সিলেটের ৩টি আসনে নৌকা ডোবাতে সক্রিয় কর্মীরা

প্রকাশিত: ২:০৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩

সিলেটের ৩টি আসনে নৌকা ডোবাতে সক্রিয় কর্মীরা

আওয়ামী লীগে ‘গৃহদাহ’

 

ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: আর মাত্র ৭ দিন পরই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি আসনের মধ্যে ৩টিতেই নৌকা ডোবার আশঙ্কা রয়েছে। যে ৩টি আসনে নৌকা ডোবার শঙ্কা রয়েছে সেখানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন আওয়ামী লীগেরই কর্মী-সমর্থকরা। এই তিনটি আসনে ভোটযুদ্ধ এখন পরিণত হয়েছে নৌকা বনাম আওয়ামী লীগে। এতে করে আওয়ামী লীগের ‘গৃহবিবাদ’ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিপাকে ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

 

২টিতে নৌকার প্রার্থীরা নিশ্চিত জয়ের পথে থাকলেও একটিতে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। জয়ের পথে থাকা প্রার্থীরা হচ্ছেন সিলেট-১ (মহানগর-সদর) আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট) আসনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।

 

সরকার অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে নৌকার মুখোমুখি করে দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে সব হারাতে পারেন নৌকার প্রার্থী সিলেট-৩ আসনে হাবিুর রহমান, সিলেট-৫ আসনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সিলেট-৬ আসনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেওয়ার পরও মনোনয়ন বঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা-নিষেধ না থাকায় তৃণমূল কর্মীরা দলীয় প্রার্থী রেখে ছুটছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পেছনে। মাঠপর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে কাজ করা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

 

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ হাবিবুর রহমান এমপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএমএ’র মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল (ট্রাক)। এ আসনে ৭ জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াইয়ে আছেন তারা দুজন। দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা নৌকার পক্ষে কাজ করলেও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বড় একটি অংশ কাজ করছেন নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে। তারা ট্রাকের বিজয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া। একই সঙ্গে এ আসনের টানা তিনবারের দলীয় এমপি মরহুম মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকরাও নৌকা ছেড়ে ট্রাকে উঠেছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. দুলালের বিজয় ত্বরান্বিত করতে মাঠে নেমেছেন এই আসনের একাধিকবারের সাবেক এমপি শিল্পপতি শফি আহমদ চৌধুরী। তার কর্মী-সমর্থকরা এখন ট্রাকের লিফলেট নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি।

 

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শফি আহমদ চৌধুরী ৭ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত সিলেটের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুসন্তান ডা. দুলালকে ট্রাক প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ট্রাক থেকে নামিয়ে নৌকায় তুলতে মাঠে নেমেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তারপরও নৌকার শেষ রক্ষা হয় কিনা সেটা জানা যাবে নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ শেষে। এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন- জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের মো. মইনুল ইসলাম (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনোয়ার হোসেন আফরোজ (আম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলাম (ঈগল)।

 

সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ নৌকার প্রার্থী হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ কাজ করছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর (কেটলি) পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি প্রার্থী হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে এর প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, হুছামুদ্দীনকে জেতাতে দলের হাইকমান্ডের ইঙ্গিত রয়েছে। এছাড়া সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহমদ আল কবির (ট্রাক) স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নৌকার বিজয়কে আরও কঠিন করে তুলছে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় হুছামুদ্দীনের জয়কে সহজ করে দিয়েছে বলে কর্মী-সমর্থকরা মনে করছেন। এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন-জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দীন আহমদ শিকদার (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেস’র মো. বদরুল আলম (ডাব) ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. খায়রুল ইসলাম (হাতপাঞ্জা)।

 

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নৌকার প্রার্থী হলেও তাকে চ্যালেঞ্জ করে জনপ্রিয়তা যাচাই করতে প্রার্থী হয়েছেন দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত সরওয়ার হোসেন (ঈগল)। একই আসনে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী (সোনালী আঁশ) প্রার্থী হওয়ায় আরও বিপাকে পড়েছেন নাহিদ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ নৌকা রেখে মাঠে কাজ করছেন সোনালী আঁশের পক্ষে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে শমসের মুবিনকে বিজয়ী করার চাপ রয়েছে। এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন-জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান আতা (ছড়ি) ও ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান (মিনার)।

 

এছাড়া সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী রয়েছেন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনে এমপি হওয়া জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল) ও গণফোরামের মোকাব্বির খান এমপি (উদীয়মান সূর্য), এবার নৌকার জয়ে প্রধান বাধা। এর মধ্যে উচ্চ আদলতের রায়ে প্রার্থিতা পেয়ে মাঠে নেমেছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। একাধিকবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিব প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় বদলে গেছে ভোটের হিসাব। এই আসনে সাবেক-বর্তমান ৩ এমপি ও পৌর মেয়র ভোটযুদ্ধে থাকায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন-তৃণমূল বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুর রব (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জহির (ডাব) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসাইন (আম)।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ