প্রকাশিত: ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রা আর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হচ্ছে আজ। রীতি অনুযায়ী, সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান, পরে একে অন্যের সিঁথি ও মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে দেবীকে বিদায় জানানো হয়। মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। এরপর নেচে গেয়ে দেবীদুর্গাকে বিদায় জানান সনাতন ধর্মালম্বীরা।মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে শহরে সার্বজনীন মন্দিরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এ মন্দিরে সকাল থেকেই সিঁদুররাঙা ধর্মাবলম্বীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সকালে বিজয়া দশমীর পূজা শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল বিষাদের ছায়া। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাজনায় ছিল দেবীদুর্গার বিদায়ের সুর।
পুরাণমতে, বিজয়া দশমীর অন্যতম আয়োজন দেবীবরণ। রীতি অনুযায়ী, সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান, পরে একে অন্যের সিঁথি ও মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে দেবীকে বিদায় জানান। সেই খেলায় মেতে উঠেন সব বয়সের মানুষ।
মন্দিরে আসা শিল্পী রানী বলেন, পাঁচ দিন ধরে নানা আয়োজনে পূজা উদযাপন করা হয়েছে। সিঁদুর খেলা, নেচে গেয়ে উদযাপন করা হয়েছে। মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে হচ্ছে এতে কিছুটা খারাপ লাগছে। আগামী বছর আবারও ফিরে আসবেন।
এদিকে গত ১৪ অক্টোবর দেবী দুর্গার আবাহন বা মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবী পক্ষের শুরু হয়। আর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে ২০ অক্টোবর শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজা। এরপর হাসি-আনন্দ আর পূজা-অর্চনার মধ্যদিয়ে কেটে যায় চারদিন।
আজ বিজয়া দশমী, সকালে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মধ্যদিয়ে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। আর বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনেরমধ্যদিয়েই শেষ হলো সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক, হানাহানি ও মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। যার ফলে জগতে মড়ক ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।
পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাবে এবার মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় ১ হাজার ৩৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।এবছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) প্রতিমা বিসর্জনের দিনটি ছিল ছুটির দিন। এসময় হাজার হাজার ভক্তদের সমাগম ঘটে বিজয়া দশমিতে। ভক্তদের চোখের জলে ভাসিয়ে সপরিবারে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা বাবার বাড়ি থেকে ফিরে গেলেন স্বামীর ঘর কৈলাসে।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন- কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্তলোকে আসেন ঘোটকে আগমন যার ফল হচ্ছে রোগ-ব্যধি বাড়বে ও ফসল নষ্ট হবে। আর মা দুর্গা স্বর্গলোকে বিদায় নেবেন আবার ঘোটকে চড়ে, যার ফল হচ্ছে রোগ-ব্যধি বাড়বে ও ফসল নষ্ট হবে।
মণ্ডপে মণ্ডপে দশমী পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন করা হয়। বিষাদের ছায়া ছিল ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্যে। বিসর্জনের আগেসকাল থেকে মৌলভীবাজার শহরের মন্দিরে মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উৎসব।
শোভাযাত্রাটি মৌলভীবাজার রোডের সার্বজনীন দুর্গাবাড়ী থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রতিটি ট্রাকে ঠাঁই পায় প্রতিমাগুলো। এই শোভাযাত্রাকে দেখতে শহরে লক্ষাধিক মানুষের ঢল নামে। রাস্তায় স্থান না পেয়ে অনেকে দোতলা-তিনতলা ভবনের ছাদ কিংবা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রতিমা দর্শন করেন।সন্ধ্যার আগ মোহূর্তে মৌলভীবাজার মনু নদীতে দুর্গাপূজা বিসর্জন ঘাটে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ, পৌর মেয়র আলহাজ্ব ফজলুর রহমান সহ বিভিন্ন পেশার মানুষের ঢল দেখা যায়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিম দে জানান, প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই শোভাযাত্রায় প্রায় শতাধিক প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।অত্যন্ত শান্তিপূর্নভাবে দূর্গাপূজা শেষ হয়েছে। মা দূর্গা কৈলাসে পাড়ি জমিয়েছে। দূর্গোৎসবের মধ্যদিয়ে সকল অপশক্তির বিনাশ হোক। এবং সবার জীবনে বয়ে আনুক মঙ্গল, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
উল্লেখ” চণ্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে শুরু হয় দুর্গাপূজা। মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় ১ হাজার ৩৬টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লংকা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে এজন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech