টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার ৩৪ শিক্ষার্থী ‘শিবির কর্মী’

প্রকাশিত: ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০২৩

টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার ৩৪ শিক্ষার্থী ‘শিবির কর্মী’

টাংগুয়ার হাওরে আগত পর্যটকদের জন্য ১০ দফা নির্দেশনা প্রশাসনের

 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যাওয়ার নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩৪ শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। সোমবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ফারহান সাদিকের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

 

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২৪ জন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী।

 

রবিবার বিকেলে এই ৩৪ জনকে আটক করে তাহিরপুর থানা-পুলিশ। তবে ওইদিন বিষয়টি গোপন রাখে পুলিশ। সোমবার দুপুরে তাদের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানার এক উপপরিদর্শক বাদি হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এরপর থেকেই বিষয়টি জানাজানি হয়।

 

গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশের একটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে।

 

পুলিশের দাবি, এই শিক্ষার্থীরা হাওরে বেড়ানোর বাহানায় এখানে গোপন বৈঠক ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে এসেছিলেন। জননিরাপত্তা বিঘ্নিত ও মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্য ছিল তাদের।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বলেন, পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারে এসব শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে হাওরে জড়ো হয়ছে। তাই তাদের আটক করে রবিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সোমবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তিনি বলেন, আটক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে পুলিশের সময় লেগেছে। অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

 

গ্রেপ্তার বুয়েটের শিক্ষার্থীরা হলেন আফিফ আনোয়ার, বখতিয়ার নাফিস, মো. সাইখ, ইসমাইল ইবনে আজাদ, সাব্বির আহম্মেদ, তাজিমুর রাফি, মো. সাদ আদনান, মো. শামীম আল রাজি, মো. আবদুলাহ আল মুকিত, মো. জায়িম সরকার, হাইছাম বিন মাহবুব, মাহমুদুর হাসান, খালিদ আম্মার, মো. ফাহাদুল ইসলাম, তানভির আরাফাত, এ টি এম আবরার মুহতাদী, মো. ফয়সাল হাবিব, আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী, আলী আম্মার মৌয়াজ, মো. রাশেদ রায়হান, সাকিব শাহরিয়ার, ফায়েজ উস সোয়াইব, আবদুর রাফি ও মাঈন উদ্দিন।

 

অন্যরা হলেন আবদুল বারি, মো. বাকি বিল্লাহ, মাহাদি হাসান, টি এম তানভির হোসেন, আশ্রাফ আলী, মো. মাহমুদ হাসান, মো. এহসানুল হক, রাইয়ান আহম্মেদ, তানিমুল ইসলাম ও মো. আবদুল্লাহ মিয়া।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলা বাজারের নৌকাঘাট থেকে রবিবার সকাল ৭টায় একটি নৌকায় করে ৩৪ শিক্ষার্থী টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। হাওরে ঘোরার পর দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে ট্যাকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে নতুনবাজারের সামনে নৌকাটি আসলে পুলিশের দুটি স্পিডবোট নিয়ে তাদের গতিরোধ করে। এসময় নৌকার চালক আহাদুল মিয়া, মুহাদ্দিস মিয়াসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

 

সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মোমতাজুল হাসান আবেদ বলেন, এসব শিক্ষার্থীকে আটকের পর ঢাকা থেকে জানানো হয়, এখানে তাঁদের সংগঠনের দু-একজন কর্মী আছেন। তাঁরা হাওরে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু রবিবার বিকেল থেকে থানায় যোগাযোগ করেও তাঁদের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

 

টাংগুয়ার হাওরে আগত পর্যটকদের জন্য ১০ দফা নির্দেশনা প্রশাসনের

 

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে আগত পর্যটক ও পর্যটকবাহী নৌযানের নিরাপত্তায় ১০ দফা নির্দেশনা জারি করেছে মধ্যনগর থানা পুলিশ প্রশাসন।

 

হাওরের পরিবেশ রক্ষা, নৌ দুর্ঘটনা এড়ানো, গণউপদ্রব রোধ এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এ ১০ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল হক।

 

তিনি বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এই নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি নৌযান চালক ও পর্যটকেরা এই নির্দেশনা মেনে চলে নিজেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রাকৃতি সুন্দর্য মন্ডিত টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশকে ঠিক রাখবেন। এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।’

 

নির্দেশনা গুলো হলো-

 

কোন নৌযানে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত পর্যটক বা যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।

 

নৌযান চলাচলের সময় কিংবা পানিতে নামার সময় প্রত্যেক পর্যটক এবং নৌচালক আবশ্যিকভাবে লাইফ জ্যাকেট পরিধান করবেন।

 

বিরূপ আবহাওয়া থাকলে নদীতে কিংবা হাওরে ভ্রমণ করা যাবে না।

 

প্রতিটি নৌযানকে হাওর বাননদীতে যাত্রা শুরুর অন্তত ৬ ঘণ্টা পূর্বে নির্ধারিত ফরমে মধ্যনগর থানার ডিউটি অফিসারকে (মোবাইল নম্বর-০১৩২০-১২১০৫৫) অবহিত করতে হবে।

 

পর্যটকগণকে ও নৌচালকগণকে নৌযানে এবং স্থলভাগে চলাচলের সময় মাঙ্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

 

প্রতিটি নৌযানে এবং নৌঘাটে ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য নির্ধারিত ডাস্টবিন এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নৌযান মালিক সমিতি এবং নৌচালকগণ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

 

নির্ধারিত স্থান ছাড়া হাওর বা নদীর পানিতে বা স্থলভাগের কোথাও কোন ধরনের ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না।

 

পর্যটকবাহী নৌযান যেকোন স্থলভাগের কাছাকাছি অবস্থানকালে উচ্চশব্দে কোন ধরনের মাইক বা লাউড স্পীকার বাজাতে পারবে না।

 

প্রতিটি নৌযান, পর্যটকদের জন্য মানসম্মত পরিবেশ তথা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পর্যাপ্ত সুবিধাদি নিশ্চিত করবে। পর্যটকগণকে তাদের সার্বক্ষণিক নিজস্ব দায়িত্বে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

নোঙরের স্থানে দুষ্কৃতিকারীরা থাকতে পারে। তাদের থেকে পর্যটকগণকে সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ