মৌলভীবাজারে মা’র কোল থেকে কেড়ে নিয়ে মা’র কোলে লাশ ফেরৎ দিলো : নিহতের পরিবারে চলছে আহাজরি

প্রকাশিত: ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৩

মৌলভীবাজারে মা’র কোল থেকে কেড়ে নিয়ে মা’র কোলে লাশ ফেরৎ দিলো : নিহতের পরিবারে চলছে আহাজরি

মনজু বিজয় চৌধুরী॥  ইতালিতে যাওয়া হলোনা কলেজ পড়ুয়া নাঈম (২১) এর। দুর্বত্তদের নির্মম হামলার শিকার হয়ে অকালেই প্রাণ দিতে হলো তাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট দেওয়া ও ফেইক আইডি খোলার অভিযোগ তুলে পিতা ও পুত্রকে মারধর করে পুত্রকে পিঠিয়ে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

জানা যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শহরতলী টিবি হাসপাতাল সড়কের বর্ষিজোড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় রেজাউল করিম নাঈম নামের এক কলেজে ছাত্র খুন হয়েছেন। কলেজ ছাত্র নাঈমের বাবা মো: চেরাগ মিয়া (৫৩) একটি ফেইক ফেসবুক আইডি খুলেছেন ও পোষ্ট দিয়েছেন এমন অভিযোগ এনে একই এলাকার নুরুল মিয়ার নেতৃত্বে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ১৫-২০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এর আগে ফেসবুকে পোষ্ট নিয়ে নাঈমের বাবা মো: চেরাগ মিয়ার সাথে ওই দিন বিকেলে কথা কাটাকাটি হয় একই এলাকার নুরুল মিয়ার। এরই জের ধরে রাতে তাদের বসত ঘরে প্রবেশ করে ফের ফেসবুকে পোষ্ট দেওয়ার বিষয় নিয়ে কথা তুলে নাঈমের বাবা চেরাগ মিয়াকে অতর্কিত মারধর শুরু করে।

বাবাকে রক্ষা করতে নাঈমসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এগিয়ে গেলে তাদের উপর হামলা চালায় তারা। তাদের অর্তকিত হামলায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও আহত হন। এসময় নুরুল মিয়ার সাথে রনি, জনি, আলামিন, আনোয়ার,সাকিল, জেসি বেগম, পারভিন বেগম, নাসিমার ছেলে সুহান ও রুহান, ইমনসহ পাশের বাড়ির কয়েকজনসহ ১৫-২০ জন পূর্বপরিকল্পিত ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র দা, চাকু, দেশীয় অস্ত্রসহ হামলায় অংশ নেয় বলে জানায় নাঈমের পরিবার। এসময় নাঈম আত্মরক্ষার্থে বসত ঘরের একটি কক্ষে প্রবেশ করে দরজা আটকিয়ে দেয়। হামলাকারিরা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে পালিয়ে যায়।

পরে তাকে মূমর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার অবস্থার অবনতি হলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসাধীন আবস্থায় বুধবার ভোর রাতে তার মৃত্যু হয়। নিহত নাঈম মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্র। সে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিলো। নাঈমের পিতা ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও ১ বোনের মধ্যে  নাঈম ছিলো সবার বড়। তার ছোট ভাই রেজওয়ানুল করিম  নাদিম মৌলভীবাজার সরকারী  উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও বোন নাজনীন আক্তার সাহিদা মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজের  ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। শান্ত সৃষ্ট নাঈমের নির্মম হত্যাকান্ডে নিজ এলাকাসহ সহপাঠী মধ্যে শোকের ছায়া নেমেছে।

তারা বসত ঘরে ঢুকে ফিল্মি কায়দায় প্রকাশ্যে হত্যাকারী এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ওই ঘটনায় শোকাতুর স্থানীয় বাসিন্দারা জানান হামলাকারী নুরুল মিয়া তার পরিবার ও সাথের লোকেরা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতে নানা রকম অপরাদের সাথে জড়িত রয়েছে। তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

হত্যার শিকার নাঈমের পিতা মো: চেরাগ মিয়া জানান আমি একজন ব্যবসায়ী। সবসময় ব্যবসা ও পরিবারে বাহিরে সময় দেওয়ার সুুযোগ নেই। তারা ফেসবুকের ভুয়া অভিযোগ তুলে প্রথমে আমাকে পরে আমার পরিবারের সদস্য ও আমার কলেজ পুড়ুয়া ছেলেকে ঘরে ডুকে সবার চোখের সামনে পিঠিয়ে ও কুপিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। এই বয়সে ফেসবুকের কোনো বিষয়ই আমার জানানেই। আমার ছেলেও কোনো আইডি খোলেনি ও পোষ্ট দেওয়নি। তারা অযথা ঝগড়া বাধিয়ে আমার ছেলেকে দুনিয়া থেকে তুলে দিলো। আমি এই পরিকল্পিত হত্যা কান্ডের সাথে জড়িতদের ফাঁসি চাই। নাঈমকে হারিয়ে পরিবারে শোকর মাতম চলছে।

নাঈমের ছোট বোন নাজনীন আক্তার  সাহিদা বলেন ‘মঙ্গলবার রাতে পাশের বাড়ির নূরুল তাদের বাড়িতে এসে ফেসবুকে ফেইক আইডি খোলা ভুয়া অভিযোগ তুলে গালাগালি,ধমক ও মারধর শুরু করে। আমার বাবাসহ সবাই তাদের পা ধরে মাফ চেয়েও রক্ষা হয়নি। নাঈমের মা ও বোন বার বিলাপ করে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।

সিলেটে ময়না তদন্ত শেষে বিকেল ৫টায় নিজ বাড়িতে নাঈমের লাশ পৌছায়। এসময় পরিবার ও এলাকাবাসির মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। নাঈমের ১ম নামাজে যানাজা পশ্চিম বর্ষিজোড়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। ২য় নামাজে যানাজা রাতে হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা দরগাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। পরে মাজার প্রাঙ্গনে দাফন করা হয়।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনার সাথে জড়িত ১ জনকে আটক করা হয়েছে।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ