সদর সাব-রেজিস্ট্রারকে হুমকির অভিযোগে নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদকে বহিষ্কার

প্রকাশিত: ৪:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২৩

সদর সাব-রেজিস্ট্রারকে হুমকির অভিযোগে নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদকে বহিষ্কার

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতি এবং সাব রেজিস্ট্রারকে হুমকির অভিযোগ ওঠেছে। হুমকির অভিযোগে সোমবার তাকে বহিষ্কার আদেশ প্রদান করেন সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমান। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বালাম বহিতে নকল লিখার কাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয় তাকে।

 

জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তর অফিস থেকে একটি আদেশ আসে দেশের সকল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। তাতে বলা হয়- বালাম বহিয়ের লিপিবদ্ধ কাজে উদাসীনতা, কাজে দায়িত্ব পালন না করা, মাসিক কার্যবিবরণী প্রস্তুত না করে মাসিক পারিশ্রমিক নিচ্ছেন এমন নকলনবীশদের শনাক্ত করার। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নকলনবীশদের প্রতিদিন ১২ পৃষ্ঠা করে মাসিক ৩০০ পৃষ্ঠা দৈনিক বালাম বহিয়ে লিপিবদ্ধ করা এবং দৈনিক কার্যসম্পাদনের ডায়েরি লিখা বাধ্যতামূলক। এমন আদেশে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান স্মারক নং-৩৬৫ এর মাধ্যমে কার্যালয়ে নিয়োজিত নকলনবীশদের ১২ মাসের পৃথক কার্য তালিকা তৈরীর আদেশ প্রদান করেন। জানা গেছে, সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নিয়োজিত সকল নকলনবীশদের পৃথক কার্যতালিকা মিললেও নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদের কার্য তালিকায় মিলে ভিন্ন তথ্য। তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের বালাম বহিতে প্রতিদিন ১২ পৃষ্ঠা করে মাসিক ৩০০ পৃষ্ঠা লিপিবদ্ধ করেননি। এছাড়া দৈনিক কার্যসম্পাদনের ডায়েরিও লিখেননি তিনি। এমতাবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অফিসে কর্মরত আছেন। এ ঘটনায় নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদের বেতন-বিল বন্ধ করেন সিলেট সদর সাব- রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান।

 

২৫ জুন দুপুর ২টায় নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদকে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আপাতত তার বেতন প্রদান করা যাবে না তাকে অবহিত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুরাদ সদর সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমানের সাথে অশালীন আচরণ করেন এবং তিনি কীভাবে অফিস করেন তা তিনি দেখে নেবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। পরে এ ঘটনায় সদর সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান ২৬ জুন স্মারক নং-৩৪৬-এর মাধ্যমে সিলেট জেলা-রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমানের কাছে অভিযোগ করেন। এছাড়াও এই অভিযোগের অনুলিপি সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন অফিসে প্রেরণ করেন। তাকে হুমকির পাশাপাশি তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদের কথামতো অফিস না চললে এই অফিসে বড় ধরনের দাঙ্গা সৃষ্টি বা নাশকতা করবেন বলে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুল মালিককে হুমকি প্রদান করেন। বেলাল আহমদ মুরাদের এমন আচরণ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিরাপত্তা, সুষ্ঠু পরিবেশ ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অফিসের দলিল ও রেকর্ডপত্রের নিরাপত্তা বিধানের মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

 

এদিকে, এ ঘটনায় সিলেট জেলা-রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমান ৪ জুলাই বালাগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার মো. হাফিজুর রহমানকে সভাপতি, বিশ্বনাথের সাব-রেজিস্ট্রার মেসবাহ উদ্দিন আহমদ ও কোম্পানীগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার মো. আখলাকুর রহমানকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন প্রদান করার নির্দেশ দেন। পরে ১৬ জুলাই তদন্ত কমিটির সভাপতি বালাগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার মো. হাফিজুর রহমান স্মারক নং-১০৭ এর মাধ্যমে ১৯ জুলাই নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদকে বক্তব্য ও অন্যান্যকে তদন্তে সহযোগিতার জন্য জানান। এসময় মুরাদ তার লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।

 

পরে তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতাসহ নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদ দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বালাম বহিতে প্রতিদিনের ১২ পৃষ্ঠা করে মাসিক ৩০০ পৃষ্ঠা লিপিবদ্ধ করেননি এবং দৈনিক কার্যসম্পাদনের ডায়েরিও লিখেননি বলে এর সত্যতা পায়। এ সকল প্রমাণসহ সিলেট জেলা-রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমানের কাছে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদকে অফিস থেকে সাময়িক বহিষ্কার (পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বালাম বহিতে নকল লিখার কাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ) প্রদান করেন সিলেট জেলা-রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমান। হুমকির বিষয় অস্বীকার করে নকলনবীশ বেলাল আহমদ মুরাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল কাজ করছে। আমি আমার লিখিত বক্তব্য তদন্ত কমিটির কাছে দিয়েছি। তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের বালাম বহিতে প্রতিদিনের ১২ পৃষ্ঠা করে মাসিক ৩০০ পৃষ্ঠা লিপিবদ্ধ ও দৈনিক কার্যসম্পাদনের ডায়েরি লিখেননি কেনোÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নকলনবীশের পাশাপাশি একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। কাজের জন্য আমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে। তাই এসব কাজ করতে পারিনি। তবে তিনি এও স্বীকার করেন, তিনি তার কাজের জন্য অফিস থেকে কোনো ছুটির আবেদন করেননি।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ