মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে বিভিন্ন অনিয়মের কথা স্বীকার করলেন জেল সুপার

প্রকাশিত: ৬:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩

মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে বিভিন্ন অনিয়মের কথা স্বীকার করলেন জেল সুপার

ডায়াল সিলেট ডেস্ক ::  মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে অনিয়ম দূর্নীতি দিন দিন বেড়েই চলছে শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর বন্দী, স্টাফ, ক্যান্টিন ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলার অনিয়মের কথা স্বীকার করলেন মৌলভীবাজার জেল সুপার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার। তার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট স্বারক নাম্বার ২৪২৭(৪) এর ৬ ডিসেম্বর তারিখে নিজ স্বাক্ষরিত কপিতে স্বীকার করেছেন ১লা অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে যোগদানের পর বন্দি ব্যবস্থাপনা, স্টাফ ব্যবস্থাপনা, ক্যান্টিন ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।
এছাড়াও দুদক কর্মকর্তাকে নাজেহেল করেছেন এমন দাম্ভিকতা প্রকাশকারী এই কর্মকর্তা প্রকাশিত সংবাদের সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদেরে প্রথমে ম্যানেজ করতে না পেরে মামলা করার হুমকি সহ শারীরিক ভাবে দেখে নেবেন বলে প্রচার করে যাচ্ছেন। পূর্ববর্তী কর্মস্থল চাঁপাই নবাবগঞ্জে যা করেছিলেন তা পুর্নাবৃত্তি করলেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে যোগদানের পর কিন্তু থেমে যায়নি তার অনিয়ম, দূর্নীতি। বরং বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে বেড়েই চলছে এর মাত্রা। সন্দেহভাজন হাজতি ও কয়দীদের উপর বেড়ে গেছে নির্যাতন। সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে জামিনপ্রাপ্ত আসামী ও বন্দীদেরকে। সাংবাদিকদের সাথে যেন কারাগারে কোন অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে কথা না বলেন।
মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে দাম্ভিক উক্তি করেন তার দূর্নীতি তদন্তের জন্য দুদক কর্মকর্তা তদন্তে আসলে তিনি তাদেরে হেনস্তা করেছেন। এমনকি দুদক কর্মকর্তার পোশাক দেখে তিনি তাঁরা কোন কোয়ালিটির হবে বুঝতে পেরেছিলেন বলে মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে অনিয়ম দূর্নীতি, সিট বাণিজ্য, ওয়ার্ড বাণিজ্য, মোবাইল কল বাণিজ্য, সাক্ষাৎ বাণিজ্য ও বন্দীদের খাবার চড়াদামে ক্যান্টিনে বিক্রি, প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা দিলেই সুস্থ বন্দীদের দিয়ে দেয়া হয় কারা হসপিটালের বেড, আর অসুস্থ বন্দীরা কম্বল বিছিয়ে থাকেন মেঝেতে। সরকারী খাবার নিম্নমানে হওয়াতে অনেকই এমন খাবার খেতে নারাজ। টাকা হলেও মিলে ভিআইপি খাওয়া দাবার ও রাজকীয় ভাবে থাকার ব্যবস্থা।
কারা ফটকে দায়িত্বরত কারারক্ষী অসীম পাল, কিবরিয়া, ইকবাল ও আইদ্দুস নামের কারারক্ষীদের সহযোগিতায় বাহির থেকে মাছ, মাংস,ডিম, ফল ও সবজি কিনে এনে দুইবেলা বিক্রি হয় ডায়েড নামের খাবার। বিক্রি হয় ১টি ডিম ৭০ টাকা, ১পিচ পোনা মাছ ১০০-১২০ টাকায়, সবজি ৬০ টাকা। চৌখার মাধ্যমে বন্দীদের খাবারের চাল, ডাল, মশলা দিয়ে তাদের মাধ্যমে রান্না করে সরবরাহ করা হয় এসব ডায়েড নামীয় খাবার বন্দীদের কাছে।
বন্দিদের বাড়ি থেকে বিকাশে টাকা এলে প্রতি হাজারে কারা কর্তৃপক্ষকে কমিশন দিতে হয় ২’শ টাকা। সপ্তাহে একদিন সাক্ষাৎ নিয়ম থাকলেও প্রতিদিন ৫শ টাকার বিনিময়ে করা যায় সাক্ষাৎ। বন্দীদের প্রতিটি পণ্য কিনতে হয় বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দাম দিয়ে। কারাগার থেকে ৭ দিন পরপর ফোনে স্বজনদের সাথে কথা বলার নিয়ম থাকলেও টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন কথা বলার সুযোগ রয়েছে।
সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুর ও রাতের খাবার মাছ, মাংস, ডিম বেশীরভাগ বন্দীরা কিনে খায়। তাহলে সরকারী বরাদ্দের খাবার যায় কোথায়? সদ্য যোগদানকারী জেল সুপার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার তার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট স্বারক নাম্বার ২৪২৭(৪) তারিখ ৬ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত কপিতে স্বীকার করেছেন ১লা অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে যোগদানের পর বন্দি ব্যবস্থাপনা, স্টাফ ব্যবস্থাপনা, ক্যান্টিন ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।
এতে প্রমাণ হয় সংবাদে উল্লেখিত অনিয়ম এখনও বিদ্ধমান। গত এপ্রিল মাসে চাঁপাই নবাবগঞ্জে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মিডিয়ায় চাপাই নবাবগঞ্জের জেলা কারাগারের অনিয়ম দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদেরে হুমকি প্রদান করেন। সে সময় কারাগারের অনিয়ম, দূর্নীতি নিয়ে দৈনিক দেশ বাংলা পত্রিকায় ১০ এপ্রিল, দৈনিক সরেজমিন পত্রিকায় ১১ এপ্রিল, কর্পোরেট সংবাদ ১১ এপ্রিল ও বার্তা ২৪ সহ অনেক সংবাদ মাধ্যমে অনিয়ম দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদেরে মোবাইল ফোনে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন জেল সুপার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার। এই মোবাইল ফোন কল রেকর্ড সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তা ভাইরাল হয়।

মনজু বিজয় চৌধুরী।

0Shares