ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ: বিএনপি

প্রকাশিত: ৩:৩৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪

ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ: বিএনপি

মিয়ানমারে সংঘাত

 

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: মিয়ানমার সীমান্তে সহিংসতায় বাংলাদেশ আক্রান্ত হওয়ার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থতার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দলটির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

 

বিবৃতিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তুমুল গোলাগুলি-সংঘর্ষ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। দুপক্ষের ছোঁড়া গুলি, মর্টারশেল, বিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চারের খোল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। এতে প্রতিদিনই বাংলাদেশের ভেতরে হতাহত, ঘরবাড়ি দগ্ধ হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে জীবনের নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত এলাকা ছাড়ছেন স্থানীয়রা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

 

তারা বলেন, গতকাল ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) শতাধিক সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে ভিড় জমাচ্ছেন শত শত নাগরিক যা যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে।

 

বাংলাদেশের জন্য অতিঝুঁকিপূর্ণ এই অবস্থায় সরকারের অন্তঃসারশূন্য বক্তব্য এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানানো ও কার্যকর রাজনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলার পরিবর্তে শুধু ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের অবস্থান গ্রহণ নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

 

তারা বলেন, সরকার সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশের সীমান্ত ও স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ না নিয়ে গতকাল সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

আজ অন্য দেশের দ্বারা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যখন হুমকির সম্মুখীন, স্বাধীনতা যখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে, তখন সরকার কিছুই করতে পারছে না। তারা জনগণকে বন্দুকের মুখে জিম্মি করে অন্যের সেবাদাসত্ব করতে বাধ্য হচ্ছে বলেই এই অবস্থা। কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরকার ক্রমাগত কূটনৈতিক ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে অভিযোগ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য।

 

তারা বলেন, এই নতজানু সরকারের কারণেই জাতীয় সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে এবং জননিরাপত্তা অরক্ষিত। আওয়ামী সরকার কেবল দেশে বিরোধীমত দমন করতেই পারঙ্গম। অথচ সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন করে দেশের মানুষকে হত্যা করা হলেও ভীত পরনির্ভরশীল সরকার বলছে ধৈর্য ধরতে হবে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের দায়িত্ব কি কেবল বাংলাদেশিদের লাশ গ্রহণ করা?

 

স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে মিয়ানমারের তৎকালীন শাসকশ্রেণি সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারেনি। কারণ তারা যেকোনো আগ্রাসী আচরণের উপযুক্ত জবাব দিতে সদাপ্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের সেই সক্ষমতা নেই বলেই সীমান্তে অন্যায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ভয় পায়।

 

তারা বলেন, সরকার সীমান্ত অরক্ষিত রেখে অতীতের ন্যায় অন্তঃসারশূন্য যে বক্তব্য দিচ্ছে তাতে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বড় ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে। সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সৃষ্ট সহিংস সংঘর্ষে সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষ হতাহতের ঘটনাসহ জাতীয় সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ