একাত্তরের হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা হুবহু নকল করছে আ. লীগ : রিজভী

প্রকাশিত: ৪:০১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৩

একাত্তরের হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা হুবহু নকল করছে আ. লীগ : রিজভী

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: দেশকে বিএনপিশূন্য করতে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। শনিবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার থামছেই না। দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল, ইউনিয়ন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের হিড়িক চলছে, সেটা ভাষায় বলা যাবে না। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৬ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিভিন্ন মামলায় ৫৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

 

দেশে ৭১ সালের অবস্থা বিরাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপিকে বলপ্রয়োগে উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়েছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে এখন একাত্তরের ভয়াল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা ও দুঃশাসন হুবহু নকল করছে আওয়ামী সরকার। তাদের শান্তি কমিটির মতো এখন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করছে। হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের না পেলে তাদের পরিবারের লোকদের ধরে নিয়ে যেত। আওয়ামী পুলিশ সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করছে। ছেলে না পেলে তার ভাইকে, ভাইকে না পেলে তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশ থেকে এই অমানবিক মনুষ্যত্বহীন সংবাদ প্রতিনিয়ত আমাদের শুনতে হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, উদ্ভট গায়েবি মামলার নতুন নতুন মডেল দেখতে পাচ্ছি। ঢাকাতে গ্রেপ্তার যুবদলের নেতা মামুনের বিরুদ্ধে বরিশালে ককটেল নিক্ষেপের মামলা করা হয়েছে। যখন সে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছে তার বেশ কিছুদিন পরে মামলা দিয়েছে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে। জেলে থেকে নাকি ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছেন বিএনপি নেতা কাঁকন।

 

আপনারা দেখবেন, সংবাদপত্রে কিন্তু এই বিষয়গুলো আসছে। এই তাজ্জবের কাহিনি, এই তামাশার কথাবার্তার কথা আমরা প্রািই শুনি, এসব সংবাদ গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এই সমস্ত হাস্যকর মামলা দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জুলুম-নির্যাতন-হয়রানির ভয়ংকর আবর্তের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

 

রুহুল কবীর রিজভী প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকার যে কী স্বাদ সে তো তিনি পেয়েছেন। সেই স্বাদের কারণে তিনি (শেখ হাসিনা) অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান না। দরকার হলে আরো যদি রক্ত ঝরাতে হয়, রক্ত ঝরিয়ে হলেও তিনি একতরফা নির্বাচন করবেন। বিদেশি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণই নাকি তার মূল শক্তি। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিচ্ছেন না কেন? জনগণ সাথে থাকলে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে ভয় পাচ্ছেন কেন?’

 

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘কেন আপনি নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচিতে নৃশংস হামলা চালিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারা অন্তরীণ করেছেন? কেন আপনি দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড় করেছেন বিএনপিসহ তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের? নেতাকর্মীদের ধরতে গিয়ে বাসায় না পেয়ে তাদের বাবা, ভাইকে আটক করেছেন। আপনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যা ও বিপুলসংখ্যক মানুষকে জখম কেন করেছে? আপনি এতটাই বিধবংসী হয়ে উঠেছেন যে দেশব্যাপী ধরপাকড় করে ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিপজ্জনক হুমকিতে সারা জাতি স্তম্ভিত। জাতীয় সহিষ্ণুতা ভেঙে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সংঘাতমময় পরিস্থিতে উসকে দিচ্ছে। মন্ত্রীরা জাতিসংঘ, গণতান্ত্রিক দেশগুলো আহ্বান ও মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান আমলে নেওয়া দূরে থাক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২৮ অক্টোবরে ফুটেজ যেগুলো প্রকাশ পেয়েছে তার প্রতিটাতে দেখা যায় পুলিশের পাশে লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা আছে। বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে পুলিশ, ছাত্র লীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ একযোগে মোকাবেলা করছে।’ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও ‘আওয়ামী ক্যাডাররা’ একে অপরের পরিপূরক বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ