অন্য ভবন ও মেরামত খাতে এক কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার, সিডি ভ্যাট খাতে ১০ কোটি ১৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।

 

পরিকল্পনা কমিশন আরও জানায়, অর্থায়নের ধরনের ক্ষেত্রে ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) উল্লেখিত ছক সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। লগফ্রেম সঠিকভাবে প্রণয়ন করা হয়নি। যথাযথভাবে লগফ্রেম প্রণয়ন করতে হবে।

 

পরিকল্পনা কমিশনের প্রশ্ন তোলা প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নতুন করে অনেক কিছু কেনাকাটার প্রস্তাব করেছি। সরকার যদি চায় অনুমোদন হবে, না চাইলে হবে না।’

 

প্রকল্প গ্রহণের শুরুতে কেন এমন কেনাকাটার প্রস্তাব করা হয়নি- এ প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। তার মধ্যে একটা আর্থিক বিষয়। জরুরিভিত্তিতে এটা লাগবে বলবো না। সরকার যদি মনে করে জরুরি, জরুরি না মনে করলে জরুরি না। তারা (পরিকল্পনা কমিশন) মিটিংয়ে যাচাই-বাছাই করবে। সরকার যদি মনে করে কিছু ব্যয় বাদ দেবে বা কমাবে এটাও সরকারের সিদ্ধান্ত।’

 

বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রের সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আকর্ষণীয় এবং উচ্চ কারিগরি মানসম্পন্ন বেতার অনুষ্ঠান সম্প্রচার নিশ্চিতকরণ, মানসম্মত অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে বেতার সম্প্রচারকে সিলেট অঞ্চলের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকা রাখতে সাহায্য করা এবং শিক্ষার হারে সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার হার বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

 

এছাড়া সিলেট কেন্দ্রের সম্প্রচার কাভারেজ বাড়িয়ে হাওর ও চা বাগান এলাকার অনগ্রসর জনগণের দোড়গোড়ায় বেতার অনুষ্ঠান পৌঁছানো, হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যায় করণীয় ও বন্যা পরবর্তীসময়ে করণীয় সম্পর্কিত অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা, দারিদ্র্য বিমোচন, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, কৃষির উন্নয়ন, শিশু-শিক্ষা ও অন্য প্রাসঙ্গিক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে সহায়তা করা প্রভৃতি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

 

প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করায় বর্ধিত সময়ের জন্য আপ্যায়ন, সম্মানি, হায়ারিং চার্জ, অন্য ব্যয়সহ ৯৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ছে।

 

ডিপিপিতে প্যাকেজ ডব্লিউডি-১ এর আওতায় পাঁচতলা ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়ছে। এর প্রতিটি ফ্ল্যাটে সেমি ডাবল খাট, একটি টেবিল, আলনা, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, নিচতলায় ক্যান্টিনের টেবিল-চেয়ার এবং একটি কনফারেন্স টেবিল-চেয়ার কেনা হবে। এজন্য আসবাবপত্র খাতে অতিরিক্ত ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

টিলাগড় প্রেরণ কেন্দ্র প্রকল্পের একটি এলাকা। প্রেরণ কেন্দ্রটির ৬০ বিঘা জমির ওপর মিডিয়াম ওয়েভ ট্রান্সমিটার এবং প্রেরণ কেন্দ্রের ট্রান্সমিটার ভবন নির্মাণ ও পুলিশ ব্যারাক নির্মাণ করা হবে। জেনারেটর ও সাব-স্টেশন কক্ষ নির্মাণ গণপূর্ত বিভাগ সিলেট বাস্তবায়ন করছে। গণপূর্ত বিভাগের রেট শিডিউল ২০২২ থেকে যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় ক্যাবল কেনার জন্য অতিরিক্ত ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার প্রয়োজন।

 

সিলেট বেতার কেপিআইভুক্ত এলাকা হওয়ায় ১৫০ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ও পাঁচতলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ডরমিটরিতে প্রবেশের জন্য আলাদা গেট-স্ক্যানারসহ কক্ষ তৈরির জন্য গণপূর্ত বিভাগের রেট শিডিউল ২০২২ অনুযায়ী মোট ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা দরকার। ডব্লিউডি-৩৩ এর আওতায় প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক, স্টুডিও ফটক নতুন করে নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যে প্যাকেজটি রয়েছে তার অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় ৪০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

 

সার্ভার রুম ও সিকিউরিটি সিস্টেম কক্ষের জন্য পাঁচ টনের তিনটি এসি এবং দুই টনের তিনটি এসি কেনার জন্য অতিরিক্ত ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকার প্রয়োজন।

 

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক বাড়ায় সিডি ভ্যাট খাতে অতিরিক্ত ১০ কোটি ১৪ লাখ ৭২ হাজার টাকার প্রয়োজন।

 

মূল প্রকল্পটি জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। মূল প্রকল্পের ব্যয় ৫৬ কোটি ২২ লাখ টাকা হলেও এখন নতুন করে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১০১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে জুন ২০২৪ পর্যন্ত। জুন ২০২৩ পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৭০ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, ৮০ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৮২ শতাংশ।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ