বিশ্বনাথের বড় বিলে দিনভর পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪

বিশ্বনাথের বড় বিলে দিনভর পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: পলো বাওয়া উৎসব গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ। আগেকার দিনে শুকনো মৌসুমে যখন খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যেত, তখন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লার মানুষ দলবেঁধে পলো নিয়ে উৎসবের আমেজে হাওর কিংবা বিলে মাছ ধরতেন। আর এ জন্য সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই নেওয়া হতো নানা প্রস্তুতি। বাজারে বাজারে তেলের টিন কিংবা পুরনো থালায় লাটি দিয়ে বাজনা বাজিয়ে জানিয়ে দেওয়া হতো পলো বাওয়ার দিন তারিখ। উৎসবের আমেজে পলোর পাশাপাশি, হাতা জালসহ আরও নানা বাহন নিয়ে এক সঙ্গে নামতেন মাছ ধরতে।

 

কিন্তু নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর দখল আর দূষণের ফলে আগেকার দিনের ঐতিহ্যের সেই পলো বাওয়া উৎসব এখন হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের খুব কম অঞ্চলেই এখন এ উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু তারপরও প্রাচীন আমল থেকেই চিরচেনা সেই পলো বাওয়া উৎসব আজও লালন করে আসছেন প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথবাসী। সেই আদিকাল থেকেই গ্রামের দক্ষিণের ‘বড় বিলে’ বছরের পহেলা মাঘ (মাঘ মাসের এক তারিখ) ‘পলো বাওয়া’ উৎসব পালন করে যাচ্ছেন বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামবাসী।

 

এরই ধারাবাহিকতায় এবারও (সোমবার) হয়ে গেল গোয়াহরি গ্রামের বড়বিলে ঝপ ঝপা ঝপ ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। দিনভর গ্রামের ছেলে-বুড়ো সকলেই মেতেছিলেন পলো দিয়ে মাছ ধরায়।

 

সেই রেওয়াজ অনুযায়ী ‘বড় বিলে’ বছরের পহেলা মাঘ ‘পলো বাওয়া’ উৎসব পালন করেছেন গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। এবছরও সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ছেলে-বুড়ো সকলেই বড় বিলে মাছ ধরায় মেতেছিলেন। আর মাছ ধরা দেখতে সকাল ৮টা থেকে বিলের পাড়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দিনভর দাঁড়িয়ে মাছ ধরা উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেন। কমতি ছিল না শিশুদের উপস্থিতিতেও। আহা কী আনন্দ।

 

দিনভর ‘বড় বিলে’ গ্রামবাসীর সঙ্গে মাছ ধরায় অংশ নেন অনেক প্রবাসীও। সকলের সঙ্গে তারাও পলো দিয়ে মাছ ধরায় অংশ নিয়েছেন। যদিও ‘পলো বাইছ’ কিন্তু পলো ছাড়াও ঠেলা জাল, হাতা জালসহ আরও নানা বাহন দিয়ে মাছ ধরায় মেতেছিলেন গ্রামবাসী। অন্য বছরের তুলনায় এবার রুই, কাতলা, বোয়াল, শোল ও কার্প মাছ বেশি পাওয়ায় হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন প্রবাসীসহ অনেকেই।

 

পলো দিয়ে মাছ ধরতে পেরে আনন্দের শেষ নেই গ্রামের ইকবাল হোসেনসহ বেশ ক’জনের। ইকবাল হোসেন ধরেছেন ২টি বোয়াল মাছ, এতে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। গ্রামের সালমান হোসেন ধরেছেন বড় ১টি শোল ও ১টি কাতলা মাছ। তাজ উদ্দিনও ধরেছেন ২টি বোয়াল মাছ। এতে তারাও যারপরনাই আনন্দিত। নাজমুজ্জামান ধরেছেন বড় ১টি বোয়াল ও ১টি কার্প মাছ।

 

নাজমুজ্জামান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাছ কিছুটা কম হয়েছে। গতবছর তিনি ৪টি মাছ ধরলেও এবার ধরেছেন মাত্র ২টি। তার মতে এবার মাছ কম হলেও কাতলা, বোয়াল, শোল ও কার্প মাছ বেশি পাওয়া গেছে।

 

বিলের পাড়ে কথা হয় ফারজানা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি বছরই তিনি গ্রামের এ উৎসবে সামিল হতে বাড়ি ফিরেন।

 

গোয়াহরি গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন বলেন, প্রায় ৩শ’ বছর আগে থেকে তারা বছরের পহেলা মাঘ তারিখে ‘পলো বাওয়া’কে উৎসব হিসেবে পালন করে আসছেন। তিনি জানান, বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে তাদের বড় বিলেই কেবল আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে পলো বাওয়া হয়ে থাকে। আর এই দিনটি উৎসব হিসেবে পালন করতে গ্রামের প্রত্যেকের আত্মীয় স্বজন ও প্রবাসীরাও জড়ো হন।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ