৯ বছরে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২৩

৯ বছরে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান

হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক

 

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওলিপুরে গড়ে তুলেছে অত্যাধুনিক ‘হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’। গ্রামীণ এলাকার প্রতিষ্ঠিত এ পার্কে ৯ বছরে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

 

এই শিল্প পার্কে বিনিয়োগ হয়েছে ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আগামী এক বছরে আরও ৬৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে গ্রুপটি। ফলে নতুন করে আরও ৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। তখন এ শিল্প পার্কে কর্মী সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২৮ হাজারে দাঁড়াবে।

 

বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ শিল্প পার্কে অর্থনীতি-বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল।

 

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৩০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত শিল্প পার্কটির নির্মাণ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১৩ সালে উৎপাদন শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১৪ সালে। এখন কর্মরত লোকবলের ৮০ ভাগই স্থানীয়। এছাড়া কর্মীদের ৬৫ ভাগই নারী। বর্তমানে শিল্প পার্কটিতে ৪৭টি প্রোডাকশন লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। শিল্প পার্কটি স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটছে। বিশ্বে ১৪৫টি দেশের ১৫০ কোটি লোক প্রাণ-আরএফএলের পণ্য ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশে শতকরা ৯৫ শতাংশ পরিবার প্রাণের পণ্য ব্যবহার করে।

 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিল্প গ্রুপটির পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে ১ লাখ ৪৫ হাজার কর্মী আছেন। ৩০০টি ব্র্যান্ডের নামে প্রায় ৬৩০০ পণ্য তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানটি বছরে পণ্য বিক্রি করছে ৩০ হাজার কোটি টাকার। বিশ্বের ১৪৫টি দেশে ৪ হাজার কোটি টাকা (৪০০ মিলিয়ন ডলার) পণ্য রপ্তানি করছে। গ্রুপের ব্যাংক ঋণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঋণ আছে তবে এখন পর্যন্ত এক দিনের জন্যও ঋণ খেলাপি হয়নি প্রাণ-আরএফএল।

 

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইআরএফ সভাপতি দ্য ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জামান প্রমুখ।

প্রাণ-আরএফএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশল পণ্য, টয়লেট্রিজ, ফার্নিচার, নন-লেদার আইটেম, মেডিকেল অ্যাপ্লায়েন্সসহ নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্প পার্ক ও কারখানা গড়ে তুলেছে।

 

এরই অংশ হিসেবে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে গড়ে তোলা হয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সবচেয়ে বড় স্থাপনা হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। জ্বালানি ও ভ‚মির সহজলভ্যতা, প্রতিবেশী দেশে পণ্য রপ্তানি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনা করে এ পার্কটি স্থাপন করা হয়েছে।

 

হবিগঞ্জের অলিপুর ছিল অত্যন্ত অবহেলিত এলাকা। এখানকার মটি ছিল অনুর্বর, কৃষিকাজ করা সম্ভব ছিল না। ফলে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল খুবই কম। এটিকে বিবেচনায় নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের ব্যবসায়ীদের এ অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার আহবান জানান এবং শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করেন।

 

প্রাণ-আরএফএল এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম কারখানা স্থাপন করে। এরপর প্রাণ-আরএফএলকে অনুসরণ করে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান এখানে কারখানা স্থাপন করেছে।

 

এরই মধ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ছাড়াও স্কয়ার, যমুনা, আরএকে, স্টার সিরামিকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে এ এলাকার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক সহযোগিতার ফলে এক সময়ের অবহেলিত এলাকাটি একটি শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা রেখেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

 

প্রাণ-আরএফএল এর হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে রয়েছে নিত্য ব্যবহার্য পণ্য, তেমনি রয়েছে সেসব পণ্য যেগুলো একসময় ব্যাপক পরিমাণে আমদানি করা হতো। তাছাড়া রয়েছে এমন সব পণ্য, যার বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া এ পার্কেই গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট।

 

এ শিল্প পার্কে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য ছাড়াও কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয় বিশ্বের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে কোকাকোলা ও জিলেট।

 

এ শিল্প পার্কে বর্তমানে ৪৭টি প্রোডাকশন লাইন রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট ড্রিংক, বেভারেজ, ক্যান্ডি, লিকুইড গøুকোজ, বিস্কুট, কনফেকশনারি, ট্রান্সফর্মার, ইলেকট্রিক ক্যাবলস, ফ্যান, মেলামাইন, বাইসাইকেল, এমএস ও জিআই পাইপ, রিসাইক্লিং পণ্য, টয়লেট্রিজসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনের ফলে এ স্থাপনাটি দেশের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ শিল্প পার্কে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের বেসরকারি পর্যায়ে অন্যতম বড় শিল্প পার্ক।

 

এ পর্যন্ত এ শিল্প পার্কে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তাছাড়া আগামী এক বছরে প্রায় ৬৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এ অর্থ বিভিন্ন প্রোডাকশন লাইনের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন প্রোডাকশন লাইন চালুতে ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে পোলট্রি, বেকারি, নুডলস, গø্যাসওয়্যার, রিসাইক্লেল পণ্য, ফিটিংস, সুইচ অ্যান্ড সকেট, স্টেশনারি, ক্যাবলস, বাইসাইকেল ও এস এস পাইপ। এ নতুন বিনিয়োগের ফলে প্রায় ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

 

মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে প্রাণ-আরএফএল। এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বর্তমানে ৫টি ইটিপি রয়েছে যার মাধ্যমে প্রায় দৈনিক ১ কোটি ৬ লাখ লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৬৫ লাখ লিটার তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। লিকুইড বর্জ্য ইটিপি এর মাধ্যমে পরিশোধন করা হয় আর সলিড বর্জ্য দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হয়। এছাড়াও রয়েছে একটি জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান্ট, যার মাধ্যমে পানি পরিশোধন করে বারবার ব্যবহার করা হয়।

 

কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায় উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুযোগ সম্প্রসারণে কাজ করছে গ্রুপটি। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ কারখানা সংলগ্নে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে এই স্কুলে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এছাড়া বেশ কিছু স্কুলে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, রাস্তাঘাট নির্মাণ, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া এ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সান হেলথ কেয়ার হাসপাতাল।

 

হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে উৎপাদিত উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাওয়ার ট্রান্সফর্মা, কাসাভা প্লাস্টিক রিসাইক্লিং পণ্য বাইসাইকেল।

 


0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ