ভারতে টানেল থেকে অবশেষে উদ্ধার হলেন ৪১ শ্রমিক

প্রকাশিত: ৩:৫৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২৩

ভারতে টানেল থেকে অবশেষে উদ্ধার হলেন ৪১ শ্রমিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ভারতের উত্তরাখণ্ডে টানেলে আটকে পড়া ৪১ নির্মাণশ্রমিক উদ্ধার হয়েছেন। বেশ কয়েকটি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় ১৭ দিনের মাথায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হলো।

 

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মাণাধীন সিলকিয়ারা টানেলে শেষ পর্যন্ত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ‘র‍্যাট হোল’ কৌশলে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে অনেক উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি ব্যবহার করেও শ্রমিকদের উদ্ধার প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ৬০ মিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ধসে পড়ার আশঙ্কায় আগের প্রচেষ্টাগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

 

একে একে শ্রমিকদের উদ্ধারে বেশ সময় লেগেছে। কারণ এই সময়ে সেখানকার তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় উদ্ধারকাজে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

 

টানেলের পাশ দিয়ে সুড়ঙ্গ করে দুই মিটার প্রস্থের পাইপ ঢুকিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনা হয়। কাজটি করা হয় সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে।

 

গত শুক্রবার ২৫ টন ওজনের অগার মেশিন অকেজো হয় পড়ার পর গতকাল ‘র‌্যাট হোল’ বা ইঁদুরের গর্ত খনন পদ্ধতিতে উদ্ধার কাজ আবার শুরু করা হয়। হাতে খননের এ পদ্ধতিতে উদ্ধারকাজে দ্রুতই অগ্রগতি আনে। আর মাত্র দুই মিটার খনন করলেই আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

 

ইঁদুরের গর্ত খনন পদ্ধতি কী? : কয়লা খনিতে ইঁদুরের গর্ত খোঁড়ার পদ্ধতিতে ৪ ফুট দৈর্ঘ্যের ছোট ছোট গর্ত খোঁড়া হয়। কয়লা খনির কাছাকাছি পৌঁছানোর পর কয়লা বের করার জন্য এর চারপাশে টানেল তৈরি করা হয়। বের করে আনা কয়লা আশপাশে জমা করা হয়। ইঁদুরের গর্ত খোঁড়া পদ্ধতিতে শ্রমিকেরা খনির ভেতরে প্রবেশ করেন এবং খোঁড়াখুঁড়ির জন্য হাতে ধরা যন্ত্র ব্যবহার করেন।

 

মেঘালয়তে এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। সেখানে কয়লা খনি বেশ পাতলা ও অন্য পদ্ধতিগুলো বেশ ব্য়য়বহুল। টানেলের আকার ছোট হওয়ায় এ ধরনের বিপজ্জনক কাজের জন্য শিশুদের ব্যবহার করা হয়। ভারতের এ রাজ্যটিতে জীবিকা উপার্জনের উপায় সীমিত হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজের জন্য দীর্ঘ সারি বেঁধে থাকে অনেক প্রার্থী। কাজ পেতে অনেক শিশুই বয়স বাড়িয়ে এ খনিগুলোতে হাজির হয়।

ইঁদুরের গর্ত খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ : ২০১৪ সালে ভারতের দ্য ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় এ পদ্ধতিতে গর্ত খোঁড়া নিষিদ্ধ করে। নিষিদ্ধের পরও ভারতে ইঁদুরের গর্ত খোঁড়া ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় ইঁদুরের গর্ত খননকারীদের মৃত্যু হয়েছে।

 

২০১৮ সালে অবৈধ গর্ত খননের সঙ্গে যুক্ত ১৫ শ্রমিক বন্যায় এক খনির ভেতর আটকা পড়েন। দুই মাসের উদ্ধার তৎপরতায় মাত্র দুটি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ২০২১ সালে এমনই এক ঘটনায় পাঁচজন এক বন্যাকবলিত খনিতে আটকা পড়েন। উদ্ধার তৎপরতায় তিনটি লাশ উদ্ধার করার পর এক মাসের উদ্ধার কার্যক্রমের ইতি টানা হয়। এ পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবেশগত দূষণ ও এটি নিষিদ্ধ করার একটি কারণ।

 

কয়লা খনন রাজ্য সরকারের আয়ের প্রধান একটি উৎস। মণিপুর সরকার এনজিটির এ নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে বলে, এ অঞ্চলে খননের জন্য অন্য কোনো উপায় নেই। ২০২২ সালে মেঘালয় হাই কোর্টের একটি প্যানেল বলে মেঘালয়তে ইঁদুরের গর্ত খোঁড়া এখনো আগের গতিতেই চলছে।

 

উত্তরাখণ্ডের অভিযান : উত্তরাখণ্ডে টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো ধ্বংসস্তূপ সরাতে গিয়ে অকেজো হয়ে পড়ে মার্কিন অগার মেশিন। বিদেশি যন্ত্রের ব্যর্থতার পর বাতিল করা এ খনন পদ্ধতি কাজে লাগিয়েই শ্রমিকদের উদ্ধার করতে হচ্ছে। এ খনন কাজের জন্য মোট ১২ জনের দুটি বিশেষজ্ঞ দল দিল্লি থেকে উত্তরাখণ্ডে এসেছেন।

 

উত্তরাখণ্ড সরকারের নোডাল কর্মকর্তা নীরাজ খাইরওয়াল বলেন, দিল্লি থেকে আসা ব্যক্তিরা কোনো ইঁদুরের গর্ত খননকারী নয় বরং এ কৌশলে বিশেষজ্ঞ।

 

বিশেষজ্ঞের একজন রাজপুত রায় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, একজন ব্যক্তি ড্রিল করেন, অন্যজন ভাঙা পাথরের টুকরো সংগ্রহ করেন এবং তৃতীয়জন একটি ট্রলিতে করে এগুলো বাইরে নিয়ে আসেন।

 

বিশেষজ্ঞরা এ ৮০০ মিলিমিটারের পাইপের ভেতরে ঢুকে হাতে ধরা যন্ত্র ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করছেন। গতকাল বিশেষজ্ঞদের একজন বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘একটি কোদাল ও অন্যান্য বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। অক্সিজেনের জন্য আমাদের সঙ্গে একটি ব্লোয়ার নেওয়া হবে।’

 

এ ধরনের ড্রিলিং বেশ ক্লান্তিপূর্ণ কাজ, তাই খননকারীরা পালাক্রমে কাজ করে যাচ্ছেন। উদ্ধারকর্মীদের অনুসারে, বিশেষজ্ঞরা ধাতব বেড়া কাটতেও বেশ দক্ষ।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ