আফগানদের হারিয়ে সেমি ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রকাশিত: ১:২৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২৩

আফগানদের হারিয়ে সেমি ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

স্পোর্টস ডেস্ক :: আফগানিস্তানের ব্যাটিং ইনিংস শেষের পরপরই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার কোনো সম্ভাবনাই আর নেই তাদের। তাই সেদিকে না তাকিয়ে মান বাঁচানোর লড়াইয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয়ের জন্যই খেলছিলেন নবী-রশিদরা। কিন্তু প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ের সামনে আর পেরে ওঠেননি তারা। ১৫ বল থাকতেই আফগানদের ৫ উইকেটে হারিয়ে সেমিতে পা রাখলো প্রোটিয়ারা।

 

২৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেন দুই ওপেনার বাভুমা ও ডি কক। প্রথম ১০ ওভারেই বিনা উইকেটে ৫৭ রান তোলে প্রোটিয়ারা। নাভিন-উল-হক, মুজিব, নবী, ওমরজাইরা তেমন সুবিধাই করতে পারেননি প্রোটিয়া দুই ওপেনারের কাছে। তবে ওপেনিং জুটিকে বেশিদূর আগাতে দেননি আফগানরা। ১১তম ওভারের শেষ বলেই আঘাত হানেন মুজিব। ২৮ বলে ২৩ রান করা বাভুমাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এই রিস্ট স্পিনার।

 

বাভুমার বিদায়ের পর ডি-ককও বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি। ১৩তম ওভারের প্রথম বলেই নবীর করা বল ডি-ককের পায়ে লাগলে আম্পায়ার নট আউটের সিদ্ধান্ত দেন। তবে আফগানিস্তান রিভিউ নিয়ে ডি-কককে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলে। ৪৭ বলে ৪১ রান করে ডি-ককের বিদায়ে কিছুটা বিপদে পড়ে প্রোটিয়ারা। এরপর ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন ভ্যান ডার ডুসেন ও মারকরাম। এই দুই ব্যাটার ৬০ বলে ৫০ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলেন।

 

দলের রান যখন দুই উইকেটে ১১৬ তখন এই জুটি ভাঙেন রশিদ খান। ২৫ রান করা মার্করামকে বিদায় করেন এই লেগ স্পিনার। এরপর ক্লাসেন নেমেও বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হননি। তিনি মাত্র ১০ রান করে রশিদ খানের বলে বোল্ড হন। ১৩৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে আবার বিপদে পড়ে প্রোটিয়ারা। একপ্রান্ত তখনও আগলে রেখে নিজের ক্যারিয়ারের ১৪তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ডুসেন। ডেভিড মিলারের সঙ্গে তার ৪৩ রানের জুটিটি ভাঙেন মোহাম্মদ নবী।

 

২৪ রান করা মিলারের বিদায়ে আবারও জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে আফগানিস্তান। এরপর অলরাউন্ডার ফেলুকায়ো ও ডুসেন চেষ্টা করেন প্রোটিয়াদের জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে। ফেলুকায়োর ৩৭ বলে ৩৯ রানের ক্যামিওতে শেষের দিকে আর আফগান বোলাররা পাত্তা পায়নি। ডুসেন অপরাজিত থাকেন ৭৬ রানে। আফগানদের হয়ে রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবী দুটি করে উইকেট পান।

 

এর আগে আহমেদাবাদে ওমরজাইয়ের ইনিংসে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াকু পুঁজি পায় তার দল আফগানিস্তান। শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে তুলেছে ২৪৪ রান। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। শুরুটা ভালোই ছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ৪১ রান করেন দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান।

 

দলীয় ৪১ রানের মাথায় আফগানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন কেশভ মহারাজ। এরপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে আফগানদের রক্ষণের দেয়াল। তিন ওভারে ৪ রান তুলতেই তিনটি উইকেট হারায় আফগানরা। ইনিংসের নবম ওভারে কেশভ মহারাজের বলে হেনরিখ ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ (২২ বলে ২৫)।

 

এর পরের ওভারে ৩০ বলে ১৮ করে কোয়েতজির বলে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি-ককের হাতে ধরা পড়েন জাদরান। ১১তম ওভারে মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফেরত যান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদি। মহারাজের টানা দ্বিতীয় ওভারে ডি-ককের ক্যাচ হন তিনি। এরপর রহমত শাহ (৪৬ বলে ২৬) কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও একের পর এক উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ১১৬ রানে ৬টি আর ১৭০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে দুইশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল তারা। কিন্তু ওমরজাই লড়াই করে দলকে নিয়ে যান সম্মানজনক অবস্থানে। প্রোটিয়া পেসার জেরাল্ড কোয়েটজি ৪৪ রানে নেন ৪টি উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার লুঙ্গি এনগিদি আর কেশভ মহারাজের।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

 

আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৪৪ (গুরবাজ ২৫, ইব্রাহিম ১৫, রেহমাত ২৬, শাহিদি ২, ওমারজাই ৯৭*, ইকরাম ১২, নাবি ২, রাশিদ ১৪, নুর ২৬, মুজিব ৮, নাভিন ২; রাবাদা ১০-০-৪০-০, এনগিডি ৮.৩-০-৬৯-২, মার্করাম ৪.৩-০-২৫-০, কুটসিয়া ১০-১-৪৪-৪, মহারাজ ১০-১-২৫-২, ফেলুকওয়ায়ো ৭-০-৩৬-১)

 

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৭.৩ ওভারে ২৪৭/৫ (ডি কক ৪১, বাভুমা ২৩, ফন ডাসেন ৭৬*, মার্করাম ২৫, ক্লসেন ১০, মিলার ২৪, ফেলুকওয়ায়ো ৩৯*; মুজিব ১০-০-৫১-১, নাভিন ৬.৩-০-৫২-০, নাবি ১০-১-৩৫-২, ওমারজাই ১-০-৮-০, রাশিদ ১০-১-৩৭-২, নুর ৯-০-৪৯-০, রেহমাত ১-০-১২-০)

 

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী

 

ম্যান অব দা ম্যাচ: রাসি ফন ডার ডাসেন

0Shares