জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় দাঁড়িয়ে রশি টেনে নদী পারাপার হতে হয় কমলমতি শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: ৯:১৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২৩

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় দাঁড়িয়ে রশি টেনে নদী পারাপার হতে হয় কমলমতি শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: ‘‘জীবনেও আমরার বাড়ীত একটা গাড়ীও যায় না। ব্রিটিশ আমল থাকি সংগ্রামর ৫০ বছর ওইলেও আমরার ইনো এখনও একটা ব্রিজ ওইছে না।পারলে আপনারা আমরার দুঃখো কান লেখউক্কা। সাংবাদিক হক্কলে আমরার পুলোর কথাকান লেখোইন না। আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলেছেন কাশিনগর গ্রামের বাসিন্দা সুজেল আবির সহ স্থানীয়রা’’।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় দাঁড়িয়ে রশি টেনে নদী পারাপার হতে হয় কমলমতি শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকে। যেন ভোগান্তি শেষ নেই। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামের এমন চিত্র এখনো দেখা যায়।

সুত্র জানায়, বৃটিশ আমলের ছোট্ট একটি খাল (জুড়ী) হতে আজ জুড়ী নদীর সৃষ্টি। আর এ জুড়ী নদীর নামানুসারেই ২৬ আগস্ট ২০০৪ সালে গঠিত হয় মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা জুড়ী। ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে বাংলাদেশের বৃহৎ হাওর হাকালুকি অতিক্রম করে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে এ জুড়ী নদীটি।

উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কাশিনগর গ্রাম হতে বীরগোগালী গ্রামের (রাণীমুড়া ঘাট) মধ্যে জুড়ী নদীতে সংযোগ ব্রীজ না থাকায় হাজার হাজার মানুষ বৃটিশ আমল থেকে নৌকা ব্যবহার করে নদী পারাপার হন।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন শত শত মানুষ প্রায় ৬ কিঃমিঃ পথ পায়ে হেটে উপজেলা শহর জুড়ীতে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস,স্বাস্থ্য সেবা ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করছে। নদীতে ব্রীজ না থাকায় যাতায়াতের জন্য যানবাহনের কোনো ব্যবস্থা নাই কয়েকটি গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মানুষের। যাতায়াতে নৌকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। ব্রীজটি নিমার্ণ করে দিবেন বলে, নির্বাচন আসলেই জনপ্রতিনিধিরা অনেকেই প্রতিশ্রæতি দিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাশিনগর,পাতিলাসাঙ্গন, বটনীঘাট, বড়াডহর গ্রামের লোকজন এ নদীর রাণীমুড়া ঘাটে নৌকা পার হয়ে উপজেলা ও জেলা শহরে যান। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাদের আত্বীয় স্বজনের বাড়ীতে যে কোন সময় আসা যাওয়া করতে অনীহা প্রকাশ করার কারণে ভালো পরিবারে আমাদের ছেলে মেয়ে বিয়ে দিতে পারি না। বিশেষ করে এ গ্রামের শিক্ষার্থীরা জুড়ী শহরে অবস্থিত টিএনখানম সরকারী কলেজ, জুড়ী মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়,মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সিকন্দর মাহমুদা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। কারণ, নদীতে বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধি হয়ে শ্রোতের মধ্যে বাচ্চারা ঝুঁকি নিয়ে নিজে নিজে নৌকার রশি টেনে পার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দা রমা চন্দ বলেন, আমাদের গ্রামে এক হাজার মানুষের মাঝে প্রায় ৬০০ মানুষ সনাতন ধর্মাবলম্বী। যারা সারা জীবন নৌকায় ভোট দেই। এছাড়াও আরেক বাসিন্দা আব্দুল আজিজ জানান, বীরগোগালী গ্রামের প্রায় ৭০০ ভোটার ভোটের সময় নৌকায় পার হয়ে কাশিনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সানাউল ইসলাম চৌধূরী মুঠোফোনে যায়যায়দিন কে বলেন,আমাদের কাশিনগর গ্রামের মানুষের যাতায়াতে দীর্ঘদিন থেকে নৌকার রশি টেনে পারাপার করতে হচ্ছে। এ জন্য অনেক কষ্ট লাগে। কর্তৃপক্ষকে বার বার তাগিদ দিয়েও কোন সুরাহা হচ্ছে না। এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা এক অপরিহার্য।

সাগরনাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল নূর মাষ্টার যায়যায়দিন কে বলেন, এখানে ব্রিজ নিমার্ণ হলে অত্র এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। অত্র গ্রামগুলোর মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাশিনগর রানীমুড়া ব্রিজ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনঞ্জন চন্দ্র দে যায়যায়দিন কে বলেন, উপজেলা সদরের অতি নিকটবর্তী এলাকা কাশিনগর গ্রামের মানুষের যোগযোগ ব্যবস্থা ব্রিটিশ আমল থেকে শহরের সাথে বিচ্ছিন্ন বলে জেনেছি। আমি এখানে নতুন এসেছি,খোজঁ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ