প্রকাশিত: ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক : জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগে ৪২ বছর পর নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্মানজনক এ পদে নিয়োগের জন্য ‘বাংলাদেশ জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ নীতিমালা, ২০২৩’ প্রণয়নের সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়। এতে পাঁচ বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ চারজনকে জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭৫ বছর রাখার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে বর্তমানে ‘বাংলাদেশ জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ, শর্তাবলী ও সুবিধাদি সিদ্ধান্তমালা, ১৯৮১’ অনুযায়ী জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের কাজ করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন এ নীতিমালা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হলে আগের সিদ্ধান্তমালাটি (১৯৮১) রহিত হবে এবং এ নীতিমালার আলোকে জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হবে।
সোমবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান এ নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশে সই করেছেন। মঙ্গলবার সুপারিশ করা নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, জাতীয় অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৪ এর আলোকে মনোনয়ন কমিটির কাছে প্রতিটি পদের বিপরীতে তিনজন করে যোগ্য ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। মনোনয়ন কমিটি প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে জাতীয় অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য মনোনয়ন দেবেন। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য এ মনোনয়ন শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার (রাষ্ট্রপতি) কাছে পেশ করবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয় নিয়োগের পরিপত্র জারি করবে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান বলেন, ‘আগে যে সিদ্ধান্তমালাটি ছিল সেটার পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে নতুন নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কয়েকটি বৈঠক করে আমরা এটা (নীতিমালা) দাঁড় করিয়েছি। যথাযথ নিয়ম মেনে নীতিমালাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় এটি পরিপত্র আকারে জারি হবে। এরপর এ নীতিমালা মেনে জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।’
মনোনয়ন কমিটিতে থাকবেন যারা : জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ নীতিমালার সুপারিশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যের মনোনয়ন কমিটি গঠনের বিধান রেখেছে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন শিক্ষামন্ত্রী। বাকি তিনজন সদস্য। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত দুজন মন্ত্রী কমিটির সদস্য হবেন। বাকি একটি সদস্য পদে থাকবে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য।
জাতীয় অধ্যাপকের যোগ্যতা : উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রথিতযশা অধ্যাপক, যিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার গবেষণা ও ব্যুৎপত্তির জন্য স্বীকৃতি লাভ করেছেন এবং জাতীয় ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি এ পদের জন্য মনোনয়ন পেতে পারেন। এছাড়া যিনি নিজেকে সক্রিয়ভাবে গবেষণায় যুক্ত রাখতে সক্ষম, সে ধরনের অধ্যাপক এ পদের জন্য নির্বাচিত হবেন। একই সময়ে অনধিক চারজনকে জাতীয় অধ্যাপক পদে নিয়োগ করা যাবে।
বয়সসীমা ও মেয়াদ : জাতীয় অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য অনধিক ৭৫ বছর বয়স্ক-যোগ্য অধ্যাপক উল্লিখিত পদের জন্য মনোনীত হবেন। তবে মনোনয়ন কমিটি বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন অধ্যাপকের ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা শিথিল করিতে পারবে।
জাতীয় অধ্যাপক পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন। তবে, মনোনয়ন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি যে কোনো সময় নিয়োগ আদেশ বাতিল করতে পারবেন।
দায়িত্ব ও যেসব সুবিধা পাবেন : জাতীয় অধ্যাপক সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন না। তিনি কোনো গবেষণা সংস্থা বা শিক্ষায়তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে নিজের পছন্দমতো ক্ষেত্রে গবেষণামূলক কাজ করবেন। তিনি গবেষণা কাজের ক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।
জাতীয় অধ্যাপক যে গবেষণা সংস্থা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন, সে সংস্থা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষা এবং গবেষণামূলক কাজের অগ্রগতির বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করবেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ইউজিসি চেয়ারম্যানকে তার কাজের অগ্রগতি অবহিত রাখবেন। ইউজিসি গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রয়োগের উদ্যোগ নেবে।
জাতীয় অধ্যাপক ইউজিসির মাধ্যমে সম্মানী নেবেন। তিনি যে গবেষণা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন, সেই সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা ও গবেষণামূলক কাজ করার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
জাতীয় অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন তার যেসব বই-পুস্তক ছাপানো হবে, তা থেকে প্রাপ্ত সব সুবিধাদি তিনি প্রাপ্য হবেন। এ পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন তিনি সরকারের পূর্বানুমতি নিয়ে বিদেশে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা করতে পারবেন।
জাতীয় অধ্যাপকের সম্মানী : জাতীয় অধ্যাপক পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সরকারের সচিবের বেতনের সমপরিমাণ ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত) মাসিক ভিত্তিতে সম্মানী পাবেন। যদি এমন কোন অধ্যাপককে জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ করা হয়, যিনি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে কর্মরত, তিনি তার ইচ্ছানুযায়ী চাকরিতে থাকাকালীন ওই পদের বেতন ভাতা অথবা জাতীয় অধ্যাপক পদের সম্মানীর যেকোনো একটি নিতে পারবেন।
এদিকে, জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ, শর্তাবলী ও সুবিধাদি সিদ্ধান্তমালা-১৯৮১-এর বিধান অনুযায়ী নিয়োজিত জাতীয় অধ্যাপকরা বাংলাদেশ জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ নীতিমালা-২০২৩-এর আওতাভুক্ত হবেন। এ নীতিমালা-২০২৩ জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ, শর্তাবলী ও সুবিধাদি সিদ্ধান্তমালা, ১৯৮১’ সহ এ সংক্রান্ত সব পরিপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।
এ পর্যন্ত জাতীয় অধ্যাপক হয়েছেন যারা : ‘জাতীয় অধ্যাপক’ বাংলাদেশের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, যা বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার জন্যে দেশের বিশিষ্ট পণ্ডিত, চিন্তাবিদ ও শিক্ষকদের দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে এ সম্মাননা দিয়ে আসছে সরকার।
১৯৭৫ সালের ১৭ মার্চ প্রথম তিনজনকে জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা হলেন— শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন।
১৯৮৪ সালে মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ১৯৮৭ সালে নুরুল ইসলাম, আবুল ফজল ও সৈয়দ আলী আহসান, ১৯৯৩ সালে শামস-উল-হক, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, এম ইন্নাস আলী, ১৯৯৪ সালে এম আর খান ও সুফিয়া আহমেদ, ১৯৯৮ সালে কবীর চৌধুরী, ২০০৬ সালে আবদুল মালিক, এ কে এম নুরুল ইসলাম, এ কে এম আমিনুল হক ও তালুকদার মনিরুজ্জামান।
২০১১ সালে সরদার ফজলুল করিম, এ এফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, রঙ্গলাল সেন, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ও ডা. শাহলা খাতুন জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৮ সালের ১৯ জন জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগে পান জামিলুর রেজা চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম।
২০২১ সালের ৬ মে জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ পান ডা. এ কে আজাদ খান, মাহমুদ হাসান ও আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন। সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ডা. এম কিউ কে তালুকদারকে জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ দেয় সরকার।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech