এবার ভোটকেন্দ্রে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবে সেনাবাহিনী

প্রকাশিত: ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩

এবার ভোটকেন্দ্রে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবে সেনাবাহিনী

ডায়ালসিলেট ডেস্ক ::   আগামী ৭ই জানুয়ারী বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে এবং ভোট গণনা কক্ষে রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং অফিসারদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাসদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

 

 

একই সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকেও (র‍্যাব) এ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। প্রয়োজন হলে বিজিবি ও র‍্যাব হেলিকপটার ও ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করতে পারবে। নিজস্ব যানবাহনের বাইরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা রিটার্নিং অফিসার অথবা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বেসরকারি যানবাহন অধিযাচনপূর্বক ব্যবহার করতে পারবে।

 

ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তায় মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোতায়ন সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে এসব ব্যবস্থার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া নির্দেশনার আলোকে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত এই সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

 

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে জানান, এবারের নির্বাচনে ৫ লাখ ১৬ হাজার আনসার সদস্য, ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ পুলিশ ও র্যাব সদস্য, ২ হাজার ৩৫০ কোস্ট গার্ড সদস্য এবং ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা রিটার্নিং/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।

 

 

এর আগে ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচেন ইভিএমে ভোট নেওয়া ছয়টি আসনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে কারিগরি সহয়তা দেওয়ার জন্য সেনা সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন সম্পর্কে পরিপত্রের ৯-এ বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষ্যে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত (যাতায়াত সময়সহ) ‘ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

 

 

ফৌজদারী কার্যবিধি ও অন্যান্য আইনের বিধান অনুসারে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ‘ইনস্ট্রকশন রিগার্ডিং এইড টু দি সিভিল পাওয়ার’-এর ৭ম ও ১০ম অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

 

 

রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা-থানায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা দেবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা-উপজেলা-মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

 

 

৯ (ঘ) তে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার বা প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালন করবে। এ বাহিনীর টিমের সঙ্গে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা হবে। উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। ঝুঁকি বিবেচনায় রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা কম-বেশি করা যাবে এবং এ বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

 

বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয়সংখ্যক হেলিকপটার ও পরিবহন বিমান জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীসমূহের অনুরোধে উড্ডয়ন সহায়তা দেবে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশনা অনুসারে এলাকাভিত্তিক মোতায়েন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।

 

 

২৫ জেলার ৭২ উপজেলা দুর্গম, ১২টি আসনে কোস্ট গার্ড মোতায়েন: নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ২৫টি জেলার ৭২টি উপজেলাকে দুর্গম এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২ সংসদীয় আসনের ১৩টি উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৪২টি ইউনিয়নে কোস্ট গার্ড মোতায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

 

অগ্রিম অর্থ বরাদ্দ:

জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদার ভিত্তিতে জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবের আলোকে নির্বাচনের পূর্বেই অগ্রিম বরাদ্দ প্রদান করা হবে। এবারের নির্বাচনে মোট বাজেট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

 

 

কেন্দ্রে যেভাবে সাজানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: পরিপত্রে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটের দুই দিন আগে, ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিন মোট পাঁচ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জন, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬; মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে এবং এবং পার্বত্য ও দুর্গম এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে ১৫-১৬ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬-১৭ জনের পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ফোর্স মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজনে রিটার্নিং কর্মকর্তা এই সংখ্যা বাড়াতে পারবেন।

 

 

 

৫ থেকে ৯ জানুয়ারি প্রচারণা-মিছিল নিষিদ্ধ: নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের প্রচারণা এমনকি মিছিল করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

 

 

এতে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে কোনো নির্বাচনি এলাকায় ভোটগ্রহণ শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টা এবং ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা আয়োজন বা তাতে যোগদান না করার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টায়। এ হিসাবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। একইভাবে কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে কোনো প্রার্থী নির্বাচন ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে।

 

 

যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ

আগামী ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। ৬ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করতে পারবে না। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করতে পারবেন না কেউ। কেবল জরুরি প্রয়োজনীয় বাহন ও ইসির অনুমতিপ্রাপ্ত যান চলাচল করতে পারবে। ভোটগ্রহণের আগের ৪৮ ঘণ্টা ও পরের ৪৮ ঘণ্টা মিছিল-মিটিং ও শোভাযাত্রা করা যাবে না।

 

 

 

৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন-প্রদর্শন নিষিদ্ধ: নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

 

মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঘোষিত তপশিল অনুসরণে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এ আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে দ্য আর্মস অ্যাক্ট ১৮৭৮-এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।

 

 

 

ভোটকেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিং: ভোট দেওয়ার জন্য ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বচ্ছন্দে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, সে জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিট নিবিড় টহলের ব্যবস্থা করবে; গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

 

বিভিন্ন পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠন: পরিপত্রে বলা হয়, ইসি সচিবালয়ে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য; রিটার্নিং অফিসারের কার্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখার জন্য ১৮ ডিসেম্বর থেকে একটি মনিটরিং সেল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবে; সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ভোটগ্রহণের তিন দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের তিন দিন পর পর্যন্ত সাত দিনের জন্য; এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারে কার্যালয়ে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও নির্বাচন উপলক্ষ্যে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য ৯৯৯ এ বিশেষ টিম গঠনপূর্বক আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।

 

সূত্র :: সাইদুর রহমান, দৈনিক ইত্তেফাক

 

0Shares