ফখরুল-খসরুর কারামুক্তির পথ কতদূর?

প্রকাশিত: ১:৪১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪

ফখরুল-খসরুর কারামুক্তির পথ কতদূর?

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে পল্টন থানায় আট ও রমনা মডেল থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে। অন্যদিকে, ১১ মামলার মধ্যে ১০টিতে তার জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারিক আদালত। তবে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এ মামলায় জামিন হলে মির্জা ফখরুলের কারামুক্তিতে বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। আইনজীবীর আশা, দ্রুত এ মামলায়ও জামিন পাবেন তিনি।

 

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় ২৯ অক্টোবর গ্রেফতার দেখিয়ে মির্জা ফখরুলকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষ জামিন চেয়ে আবেদন করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে ১৮ ডিসেম্বর পল্টন মডেল থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পর জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

 

২৮ অক্টোবরের ঘটনায় আমীর খসরু মাহমুদের বিরুদ্ধে মোট ১০টি মামলা হয়। ২ নভেম্বর দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে গুলশানের ৮১ নম্বর রোডের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর পল্টন থানার দুই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ওই দুই মামলায় বুধবার তার জামিন মঞ্জুর করেছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক।

 

বুধবার রমনা ও পল্টন মডেল থানার পৃথক আট মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে তার গ্রেফতার ও জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে, আজ (বুধবার) আমীর খসরুকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এজন্য আদালত গ্রেফতার ও জামিন শুনানির বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেন আদালত। এ আট মামলায় আমীর খসরু জামিন পাবেন আশা আইনজীবীর।

 

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, আটকের পর বিএনপি মহাসচিবকে ১১ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরমধ্যে তাকে ১০ মামলায় জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারিক আদালত। তবে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এ মামলায় চেম্বারে জজ আদালতে না নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করবো এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করবো। আশা করছি, দ্রুত তিনি ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জামিনে মুক্তি পাবেন।

 

তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় মির্জা ফখরুলকে আসামি করা হয়েছে। তিনি ঘটনার সময় পল্টনের বিএনপি অফিসের সামনে সমাবেশে ছিলেন। তিনি কোনোভাবেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। আশাকরি, আদালত এ মামলায়ও তার জামিন মঞ্জুর করবেন।

 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরুর মামলায় জামিন শুনানিতে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিরোধিতা করছি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাদের জামিন মঞ্জুর করছেন।

 

একই মামলায় জামিন পেয়ে শাহজাহান ওমর এমপি, ফখরুলের খারিজ 

 

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জামিন না দিলেও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১০ জানুয়ারি মির্জা ফখরুলের জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করে রায় ঘোষণা দেওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বিএনপি নেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

 

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জানান, প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার এ মামলার ১১ নম্বর আসামি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর জামিনে মুক্তি পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা থানার মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

 

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: হাইকোর্ট

 

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে একটি মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ পাঠে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৫ জানুয়ারি এ পর্যবেক্ষণ দেন।

 

হাইকোর্ট বলেন, আবেদনকারী (ফখরুল) ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বা তার কোনো ভূমিকা ছিল কি না, তা সুষ্ঠু তদন্তের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তবে এ পর্যায়ে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলে তা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অনুকূল হবে না। রায়ে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। তাই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমরা মনে করি।

 

ঘটনা পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত আবেদনকারী (মির্জা ফখরুল) দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করছেন, যাকে তিনি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন দাবি করে আসছেন। দুর্ভাগ্যবশত, বিগত কয়েক মাসে দেখা গেছে যে কথিত ওই ভোটাধিকারের দাবি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে যুক্ত হয়েছে। যাতে প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকারী সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন, পুলিশের গাড়িতে হামলার মতো ঘটনা রয়েছে।

 

আদালত বলেছেন, কথিত আন্দোলনকারীরাই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আমরা এসব অযৌক্তিক ও ধ্বংসাত্মক ঘটনা বিবেচনায় নিয়েছি, যেগুলো দৃশ্যত দেশে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বস্তুত দেশ ও দেশের জনগণকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

রায়ে আদালত আরও বলেন, আবেদনকারী বিপর্যয়কর ও উচ্ছৃঙ্খল এসব ঘটনার পরিকল্পনাকারী বা তার কোনো ভূমিকা ছিল কি না, সে বিষয়ে কেবল সুষ্ঠু তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তদন্তের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে এই পর্যায়ে তার মুক্তির জন্য জামিন দেওয়া সহায়ক হবে না বলে আমরা মনে করছি। (মামলায়) কিছু ধারা আছে যা জামিন অযোগ্য। প্রজাতন্ত্র ও জনগণের নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা রুলটি খারিজ করছি।

 

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ শুরুর আগে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে গাছের ডাল ভেঙে ও হাতের লাঠি দিয়ে নামফলক, গেটে হামলা চালানো হয়। আসামিরা ভেতরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ ঘটনায় মির্জা ফখরুলসহ ৫৯ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়।

 

মির্জা ফখরুল ছাড়াও এ মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আহমেদ খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ভিপি জয়নাল, মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার ও সদস্যসচিব আমিনুল হক।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ