প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক: সাবেক সংসদ সদস্য ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন বলেছেন,প্রবাসীরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক।
বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রযাত্রার সবচেয়ে বড় শক্তি। তার মতে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি ছাড়াও শিক্ষা, চিকিৎসা, তথ্যপ্রযুক্তি সবকিছু প্রবাসীদের ঘিরেই আবর্তিত হবে। আজকের যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, এর পেছনে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য।
সোমবার ৩১ জুলাই স্থানীয় সময় রাত আটটায় জ্যাকসন হাইটসের ব্রুশ ফিশার ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
নিউইয়র্কের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি প্রবাসীদের জন্য জাতীয় সংসদে ৩০টি আসন সংরক্ষণের দাবি জানানোর পাশাপাশি তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এম এম শাহীন আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন এবং নির্বাচনে যার যার অবস্থান থেকে তার পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য সকল প্রবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
ইতিপূর্বে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এম এম শাহীন বলেন, সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি প্রবাসীদের পক্ষে সংসদে এবং সংসদের বাইরে রাজনীতির ময়দানে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। তার বিভিন্ন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়িত হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠন, প্রবাসীদের জন্য পূর্বাচলে ৩৩০০ প্লট বরাদ্দ, বারিধারায় ৫ শতাধিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, ন্যাম ভবনে শতাধিক ফ্ল্যাট বরাদ্দ, রাজউকের নিকট প্রবাসীদের পাওনা টাকা ফেরত, ইস্কাটনে ১৮ তলা ভবন নির্মাণ, প্রবাসী ডেস্ক স্থাপন, এয়ারপোর্টে গ্রিন চ্যানেল, প্রবাসী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার, বিদেশযাত্রায় প্রবাসীদের মেডিকেল শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না করে বিভাগীয় শহরগুলোতে করার ব্যবস্থা ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন,তারই প্রস্তাবে জাতীয় সংসদে ভূমি সংস্কার আইন সংশোধন করা হয়েছে। তার প্রস্তাবিত হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব বর্তমান ও পূর্বের সরকারগুলো বাস্তবায়ন করেছে। তারই প্রস্তাবে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমান চলাচল এবং নিউইয়র্কে সোনালী এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম চালু হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০০০ সালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের জন্য ১০ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য সংসদে ১০টি সংরক্ষিত আসন ছাড়া বাকি ৯টি তৎকালীন মন্ত্রী বিবেচনার আশ্বাস দেন। পর্যায়ক্রমে এগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে।
নিজেকে একজন দেশপ্রেমিক প্রবাসী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীন বলেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে তিনি প্রবাসীদের অধিকার আদায়ে আরও কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান।
তার এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, প্রবাসীদের মধ্য থেকেই সব সময় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নিয়োগ, যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে পুনরায় বিমান ফ্লাইট চালু, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের বিশেষ মর্যাদা প্রদান এবং হয়রানি বন্ধে সার্বক্ষণিক তদারকি ও সরাসরি হটলাইন চালু, দেশে বিমান ও রেলযাত্রী হিসেবে প্রবাসীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ, জাতীয় পতাকাবাহী বিমানকে দেশে দেশে ব্র্যান্ডিং করা, প্রবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে আরও ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের পাসপোর্ট, জন্মসনদ ও এনআইডি দ্রুত পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
প্রবাসীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষায় অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ সেল গঠন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নির দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা নিরসন, রাজউকের হাউজিং প্রকল্পে প্রবাসীদের জন্য প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের সংখ্যা বাড়ানো, দেশে কোনো প্রবাসী হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম নিষ্পত্তি করা, দেশে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য স্থায়ীভাবে প্রণোদনা দেওয়া এবং প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা, প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রবাসী ব্যাংক স্থাপন করা এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে প্রবাসীদের জন্য আলাদা পল্লি গড়ে তোলা, যাতে অবসরজীবনে যেসব প্রবাসী দেশে থাকতে চান এবং তারা সেখানে নিরাপদে থাকতে পারেন।
চার দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হওয়া এম এম শাহীন আরও বলেন, প্রবাসজীবনের শুরুতে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেও তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটি বিনির্মাণে উদ্যোগী হন।
তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা কর্মকাণ্ডে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। তার দাবি, নিউইয়র্কে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ, প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন, প্রথম বনভোজন করা, প্রথম শহীদ দিবস পালন, প্রথম স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উদ্্যাপন, জাতীয় তারকাদের নিয়ে প্রথমবারের মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এ রকম বহু প্রথমের অন্যতম উদ্যোক্তা কিংবা সাক্ষী তিনি।
দেশের সঙ্গে প্রবাসের সেতুবন্ধ রচনার লক্ষ্যে ৩৪ বছর আগে বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশ করেন ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’। রেমিট্যান্স-যোদ্ধা নয়, প্রবাসীদের উন্নয়ন-যোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান সোপান রেমিট্যান্স।
দেশের অর্থনীতিতে এই রেমিট্যান্স অক্সিজেনের মতো ভূমিকা পালন করছে।২০০৮ সালের বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সংকটমুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছিল রেমিট্যান্স। ২০২১-২২ সময়ে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিকে নতুন এক পরীক্ষার সম্মুখীন করে।
কিন্তু এই সংকটময় সময়েও দেশের অর্থনীতির ওপর কোনো আঁচ লাগতে দেননি দেশপ্রেমিক প্রবাসীরা। বাংলাদেশ যতগুলো বৈশ্বিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কারণে সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছে। গত পাঁচ দশকে দেশের অর্থনীতিতে এই রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
দেশে গিয়ে প্রবাসীদের হয়রানির শিকার হওয়া প্রসঙ্গে ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত সংসার, সমাজ তথা দেশের ঘানি টেনে ক্লান্ত হয়ে একটু সুখের পরশ লাভের প্রত্যাশায় যখন দেশে ফেরেন, তখন তাদের জন্য অপেক্ষা করে সীমাহীন লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অবহেলা ও পদে পদে হয়রানি।
বিমানবন্দর থেকে পরিবার সর্বত্রই যেন প্রবাসীদের জন্য ফাঁদ পাতা। দেশের বিমানবন্দরে কন্ট্রাক্ট বাণিজ্য, ইমিগ্রেশনে হয়রানি, লাগেজ সমস্যা, দেশের বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে হয়রানি।
এত ঝক্কি পেরিয়ে বাড়ি ফিরেও নেই স্বস্তি। এলাকার মাস্তানদের চাঁদাবাজির শিকার। চাঁদা না দিলে হুমকি-ধমকি। শারীরিকভাবেও অনেকে লাঞ্ছিত হন। দীর্ঘদিন প্রবাসে অবস্থান করায় অনেক প্রবাসীর জমিজমা, সহায়-সম্পদও প্রভাবশালীরা এমনকি নিকটাত্মীয়রাও দখল করে বসে থাকে।
এসব নিয়ে মুখ খুললে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর ওপর নেমে আসে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের খড়গ। শুধু তা-ই নয়, এ নিয়ে হামলা-মামলারও শিকার হন প্রবাসীরা। ভয়ে বিচার চাইতেও পারেন না।
প্রবাসীকে এমনভাবে হয়রানি করা হয়, যাতে তিনি সব ছেড়ে দেশ থেকে আবার প্রবাসে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
এমন অনেক ঘটনাও আছে, সম্পত্তির দখল বুঝে পাওয়া তো দূরের কথা, কেবল প্রাণ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিমানবন্দরে এসে বিদেশে ফেরত এসেছেন। এসবের অবসান হওয়া দরকার। আর এসব কারণেই প্রবাসীদের পক্ষে কথা বলতে তিনি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে চান।
সংবাদ সম্মেলনে এম এম শাহীন প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দেশের স্থানীয়-জাতীয় যেকোনো নির্বাচনে শ্রম ও অর্থ দিয়ে নিজ নিজ এলাকার প্রবাসী প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ান।
প্রয়োজনে নির্বাচনের সময় দেশে গিয়ে অথবা প্রবাসে বসেই নিজের আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের উদ্বুদ্ধ করুন প্রবাসী প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে। জাতীয় নির্বাচনে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কোনো প্রবাসী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে এলাকা-নির্বিশেষে সকল প্রবাসীর উচিত তার পক্ষে দাঁড়ানো।
কারণ সময় এসেছে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে প্রবাসীদের কণ্ঠস্বর জোরদার করার। দেশে প্রবাসীদের জনপ্রতিনিধিত্ব যত বাড়বে, সার্বিক মানোন্নয়নে দেশ তত দ্রুত পাল্টে যাবে, পাশাপাশি প্রবাসীদের সম্মান ও মর্যাদার ন্যায্য হিস্যা আদায় করা ততটাই সহজ হবে। আমাদের নিজেদের সম্মান নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে।
সবশেষে এম এম শাহীন বলেন, প্রবাসীরা বিজয়ী হলে দেশ বিজয়ী হবে। সকল ভেদাভেদ ভুলে প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হলেই সেটা সম্ভব।
এ জন্য তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মূল্যবান সময় দেওয়ায় তিনি সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ এবংকৃতজ্ঞতা জানান।
সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান, নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি শাহ নেওয়াজ, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম ও কুলাউড়া প্রবাসী প্রবীণ ব্যক্তিত্ব গিয়াস উদ্দিন।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech